প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নে গত ৬ বছরে কোনো প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদার। ১০ ডিসেম্বর শনিবার বেলা ১২টায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা রেখে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সকল অপরাধের প্রতি ঘৃণা রেখে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে সকল নিয়মণ্ডনীতি মান্য করে নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সাথে পালন করে আসছি। গত ৬ বছর দায়িত্ব পালনকালীন আমি অত্র ইউনিয়ন দুর্নীতিমুক্ত রাখতে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও বিচার-বাণিজ্যমুক্ত একটি মডেল ইউনিয়নে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি বলে আমি মনে করি। গত ছয় বছর এই ইউনিয়ন উন্নয়নের স্বর্ণযুগ বলে এলাকার সাধারণ জনগণ মনে করেন।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দঃখ ও পরিতাপের বিষয়, সমাজের কতিপয় ঘৃণিত ব্যক্তি (যারা নিজেদেরকে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে মনে করে) আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে পরিষদের দুইজন মেম্বারের (যারা বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে অনৈতিক সুবিধা নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়) মাধ্যমে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে আপনাদের গণমাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন পত্রিকায় খবর হিসেবে প্রকাশ করেছে। আমি এসব মিথ্যা অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি মনে করি আমি নিজে কোনো দুর্নীতি করি না, অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদেরও দুর্নীতি করার সুযোগ দিচ্ছি না। এতে হয়ত তারা আমার প্রতি ক্ষিপ্ত। ষড়যন্ত্রকারীরা এ সুযোগটা ব্যবহার করতে চেষ্টা করছে। তারা যে অভিযোগটি দিয়েছেন তা মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি জানান, মেম্বারদের সই জাল করে অর্থ আত্মসাতের যে অভিযোগ তারা প্রচার করছেন তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আসলে উল্লেখিত মেম্বারদ্বয় উক্ত প্রকল্পের সভাপতি বা সেক্রেটারি নয়। তারা উক্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নয়। এ ধরনের প্রকল্পে কোনো মেম্বারের সইতে টাকা উত্তোলন হয় না। কমিটির কাজ হলো কাজটা মানসম্মত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা। তারা যে কম্পোজ করা কাগজটি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, উক্ত কাগজে চেয়ারম্যান হিসেবে আমার দস্তখতও নাই। যেহেতু আমার সই নেই সেহেতু উক্ত স্বঘোষিত কমিটির ব্যাপারে আমার দায়-দায়িত্ব কতটুকু তা আপনারা ভালো বুঝবেন। আমি মনে করি, উল্লেখিত কম্পোজ করা কাগজটি তারা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নিজেরা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করেছেন। দ্বিতীয়ত উক্ত প্রকল্পের টাকা ব্যাংক থেকে অদ্যাবধি উত্তোলন করা হয় নি। যা আপনারা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখলেই বুঝতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, উক্ত প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পুকুরে পানি থাকার কারণে কাজটি করতে একটু সময় বেশি লেগেছে। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ এখনও বাকি আছে।
তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, শুধু এই প্রকল্প নয় আমার ছয় বছর চেয়ারম্যান মেয়াদকালে আমি যদি কোথাও কোনো দুর্নীতি করে থাকি, যদি বিচার-বাণিজ্য করে থাকি বা একটি বারও কোনো অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকি, এমনটি প্রমাণ হলে সকল শাস্তি মাথা পেতে নেবো আর এসব প্রমাণ না হলে আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
বক্তব্যে তিনি সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নের সকল জনসাধারণ, গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ সহ সকলকে উক্ত মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক অভিযোগে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহ মিরন ও সংরক্ষিত নারী মেম্বার সাবরিনা নুসরাত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগ সাজিয়েছেন জানিয়ে বক্তব্য দেন ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ লোকমান হোসেন লিটন, আবু তাহের জনী, শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মুনসুর আহমেদ ও ধামড়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান পাটোয়ারী।
এছাড়া সাংবাদিক সম্মেলনে ৯নং ওয়ার্ডের ইব্রাহীমের পুত্র মোঃ হারুন, মৃত আমীর হোসেনের স্ত্রী পেয়ারা বেগম ও মৃত নোয়াব আলীর পুত্র সুলতান আহম্মদ দাবি করেন, অভিযোগকারী ২ ইউপি মেম্বার দুর্নীতিগ্রস্ত ও সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে উৎকোচের বিনিময়ে কাজ করেন।
উল্লেখ্য, সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ইউনিয়ন উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় ৯নং ওয়ার্ডের শোরসাক ফিশারী পুকুরপাড়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ কাজের প্রকল্পের কোনো প্রকার কাজ না করে বাস্তবায়ন কমিটির সকলের স্বাক্ষর জাল করে কমিটি জমা করে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে ইউনিয়ন কমিটির প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে এবং অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়েছে মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ করেছেন ৯নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মিরন হোসেন (শাহ মিরন) ও নারী মেম্বার সাবরিনা নুসরাত। অভিযোগের পর তড়িঘড়ি করে চেয়ারম্যান ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।