প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
২৪ ডিসেম্বর হয়ে গেলো ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণ-২০২২। এবারের আনন্দ ভ্রমণ ছিলো ঐতিহাসিক সোনারগাঁও লোকশিল্প যাদুঘর এবং পানাম নগর। ভ্রমণের আহ্বায়ক ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম ফরহাদ ও সদস্য সচিব রাবেয়া আক্তারের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবারের ভ্রমণটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়।
সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে লেখক ফোরাম কার্যালয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় সকল পর্যটক। বোগদাদ বাসে পূর্বের নির্ধারিত আসন বিন্যাস মোতাবেক স্ব-স্ব আসনে বসে পড়ে। যাত্রা পথে আনন্দ উৎসব আয়োজনের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত রাখা সাউন্ড বক্স উঠানো হলো গাড়িতে। তারপর খাবার দাবারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তুলে সকল ভ্রমণার্থীর পরিচয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়। যাত্রার শুরুতে সকল পর্যটকের জন্যে নির্ধারিত উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিলো টি-শার্ট, প্যাড, কলম ও শিডিউল।
ভ্রমণের মূল আনন্দ স্বাভাবিকভাবে যে স্থানে যাওয়া হয় সেটাকেই কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। কিন্তু বরাবরের মত এবারও লেখক ফোরামের মূল আনন্দ হয়েছে গাড়িতেই, বিশেষ করে আসার সময়। উপস্থিত সকলে মনের আনন্দে যে যার মতো করে নাচ, গান, কবিতা উপস্থাপন করেছে। আনন্দের মাঝেই পৌঁছানো হলো সোনারগাঁওয়ে। পথিমধ্যে সুন্দর একটি স্থান দেখে, বাস থামিয়ে সকালের নাস্তা পর্ব শেষ করা হলো। নাস্তা সেরে সবাই যার যার আসনে গিয়ে বসলো। গাড়িটি ছুটতে লাগলো সোনারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে। সোনারগাঁও জাদুঘরে প্রবেশ করে সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। জাদুঘরকে কেন্দ্র করে বাহিরের অংশের পরিপাটি পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে ফুলের বাগান। রয়েছে জাতির পিতার ভাস্কর্য, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য, তোরণ, লাইব্রেরী। মূল ভবনে প্রবেশের পর বাংলার পুরানো সব শিল্প কর্ম দেখে তরুণরা যেমন অতীত সম্পর্কে জানে, তেমনি মোস্তফা কামাল মুকুলের মতো প্রবীণরা হারিয়ে যান অতীতে।
বর্তমান প্রজন্ম আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভুলে গেছে অতীতকে। নারীরা এখন আর নকশিকাঁথা তৈরি করে না। পুরানো দিনে নবাবদের ব্যবহার করা জিনিস দেখার মধ্যে বাংলাকে জানা যায়। অথচ জ্ঞান আর শিল্পকর্ম রেখে আজ আমরা ব্যস্ত শুধুই আধুনিক বিনোদনে।
সোনারগাঁওয়ে দারুণ সময় কাটানোর পর মধ্যাহ্নভোজ গ্রহণ করা হয় স্থানীয় একটি হোটেলে। তারপর যাত্রা করা হয় ঐতিহাসিক পানাম নগরে। যেটি আমাদের প্রাচীন নদী বন্দর ও সুবর্ণ গ্রাম। একটি সড়কের দুই পাশে মোট ৫২টি ভবন নিয়ে পানাম নগর। সেই নগরে পা রেখে লেখক ফোরাম প্রাচীন বাংলার রাজত্বের নিদর্শনে বিমোহিত হয়। সংগঠনের সদস্যরা তখন যেন স্বপ্নের দেশে চলে যায়। সকলে যে যার মতো স্মৃতিতে মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বিকেল ৫টায় পানাম নগর সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বন্ধ করে দেয়ার আগে সংগঠনের সকল সদস্য এই পানাম নগরেই স্মৃতির ফ্রেমে বন্দী হয়।
তারপর পুরোদিন উপভোগের পর নেমে আসে সন্ধ্যা। এবার বাড়ি ফেরার পালা। সকলে আবারও বাড়ি ফেরার জন্যে রিজার্ভ বাসটিতে উঠে পড়ে। ফেরার সময়টা ছিলো আরও রোমাঞ্চকর। নাচ, গান, কবিতায় বিমোহিত ছিলো সকলে। ভ্রমণে উপস্থিত রাজনীতিবিদ আকবর হোসেন মনির, অ্যাডঃ মাহবুব আলম সহ সকলে প্রবীণ মোস্তফা কামাল মুকুলের গান, কবিতায় খোলস ছেড়ে মেতে ওঠে উল্লাসে। সাংবাদিক ইকবাল এবং শিমুল হাসানও এদিন নিজেদের প্রথাগত খোলস থেকে বেরিয়ে এসে ভ্রমণকে স্মৃতি বিজড়িত করে তোলেন।
ভ্রমণে ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করেন ফরিদগঞ্জ বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ বিল্লাল হোসেন সাগর, সংগঠনের সিনিয়র সদস্য সাংবাদিক ফরিদ আহমেদ মুন্না ও নবীন সদস্য তানজিল হৃদয়। প্রায় ৫০ জনের বিশাল বহর নিয়ে এটাই সংগঠনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং বড় ভ্রমণ। সকলের সুশৃঙ্খল সহযোগিতার জন্য ভ্রমণ কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় তারা বলেন, এভাবে যদি ভবিষ্যতেও সবাই সহযোগিতা করে তবে ইনশাআল্লাহ আগামীতে ২/৩ দিনের জন্য ট্যুর দেয়া সম্ভব হবে।
ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য করার জন্যে সোনারগাঁওয়ের জাদুঘর এবং পানাম নগর নিয়ে উপস্থিত জবাবের ভিত্তিতে কুইজের আয়োজন করা হয়। কুইজ প্রতিযোগিতার ছয়জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন ভ্রমণ কমিটির নেতৃবৃন্দ। ভ্রমণকে আকর্ষণীয় করতে র্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন করা হয়। লেখক ফোরাম প্রতিষ্ঠাতা নূরুল ইসলাম ফরহাদের একমাত্র কন্যা মেহরিমা ফরহাদ মালিহা লটারীর প্রথম পুরস্কারের একমাত্র টিকেট তোলার সুযোগ পেয়ে বাবার টিকেটই তুলে উৎসবে বাড়তি মাত্র যোগ করে। ঘটনাটি সবাইকে বিস্মিত করে! মেয়ে তুলেছে বাবার ভাগ্য- সকলে এটা বলে বিস্ময়কর হাসিতে লটারির সমাপ্তি ঘটায়।
আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে কখন যে সময় ফুরিয়ে গেলো টেরই পেলো না কেউ। রাত দশটায় বাড়ি ফেরা। সুন্দর দিনের স্মৃতি নিয়ে শান্তির রাত সকলের। লেখক ফোরামের ভ্রমণ মানেই ভিন্ন রকম কিছু, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাহিত্য-সংস্কৃতির বৈতরণী বেয়ে লেখক ফোরাম পুরো সামাজিক দর্পণ।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হতে পেরে আমিও আনন্দিত’
ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হতে পেরে দারুণ আনন্দিত বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেলের চালক মরিয়ম আফিজা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মেট্রোরেলে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পৌঁছানোর পর এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নারীরা সব খাতে এগিয়ে যাচ্ছে, কোথাও পিছিয়ে নেই। মেট্রোরেলের প্রথম চালক হতে পেরে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার অংশ হতে পেরে আমিও আনন্দিত।
মরিয়ম আফিজা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২ নভেম্বর ডিএমটিসিএল-এ নিয়োগ পান মরিয়ম। দক্ষ চালক হিসেবে নিজেকে তৈরি করার জন্য তিনি টানা এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। চট্টগ্রামের হালিশহরে অবস্থিত রেলওয়ে ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকেও দুই মাস বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। পরে ঢাকায় ফিরে আরও চার মাস প্রশিক্ষণ নেন। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।
মেট্রোরেলে যাত্রা শেষে মন্ত্রীদের উচ্ছ্বাস
স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মেট্রোর যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলে যাত্রা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। যাত্রা শেষে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মেট্রোরেল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, মেট্রোরেলের মাধ্যমে নতুন এক যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও আসতে আগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগত। এখন মনে হলো চোখের পলকে চলে এলাম। এটা যে কী পরিমাণ অর্জন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর যোগাযোগব্যবস্থায় যে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে, সেটা বোঝা যাবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। জাতির পিতার কন্যার নেতৃত্বে মেট্রোরেল বাংলাদেশের অভূতপূর্ব এক অর্জন। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে মেট্রোরেল
মেট্রোরেল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাপান আন্তার্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার ঢাকা অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তমোহিদে।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
জাইকার প্রধান প্রতিনিধি বলেন, আমি মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে খুব খুশি। মেট্রোরেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। ঢাকার মানুষ মেট্রোরেলের সংস্পর্শ পাবে। ঢাকার সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের চলাচলে এই সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এমআরটি লাইন-৬ প্রসঙ্গে তমোহিদে বলেন, মেট্রোরেল খুবই চমৎকার একটি পরিবহন। এটা খুব আরামদায়ক হবে, বিশেষ করে নারীদের জন্য। আমি নিশ্চিত আপনারা এটা ব্যবহার করার পর সেই অনুভূতি পাবেন। এটি বায়ুদূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পে জাইকার ভ্রমণ শুরু হয়েছিল ১৪ বছর আগে। জাইকার হেডকোয়ার্টারে এ প্রকল্পের সঙ্গে দশ বছর আগে আমি পরিচতি হই। আজ এই সময়ে মেট্রোরেলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে আমি বিশেষভাবে আনন্দিত। এছাড়া এমন সময়ে এটা চালু হচ্ছে যখন বাংলাদেশ-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির বছর চলছে।
এ সময় ইচিগুচি তমোহিদে হোলি আর্টিজানে নিহত মেট্রোরেল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত জাপানি নাগরিকদের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, হোলি আর্টিজান আমাদের জন্য খুব খারাপ সময় ছিল। সেই খারাপ সময় আমরা অতিক্রম করেছি। এ ঘটনার পরও দু’দেশের টিমওয়ার্ক এবং বিশ্বাসের কারণে আজকের এ দিনটিতে আমরা আসতে পেরেছি। মেট্রোরেল মনে রাখার মতো একটি প্রকল্প। এটা খুবই সফল প্রকল্প।
উল্লেখ্য, ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপান আন্তার্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার বড় ধরনের ঋণ সহায়তায়। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।