প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
শিশুদের শৈশবকাল থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে গড়ে তোলার নিমিত্তে ১৯৫৬ সারের ৫ অক্টোবর, মহিয়সী কবি সুফিয়া কামালের ঢাকাস্থ ওয়ারীর তারাবাগের বাসায় বিজ্ঞানী ডক্টর আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিনের সভাপতিত্বে শিশুদের উপস্থিতিতে এক সভা হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্য উপস্থিত ছিলেন সভার উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিশু দরদী রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ, এম. এ ওয়াদুদ পাটোয়ারী সহ বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ গুণী ব্যক্তিবর্গ। জন্ম নেয় জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা।’ তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালের ৫ নভেম্বর, পুরাতন ডাক বাংলোর সবুজ ঘাসের উপর বসে মতলব সূর্যমুখী কচি-কাঁচার মেলার জন্ম। সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিকেলে একই জায়গায় প্রশিক্ষণ চলতো। আবার তা সন্ধ্যায় খুলে নেয়া হতো। একদিন দুরু দুরু বক্ষে সে সংগঠনের জন্ম হয়েছিল, তা হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজ পূর্ণাঙ্গ বিকশিত হতে চলেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে, মতলব মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অতীত ও বর্তমান পৃষ্ঠপোষক, শুভানুধ্যায়ী, প্রবীণ/তরুণ/শিশু সদস্যদের অকুণ্ঠ আন্তরিকতা, কর্মোদ্যম, উৎসাহ ও প্রেরণার ফলে। জনপ্রতিনিধি, সরকারি, বে-সরকারি কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সমাজসেবীদের দানও অপরিসীম। সংগঠনের প্রতি মতলববাসীর শুভেচ্ছা ও ভালবাসাও ছিল অতুলনীয়। তাই মেলার ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ১ম কচি-কাঁচা দিবসে তাদের সবার প্রতি জানাই শ্রদ্ধা, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের অনেক কর্মকর্তা, ভাই-বোনদের হারিয়েছি। তাদের প্রতি রইলো অগাধ ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ মতলব মেলার বার্ষিক সভায় মেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভ দিনটিকে ‘কচি-কাঁচা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিন শিশু-কিশোর কল্যাণমুখী বহুবিধ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যেহেতু বার্ষিক সভার এক মাস পাঁচদিনের মাথায় এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রথমবারের ন্যায় ‘কচি-কাঁচা দিবস’ পালন করতে গিয়ে আমরা সময়ের স্বল্পতার জন্য ন্যূনতম কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি।
আগামী বছর থেকে সময় থাকতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কচি-কাঁচা দিবস পালনের প্রতিশ্রুতি রইলো।
৫ নভেম্বর, ১৯৬৮ থেকে অদ্যাবধি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাক্তন/বর্তমান প্রবীণ/তরুণ/শিশু সদস্যদের অফুরন্ত সহযোগিতা নিয়ে মতলব মেলার পথ চলা। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দণ্ডবিহ্বলের মধ্যে বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে চলেছে সংগঠনটি। তার হারানোর কিছুই নেই, ধ্বংসের কিছু নেই। কারণ এর জন্ম মাটির কোলে, ঘাসের উপর বসে।
মতলব শহরের প্রাণ কেন্দ্রে। আজ মেলার দু’বিঘা, জমি রয়েছে। মেলার উদ্যোগে সাপ্তাহিক কর্মসূচি যথা শরীর চর্চা, আবৃত্তি, সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন, নৃত্য, বক্তৃতা, অভিনয়, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে। তদুপরি কয়েকটি প্রকল্প, ‘কচি-কাঁচা, পাঠাগার’, ‘কচি-কাঁচা প্রাথমিক বিদ্যালয়’, ‘কচি-কাঁচা প্রি-ক্যাডেট স্কুল’, ‘কচি-কাঁচা ফাউন্ডেশন,’ ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি,’ ‘শিশু গবেষণা,’ ‘শিশু প্রকাশনা,’ ‘কচি-কাঁচা মিলনায়তন,’ ‘অভিভাবক শেড,’ ‘নামাজ ঘর’ পরিচালিত হচ্ছে। নানা ফুলে ফলে, গাছ-গাছড়ায় এলাকাটি সুসজ্জিত। প্রাঙ্গণটি ‘শিশু বাগ’ হিসেবে পরিচিত ও ‘কচি-কাঁচা কমপ্লেক্স’ হিসেবে পরিচালিত।
শিশুরা প্রকৃতির মধুর উপহার। শিশুরা ফুলের মত সুন্দর, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ- এ স্মরণীয় বাণী যেন আমরা বিস্মৃত না হই। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজও শিশুদের জন্য না আছে ভাল লেখাপড়ার সুবিধে, না ভাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার, খেলাধুলো বা সংস্কৃতি চর্চার সুবিধে। তাই শিশুদের জন্য উচিত এ মুহূর্তে নানা রকম সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করা। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে এদেশের শিশু-কিশোরদের কথা ভাবতে হবে সবার আগে। আর শিশুদের গড়ে তোলার ব্যবস্থা, শুধু তাদের জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও। তাই সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি মতলব সূর্যমুখী কচি-কাঁচার মেলা তার দীর্ঘ পথ চলায় সে লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করছে।
জয়তু কচি-কাঁচার মেলা।
মোঃ মাকসুদুল হক বাবলু : সভাপতি, মতলব সূর্যমুখী কচি-কাঁচার মেলা।