সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

ইমামে রাব্বানী আওলাদে রাসুল আল্লামা সাইয়্যেদ আবিদ শাহ্ মোজাদ্দেদী আল-মাদানী (রাঃ)-র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
অনলাইন ডেস্ক

ইমামে রাব্বানী, কাইউমে জামান, মুফতিয়ে আজম, খলীফাতুর রাসূল, আওলাদে রাসুল হযরতুল আল্লামা সাইয়্যেদ আবু নসর মোহাম্মদ আবেদ শাহ্ মোজাদ্দেদী আল মাদানী (রাঃ) হলেন আমীরুল মোমেনীন হযরত ওমর ফারুক রদিয়াল্লাহু আনহুর খান্দানের লোক। হযরত ওমর (রাঃ)’র বড় ছেলে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)’র সাথে শুভ বিবাহ হয় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার বড় নাতী হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)’র বড় শাহজাদী ফাতেমা (রাঃ)’র। এই বংশক্রমে আল্লামা আবিদ শাহ আল-মাদানী রাসুল (দঃ)-এর বংশধর এবং তাঁর ৩৮তম আওলাদ।

হযরত ওমর (রাঃ)-এর জন্ম হয় মক্কা মুয়াজ্জামায়। তিনি হিজরত করে মদিনা শরীফ যান এবং সেখানে বসতি করেন। সে হতে ওয়ায়েজ-ই আসগর শেখ আবদুল্লাহ (রাঃ) পর্যন্ত তাঁরা হেজাজেই ছিলেন। তাঁর পুত্র শেখ মাসউদ আব্বাসীয় খলীফাগণের পীড়াপীড়িতে বাগদাদে আগমন করেন। তারপর ফাররুখ শাহ্ কাবুলী (মূল নাম শেহাবুদ্দীন) আফগানিস্তানের দারুস সুলতান কাবুলে আসেন। অতঃপর তাঁরই বংশের লোক ইমাম রফিউদ্দীন (রাঃ) হিন্দুস্তানের মুলতানে আগমন করেন এবং উচ্চ নামক স্থানে বসতি স্থাপন করেন। তিনিই ছিলেন সিরহিন্দ কিল্লার প্রতিষ্ঠাতা। ইমামে রাব্বানী, কাইউমে জামান, খাজিনাতুর রাহ্মাত, হযরত সাইয়্যেদ শায়খ আহমাদ সেরহিন্দি মোজাদ্দিদে আল্-ফেছানী (রাঃ) তাঁরই বংশধর।

বাদশাহ্ শাহ্জাহান মোজাদ্দিদে আল্-ফেসানী (রাঃ) এবং তাঁর আওলাদের পরম ভক্ত ও মুরীদ ছিলেন। তিনি সেখানে ১০৪৪ হিজরিতে এক আলীশান মহল ও বাগান তৈরী করে দেন। ১৭০৭ খ্রীঃ পর্যন্ত এ শহর শ্রী বৃদ্ধি ও উন্নতির পথে ছিল। অতঃপর যখন সম্রাট আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য বিজয়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেন তখন সুযোগ বুঝে শিখের দল সিরহিন্দের উপর চড়াও হয় এবং লুটপাট করে শহরটিকে বিধ্বস্ত করে দেয়।

শিখদের উৎপীড়ন হতে রক্ষা পাবার জন্য তাঁর আওলাদের মধ্যে যাঁরা জীবিত ছিলেন তাঁরা হিজরত করে আদিভূমি মদীনায় চলে যান। ভারতের রামপুর স্টেটের নবাব কলবে আলী খাঁ পবিত্র হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ গমন করেন এবং তথা হতে মদীনা শরীফ গিয়ে তিনি ইমামে রাব্বানী সাহেবের চাচা মোঃ ইব্রাহীমের (তিনি তখন মসজিদে নববীর ইমাম ছিলেন) কাছে বরকতের জন্য মোজাদ্দিদে আলফেসানী (রাঃ)-এর খান্দান হতে কিছু লোক তাঁর সাথে নেয়ার প্রস্তাব করেন। এতে ইমামে রাব্বানী সাহেবের চাচা রাজী হলেন। নবাব ইমামে রাব্বানী সাহেবের ওয়ালেদাইনগণসহ ও তাঁর আরেক চাচা মাওলানা এরশাদ হোসাইন মোজাদ্দেদী সাহেবকে সঙ্গে করে ভারতের রামপুরে নিয়ে আসেন এবং তথায় নবাব তাঁদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার জন্য বহু জায়গা সম্পত্তি দেন। হযরত মোজাদ্দিদে আল-ফেসানী (রাঃ)-র সুযোগ্য বংশধর হলেন হযরত সাইয়্যেদ আবেদ শাহ্ মোজাদ্দেদী আল মাদানী (রাঃ)। তিনি ১২৮৪ হিঃ শাবান মাসে পবিত্র শবে বরাতের সুবেহ সাদেকের শুভক্ষণে মদীনা শরীফের জান্নাতুল বাকী মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। আটাশ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন ও পরে হিন্দুস্থানের সিরহিন্দে আগমন করেন।

