প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
কোমল-কঠিন
কোমলের কাছে নত সকলেই হয়
পৃৃথিবীর সবখানে কোমলের জয়
শিশু হলো তুলতুলে কত না কোমল
মায়ের কোমল কোলে থাকে নির্ভয়।
কঠিনের এক রূপ শাসকের মাঝে
জনতার কানে তার যন্ত্রণা বাজে
কঠিন শিলার গায়ে আঘাতের পর
দেহজুড়ে বেদনার নামতা বিরাজে।
চন্দ্রের আলো হয় সুকোমল আর
তাতে হয় অনুভূতি অতুল অপার
দখিনার সুকোমল হাওয়ার পরশ
মনে আনে অমর্ত্য আনন্দ-ভার।
স্বর্ণের চেয়ে হীরা সুকঠিন আর
তার আছে প্রতি তলে কাচ কাটা ধার
কঠিনের বাড়াবাড়ি আনে অন্তিম
না মচকে ভেঙ্গে করে জীবন কাবার।
মাঠে মাঠে ঘাসে ঘাসে কোমল সবুজ
কোমল যে মনন সে হয় না অবুঝ
স্বর্ণের বিগলিত কোমলিত রূপ
সূর্যের আলো যেন ধরে পিলসুজ।
কোমলের কঠিনের এই পৃৃথিবীতে
সময়ের প্রয়োজনে যোগ্যরা জিতে
সকলেই পায় নাকো জয়মালা গলে
প্রয়োজনে যে কোমল সে পারে তা নিতে।
সৎ-অসৎ
দুধদাদু আনে দুধ সকালের পর
তার দুধে জ্বাল দিলে পড়ে যায় সর
সেই সরে পুষ্টির ষোল আনা বল
পান করে দৌড়ায় শিশু সেনাদল।
দোকানের ফল কিনে আনলে বাসায়
চেয়ে থাকি মাছি কিছু বসার আশায়
দিন যায় ফল তবু পচে না মোটেই
তাই দেখে দোকানীকে সবে বকে দেই।
দুধদাদু সৎ তাই দুধে পানি নেই
তার দুধ কিনে পান করে অনেকেই
যারা খায় তারা তাকে দোয়া করে আর
জনে জনে তার কথা বলে বার বার।
ফল বেচা দোকানির দোকানের ফল
তাতে আছে কৃত্রিম বিষের তরল
সেই বিষে জীবনের আয়ু হয় ক্ষয়
অসৎ সে দোকানিকে ক্ষমা কভু নয়।
সৎ যারা তারা হলো পৃৃথিবীর প্রাণ
তাদের পরাণে থাকে সততার ঘ্রাণ
সেই ঘ্রাণে পৃৃথিবীতে নেমে আসে চাঁদ
পূর্ণিমা জোছনায় সে হাসে নিখাদ।
সততার হীনতায় মরণের ভয়
হয় পাপ অবিরাম মানুষের ক্ষয়
সৎ লোকে অভাবেও থাকে অবিচল
দিনশেষে হয় তার কাজে সে সফল।
সৎ লোক মনে মনে পায় অতি বল
মন তার তুষারের মতই ধবল
সকলের মুখে মুখে হয় তার জয়
অসৎকে গালাগাল করে নিশ্চয়।
সততায় দেশকে যে সেবা দিয়ে যায়
দেশ তার মুখপানে মুগ্ধ তাকায়
আগামীর ফুল যারা দেশের মানিক
সততার নিক তারা শিক্ষা সঠিক।
গ্রাম-শহর
গ্রাম হলো এদেশের বাতাসের মিল
চারদিকে সবুজের মহা সমারোহ
আকাশের গায়ে আঁকা বিশাল সুনীল
মন কাড়ে ক্ষণে ক্ষণে মনোরমা মোহ।
ইট আর পাথরের নকল সভায়
শহরের বুকে ওঠে প্রাণহীন ঘর
সূর্যের আলো কেড়ে রঙিন প্রভায়
মাঝ রাতে জেগে থাকে ব্যস্ত নগর।
ফলবতী জলবতী ধনবতী গাঁয়ে
নদী চলে বুকে তার জোয়ারের শোভা
দুইধারে কাশফুল হাসিতে ছড়ায়ে
প্রাণে প্রাণে আনে সুখ ভারী মনোলোভা।
গাঁয়ে আছে কিষাণের মাঠভরা হাসি
কিষাণীর আঁচলের মমতার ঘ্রাণ
ঘাসফুলে ফড়িঙের মেলা রাশি রাশি
রাতজাগা চাঁদ করে প্রশমিত প্রাণ।
শহরের রাজপথে পিচগলা তাপ
দ্রুতগামী গাড়ি কাড়ে নিষ্পাপ প্রাণ
যন্ত্রের দিনলিপি নিয়তির শাপ
ফুল নয় নর্দমা ছাড়ে বিষ-ঘ্রাণ।
গ্রামে আছে জীবনের শেকড়ের টান
শীতকাঁপা ভোর আর গ্রীষ্মের রাত
আঙিনায় মেতে ওঠা আমোদের গান
আর আছে মায়াভরা স্নেহের প্রপাত।
নাগরিক জীবনের কড়া কষাঘাত
উন্নতি-অভিলাষ পিষে মারে মন
শরীরের খাপে রোগ করে কুপোকাত
দিনশেষে ফুটে ওঠে ব্যর্থ জনন।
আধুনিক শহরের মেকী আভরণ
কেড়ে নেয় জীবনের শেকড়ের স্বাদ
গ্রামে হোক বাঁচবার সুধা আহরণ
ধরণীর আয়োজনে না হোক প্রমাদ।
অলস-পরিশ্রমী
অলসেরা মোমে গড়া ননীর শরীর
দুইহাতে কুটোটিও নাড়াতে নারাজ
চোখ মেলে সূর্যের দেখে না আলোক
অকারণ কালক্ষয় সে করে না কাজ।
শ্রমে ঘামে যে খেটেছে সময়-সুযোগে
অজুহাত তার কাছে কখনো না থাকে
সূর্যকে হারিয়ে সে আগে জেগে ওঠে
কালকের কাজ আজ এগিয়ে সে রাখে।
অলসের ঘরে হাঁড়ি চাল ছাড়া হাঁকে
নুন পেলে পান্তার পথ চেয়ে থাকে
তার দেহে শত রোগ হাসিমুখে পোষে
অভাবেরা জাল হয়ে তারে বেঁধে রাখে।
শ্রম যার বিনোদন শ্রমে নেই ভয়
তার ঘরে অভাবের পড়ে নাকো ছায়া
আসে ধন আসে মান জীবনের গান
সুখে থাকে মন তার রোগহীন কায়া।
অলসেরা নিজে বোঝা নিজেদের কাছে
বসে বসে খেয়ে তার হয় শুধু ক্ষয়
জাতি তার টানে ঘানি পিছে ফেলে রাখে
প্রতিশোধ নেয় শেষে কঠিন সময়।
অলসের কলসেতে শ্যাওলার বাস
কর্মীর কলে পানি চাপ দিলে ওঠে
পিপাসায় ছাতি ফাটে অলসের বুকে
পানিহীন শেষদিন মাটিতে সে লোটে।
বীর যারা কর্মের প্রতি পলে খাটে
এ পৃৃথিবী গড়ে তারা শ্রমে-ঘামে নেয়ে
মানবতা তার কাছে চিরঋণী থাকে
ইতিহাস সম্মানে থাকে তারে চেয়ে।
অলস ও কর্মঠ দুয়ে ব্যবধান
আকাশ ও পাতালের চেয়ে কম নয়
অলসেরা কাঁদে আর হাসে শ্রমবীর
কেউ নিজে পায় লয় কেউ অক্ষয়।
বচনামৃত
চেয়ার পেয়েই ভাবে বোকারাম মুই কী রে ভাই হনু
হেলিয়ে আঙুল পলকেই করি কুম্ভরাশিকে ধনু!
অন্যের আলো ঋণ করে চাঁদ স্বয়ং ভেবেছে রবি
অমাবস্যায় তাই কাড়ে তার একটি দিনের ছবি।
তেলবাজি করে ক্ষমতার ভাগে বক্ষ গিয়েছে ফুলে
বোকার স্বস্তি শক্তির বলে উঠেছে জাতের কূলে!