হিন্দুস্থানে তিনি সাতান্ন বছর ইলমে হাদীস ও ইলমে তাফসীর এবং ইলমে ফিকাহর খেদমতে নিয়োজিত থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইসলামের ভিতর অনৈক্য সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ফেরকা বিশেষ করে ওহাবী জামাত, লা-মাযহাব, দেওবন্দী, কাদিয়ানী, তাবলিগী, বাহাইয়া, জামাতে ইসলামী, আওর মুহাম্মদীয়া প্রভৃতি ফেরকা এবং ইসলামের বাইরের শত্রু ইহুদী, খৃষ্টান ও অন্যান্য দলের বাতিল আকিদা সমূহের বিরুদ্ধে বাহাছ ও মুনাজেরার অবিরাম জিহাদে নিয়োজিত ছিলেন। হিন্দুস্থানে তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন 'গজনফর আহলে সুন্নাত' ও 'গজনফর হিন্দ’-হিন্দের সিংহ উপাধিতে।

তিনি বায়া'তে রাসূল (দঃ)-এর মৃত সুন্নাতকে জিন্দা করেন। এর ফলে সকল বিদআতী বায়া'তের মূলোচ্ছেদ ঘটলো। তাঁর ভূমিকা হলো দ্বীনের তাজদীদের ভূমিকা, তাই তিনি হলেন মোজাদ্দিদ। তাঁর তাজদীদের কাজ শুরু হলো হিজরির চৌদ্দ শতকের শেষভাগে ও পঞ্চদশ হিজরির প্রথমভাগে। তাজদীদের ক্ষেত্রে তিনি একক, সুন্নী জামাতকে জিন্দা করবার ক্ষেত্রেও তিনি একক; তাই তিনি ছিলেন ইমামে আহলে সুন্নাত। তরীকতের ক্ষেত্রে বায়া'তে রাসূল (দঃ)-এর সন্ধানকারী, তাই তিনি ইমামে রাব্বানী।

বাতিলের বিরুদ্ধে এ জিহাদে তাঁকে দু'বার কারাবরণ করতে হয়। একবার হিন্দুস্থানে, একবার বাংলাদেশে। তিনবার দুশমনে রাসূলেরা তাঁকে খাদ্যের সাথে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে উক্ত বিপদে বহু কষ্টের পরে মুক্তি পান। এরপরেও তিনি সত্যের পথে মানুষকে আহ্বানের মাঝে অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হন। এতো বাধার পরও তিনি ছিলেন আপোষহীন সংগ্রামী মুজাহিদ ও রাসূল (দঃ) প্রেমিক সৈনিক।

১৯৪৭ খৃষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট যখন অখণ্ড ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে যায়, তখন তিনি রাসূলে করীম (দঃ)-এর গায়েবী নির্দেশে ১৯৪৮ ইং সনে হিজরত করে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলদেশে) চলে আসেন এবং চাঁদপুর জেলাধীন হাজীগঞ্জ উপজেলার মোজাদ্দিদ নগর (ধেররা) গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। সেখান থেকেই তিনি এদেশের সকল ইসলাম বিকৃতিকারীদের বিরুদ্ধে দুর্বার সুন্নী ইসলামী আন্দোলন শুরু করেন। বহু বাহাসের মাধ্যমে তিনি ইসলাম বিকৃতিকারীদের বিভিন্ন জায়গায় নাস্তানাবুদ করেছেন এবং সুন্নাতে মুতাওয়ারিসা বায়া'তে রাসূল (দঃ)-কে এদেশে পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করে লাখ লাখ মুসলমানগণকে বায়া'তে রাসূলে অন্তর্ভূক্ত করেন।

অবশেষে তিনি একশত ছাব্বিশ (১২৬) বছর বয়সে পঁচিশে সফর চৌদ্দশত নয় হিজরী রোজ শনিবার ইন্তিকাল করেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।

তাঁর মাজার শরীফ তার নিজ গ্রামের বাড়ি হাজীগঞ্জে স্থাপিত। প্রতি বৎসর ২৩ আশ্বিন ৮ অক্টোবর তারিখে তাঁর মাজার শরীফ প্রাঙ্গণে তাঁরই নামে ‘উরুসে ইমামে রাব্বানী’ উদ্যাপিত হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়