আঙ্গুর যারা পায়নি নাগাল তাদের কাছে তা টক
নিজের ছেলেকে আঙ্গুর চাষী বানাতে তাদের শখ।
জনগণহীন প্রতিনিধি নিজে একাই ভেবেছে মনে
মুই হনু ভাই বাঘ মহারাজ বাঘহীন এই বনে।
কেউ আছে যারা পরের টাকায় পোদ্দারি খুব করে
পরধন লোভে টাটায় দুচোখ ঈর্ষা-অনলে মরে।
কেউ ভাবে নিজে তুলসির পাতা জগৎশ্রেষ্ঠ ভালো
জ্ঞানালোকহীন বিতরণ করে স্বার্থপরের আলো।
এমন করেই অঙ্গে অঙ্গে আটকেছে আজ পচন
মূর্খের হাতে জ্ঞানীর হননে সত্য প্রজ্ঞা-বচন।
মা ও দেশ
পৃৃথিবীর ধূলিপথে শিশুকে যে আনে
একসুরে সকলে 'মা' বলে তাঁরে জানে
তাঁর কাছে আর কিছু কোন দামী নয়
মা'র অনুভূতি অতি দ্রুতগামী হয়।
আলো আর বাতাসে যে পুষ্টিতে পালে
গাছভরা ফল দেয়, মাছ নদী-খালে
মাটি দেয় মমতার বুকভরা স্নেহ
সে আমার দেশমাতা, নয় আর কেহ।
নয়মাস পেটে রেখে যে সয় ধকল
যাঁর কোন মেকী নেই, হয় না নকল
শিশু তাঁর কাছে হীরে, নয়কো তামা
তাঁকে চিনি অন্তরে প্রাণদাতা মা।
দেশ দেয় আশ্রয় রাখে নিরাপদ
বিনিময়ে চায় না সে কিছুই বাবদ
স্বদেশের আদরে যে হেসে খেলে থাকে
মনে মনে দেশকে সে মা'র মতো আঁকে।
মায়েদের মনে থাকে মমতার বান
মা'কে স্মরে বিপদের হয় অবসান
পেটে ধরা সন্তান মায়ের পরাণ
অভুক্ত থেকে তার উদর ভরান।
যারা যায় পরবাসে তারা পায় টের
স্বদেশের সাথে মা'র আছে মিল ঢের
বিদেশের বায়ু-জলে মেটে নাকো আশ
মন পড়ে থাকে দেশে পুরো বারোমাস।
পেটে ধরা পৃৃথিবীও মায়ের সমান
রাতদিন দিচ্ছে সে কাজের প্রমাণ
ধরণীর কোলে বসে ক্ষতি করে তার
আয়ু কাড়ি নিজেরাই অবণী মাতার।
বুড়ো হলে মাকে ঠেলে বৃদ্ধাশ্রমে
পাঠাবো না আর কোন বিবেকের ভ্রমে
স্বদেশের প্রেমে হোক নিবেদিত মন
পৃৃথিবীর ক্ষতি নিজে করবো দমন।
বন্ধু-শত্রু
বিপদে যে বল দেয় বাড়ায় দুহাত
বন্ধু সে, বিপদকে করে কুপোকাত
বন্ধুর ডাক শুনে বাড়ে মনোবল
প্রকৃত যে বন্ধু সে পোহায় ধকল।
কারণে অকারণে যে বিরোধিতা করে
শত্রু সে, ঈর্ষাতে জ্বলে পুড়ে মরে
মুখে মধু মনে বিষ যে মানে এ নীতি
শত্রু সে নির্ঘাৎ, তার পরিচিতি।
বন্ধু সে যে কেবল সুনাম না করে
প্রয়োজনে বন্ধুর সে-ও খুঁত ধরে
সুবুদ্ধি দিয়ে যারা সুপথে চালায়
বন্ধুর তকমাটা জানি তারা পায়।
শত্রু যে তার কথা মিঠে হতে পারে
গলাগলি করে বুকে পিঠে ছুরি মারে
পশ্চাৎ হতে মারে মাথায় সে বাঁশ
সম্মুখে হলে দেখা সে দেয় শাবাশ!
বন্ধু যে, মাঝে মাঝে কড়া কথা বলে
অভিমানে কখনো সে যায় দূরে চলে
বন্ধুর বিপদে সে থাকে না আড়াল
অভিমান ভুলে ধরে বন্ধুর হাল।
শত্রুর আচরণে শেয়ালের মুখ
সর্পের মন তার কাঁটা ভরা বুক
তলে তলে বদনাম ছড়িয়ে সে হাসে
বন্ধুর মেকী বেশে থাকে আশে-পাশে।
বন্ধুর আচরণে বাড়াবাড়ি হলে
কখনো সে যদি যায় তোষামোদে গলে
বুঝবার বাকি নেই, বন্ধু সে নয়
তার সাথে আর কভু নয় অন্বয়।
জীবনের প্রয়োজনে বন্ধুকে লাগে
যাচাইয়ে হতে হবে সুনিপুণ আগে
পরীক্ষা করে পাস যদি টিকে রয়
তবে জানি বন্ধু এ লোকটিকে কয়।
প্রবচনীয়
যশ থাকতে যে কীর্তন থামায়
প্রকৃত সে গুণী
বোকা মানুষ আকাশ কুসুম
স্বপ্ন বোনে শুনি।
নিজেকে যে জানে ভালো
সে জানে পরমে
খাঁটি মানুষ তাকেই জানি
নিখাদ যে মরমে।
খালি কলস বাজে বেশি
পিতল বেশি জ্বলে
আসল সোনা চকচকে নয়
রাজাম্লতে গলে।
কর্মবীরের মুখ চলে কম
অলস বকে বেশি
স্বর্ণকারের মিহি কাজ আর
কামার চালায় পেশি।
যে জানে সে কম বলে আর
কম জানা লোক ডাকে
শিষ্য করে মকশো গুরু
একটা পোঁচে আঁকে।
কুকুর ডাকে ভয় পেয়ে আর
বাঘ ডেকে ভয় দেখায়
সিংহ কেবল রাজার চালে
কে বনেদী শেখায়।
দান করে যে চুপ থেকে সে
মুখ রাখে লুকিয়ে
যে দিয়ে তার চায় প্রতিদান
বলতে চায় মুখিয়ে।
মূর্খ লোকের তর্ক বেশি
জ্ঞানীর তিয়াস জানতে
ভক্ত কেবল বিশ্বাসী আর
পারে গুরু মানতে।
যে দেখেছে অন্তরে তার
চর্মের চোখ হয় বেকার
মৈত্রীমনে সবাই আপন
কুটিল চোখে হয় কে কার!
এই পৃৃথিবী আজব নিবাস
মা-বাবা রয় আশ্রমে
যাই ভুলে সব এই পরিবার
উঠলো গড়ে কার শ্রমে।
অনাগত দিনে স্বপ্ন যারা
তাদের কাছে জোর দাবি
বিনয় এবং কৃতজ্ঞতা
বড় হওয়ার জোড় চাবি।
ধনী-গরীব
একদিন এক লোক তড়িঘড়ি করে
চলছিল রাজপথে বড় গাড়ি চড়ে
গাড়িজুড়ে মাখা ছিলো বড়লোক-ঘ্রাণ
দেহখানি রোগে ভরা বেদনার প্রাণ।
রাজপথে হেঁটে হেঁটে একজনে যায়
ক্ষয়ে গেছে জুতো জোড়া তার দুটো পায়
পথে যেতে যেতে ভাবে কতদূর আর
গেলে হবে অভাবেরা সব চুরমার।
গাড়ি চলে গতি নিয়ে সময়ের তাড়া
জ্যামে পড়ে আটকেছে অফিসের পাড়া
গাড়িতে যে ছিলো বসে মনে হলো তার
ক্ষমতার লাঠি পেলে হতো উদ্ধার।
হেঁটে যেতে যে লোকের গায়ে ঝরে ঘাম
মন তার বলে তারে একটুকু থাম
হাতে বাঁধা ঘড়ি খানা মানা করে তারে
অফিসের পথে যেতে বড় শ্বাস ছাড়ে।
যেতে যেতে গাড়িখানা হারিয়েছে দিক
পথচারী সে লোকের গায়ে মারে ঠিক
গাড়িমাখা বাড়ি খেয়ে ছুটে পড়ে দূর
বেচারার নয় ভুল, ছিলো না কসুর।
তেড়ে মেরে গাড়ি হতে নেমে গিয়ে লোক
পথিকেরে বলে জোরে, কানা নাকি চোখ
এইসব ভিখিরিরা কেন পথে আসে
স্বদেশের উন্নতি কী কারণে নাশে?
বাড়ি খেয়ে বেদনায় কঁকিয়ে সে লোক
দুই হাত জোড়ে বলে, তুই না অশোক?
কতকাল পরে দেখা কলেজের পর
আমাদের দুজনের পাশাপাশি ঘর!
কথা শুনে বড়লোক বাঁকা করে মুখ
বলে তারে, তুমি কে হে, কোন্ উল্লুক?
দেখিনি তো কোন কালে চিনি না তোমায়
এই বলে ফাটালো সে গালির বোমায়।
ব্যথাহত পথচারী ম্লান মুখে হেসে
বলে, ভাই, মাফ চাই ভুল হলো শেষে
আজকাল চোখে ভালো করি না ঠাহর
বুঝি না তো কে আপন কে আমার পর।
গাড়িচড়া বড়লোক হাতড়ে পকেট
বলে তারে টাকা নিয়ে মাথা করো হেঁট
তোমাদের মতো কতো আছে বাটপার
গাড়িতেই বাড়ি খায় লোভে বার বার।
গলাখানি ছোট করে ব্যথাহত লোক
বলে তারে তুমি নও আমার অশোক
তোমার এ গাড়িখানি অক্ষত থাক
এই বলে মোছে নিয়ে নিজের পোশাক।
তারপর ধরে পথ দ্রুত হেঁটে পায়
মনভরা বেদনায় ক্ষত ভুলে যায়
গাড়িচড়া বড়লোক খিটখিটে স্বর
বকে যায় ইংলিশে করে র্গর্গ।
ভালো-মন্দ
পৃৃথিবীতে কিছু ভালো, কিছু মন্দের
দুয়ে মিলে রাতে-দিনে অরি দ্বন্দ্বের
ভালো বলে পৃৃথিবীটা মানুষের হোক
মন্দ তা শুনে করে ইয়া বড় চোখ!
ভালো যদি হাসে তবে রোজ ফোটে ফুল
কলি হতে মেলে দল সকল মুকুল
মন্দের কারসাজি মানুষের মনে
সুখ কেড়ে দুখ আনে ঘুমে-জাগরণে।
ভালো আছে বলে তাই রোজ ওঠে চাঁদ
আঁধারের সাথে রোদ মিটায় বিবাদ
মন্দের চাল চেলে আসে অমানিশা
দুঃখের সমুদ্রে সে হারায় দিশা।
ভালো আনে সম্প্রীতি, মন্দ বিভেদ
হিংসার বহ্নিতে হননের জেদ
ভালো তোলে সাগরের বুক জুড়ে ঢেউ
সব তার আপনার, পর নয় কেউ।
মন্দরা মনে মনে কষে শুধু প্যাঁচ
নিজেদের স্বার্থেই করে ক্যাঁচ ক্যাঁচ
ভালো যারা নিজেদের স্বার্থ না চায়
অন্যের সাথে ভাগ করে সুখ পায়।
ভালো যারা মনে তারা উদার আকাশ
মানবতা মনে তার বানায় আবাস
মন্দরা অমানুষ খুব ছোট মন
কাউকে না কিছু দিতে করে তারা পণ।
ভালো হলো পৃৃথিবীর ফোয়ারা আলোর
রাত কেটে ঠিক আনে রোদরাঙা ভোর
মন্দের চোখ থাকে আঁধারের গায়
ঝোপ বুঝে কোপ মেরে বগল দাবায়।
ভালো আর মন্দের পৃৃথিবী নিবাস
ভালো ভরা হোক সব দিন বা কি মাস
মন্দরা দূর হোক পৃৃথিবীর পার
ফুলে ভরা কাননের হোক সংসার।
সত্য-মিথ্যা
সত্য নামের সুবোধ ছেলেটি সবার বিপদণ্ডতারিণী
ছেলের কারণে গরবিনী হয় জননী গর্ভধারিণী
যেখানে সে যায় সবাই তাকায়, সত্যের প্রতি দৃষ্টি
তাকে আঁকড়ালে থাকে নির্ভয় সত্যাশ্রয়ী কৃষ্টি।
মিথ্যার নামে পাড়ার সবাই ক্ষণে ক্ষণে মারে কনুই
বুকে নেবে ঢের! দৃষ্টিকে করে বিষমাখা ‘তীর-ধনু’ই
মিথ্যার ছায়া মাড়ায় না কেউ মিথ্যা নয়কো ন্যায্য
মিথ্যাকে কেউ ভাবলে আপন পরিবার করে ত্যাজ্য।
সত্যের নামে শক্তিতে জাগে তরুণ-প্রবীণ সর্বে
মরণের পরে সত্যের বলে সুবিচার পায় গর্বে
সত্যের চেয়ে ধার বেশি নয় শাসকের তলোয়ারের
সত্যের বলে অবিচল মন নেতাদের ফলোয়ারের।
মিথ্যার মনে সদা আলাপনে ইবলিশ রয় ব্যস্ত
দুইকানে তার খারাপ কাজের নির্দেশ করে ন্যস্ত
মিথ্যার জোরে যারা পথ চলে তারা পড়ে গর্তে
মিথ্যাকে যারা আঁকড়েছে তারা ভুগবে এ মর্ত্যে।
সত্যের মনে সুখের নহর শান্তির বহে ঝর্ণা
পরকালে সুখ যাদের কামনা তারা দেয় এসে ধর্ণা
সত্যের কাছে আজ কিবা কাল সকলেই হবে ধন্য
সত্যের জয় দুইকাল জুড়ে হবেই অগ্রগণ্য।
মিথ্যার মুখে লাগে চুনকালি মিথ্যার ভাগে দাহ্য
দোযখের তাপে পুড়ে ছাই হয় মিথ্যার সা¤্রাজ্য
মিথ্যাকে ছেড়ে সত্যের সাথে যারা গড়ে নেয় সখ্য
চিরসুখি তারা পৃথিবীতে আর জান্নাত অভিলক্ষ্য।
আত্মোপলব্ধি
তাপদহ চৈত্রে বায়ুবহ ফাগুনেই
বাংলার নগরেরা জ্বলে ওঠে আগুনেই
আগুনের জিভে পুড়ে ধন যায় প্রাণ যায়
ধোঁয়া-জ্বলা মানুষের মমতার ঘ্রাণ যায়।
আধুনিক ভবনের ত্রুটিমাখা নির্মাণ
কর্তারা না দেখেই ঘুষ নিয়ে ক্ষীর খান
লোভাতুর মালিকের মনে লোভ মুনাফার
আগুনের কম্পনে ভবনেরা খুনাধার।
জনগণ জেনেশুনে করে যত নিয়মে
বিপদকে আনে ডেকে করেনাতো অরি দম
কেউ পুড়ে অঙ্গার কেউ মাতে তামাশায়
তবুওতো জেগে থাকে স্বদেশের মা আশায়।
বিপদের ভিড়ে কেউ মজা লোটে আমোদের
কেউ কেউ ছোট তবু কাজ করে সে বোধের
কেউ কেউ সেবাদাতা আটকিয়ে করে ভিড়
অকারণ খোঁজে দোষ বদনামে ছোড়ে তীর।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষেরে যে বাঁচায়
সেই সব বীরকেও নিন্দুকে দুষে যায়
ভাবে শুধু এদেশের কর্মীরা অদক্ষ
নিজেদের দোষ ঢেকে চাপড়ায় আবক্ষ।
বাঙালিরা যদি হয় নিজ কাজে সচেতন
আরো আগে এদেশটা হতো সুখি নিকেতন
অন্যের দোষ নয় দোষ খুঁজি নিজেদের
এইদেশ উন্নত তবে হবে কী যে ঢের!