প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২২, ০০:০০
মার্চ বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস
মার্চ মাস বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির এক মাস। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বিষাদ, আবেগ-অনুভূতি বিজড়িত মাস এই মার্চ। এই মার্চে ৪টি দিবস খুবই গুরুত্ব বহন করে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২২ জাতীয় দিবস, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। এ মাসের ২৬ তারিখে এদেশের জন্ম; আবার এ ১৭ তারিখে জন্মেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তাই মার্চ বাঙালি জাতির জন্য অর্থবহ এক মাস। এ মাসেই তাঁর জাদুকরি ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বপ্নে বিভোর করেছিলেন তিনি। গর্জে উঠেছিলো বাঙালি। স্বাধীনতার প্রেরণার উৎস ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐ ভাষণ। ঐতিহাসিক এই ভাষণের পর প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহীনে লালন করা তখনো অধরা 'স্বাধীনতা' যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
|আরো খবর
একজন বঙ্গবন্ধু; একটাই বাংলাদেশ। শতবছর আগে ১৭ মার্চে জন্ম নেয়া তেজোদ্দীপ্ত এই মানুষটি গর্জে উঠেন ৭ মার্চ; সেই গর্জনেই অর্জন ১৬ ডিসেম্বর। পৃথিবীর বুকে নাম লেখালো স্বাধীন বাংলাদেশ। তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, সততা, সাহস সর্বোপরি দেশপ্রেমেই বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়। ১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, যদিও তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। তারপরে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে।
১ মার্চ রাতেই স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়। সেই সংগ্রাম পরিষদ ৩ মার্চ পল্টনে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই শোভাযাত্রায় শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করলেন। ইশতেহারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সব কথা বলা ছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের চৌহুদ্দি কী হবে, এই পতাকা বাঙালির পতাকা হবে, জয় বাংলা বাঙালির স্লে¬াগান হবে, বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সর্বাধিনায়ক। সবকিছু বলা হয়েছিল। সে সময় মুহুর্মুহু স্লে¬াগান হয় যে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। ২ তারিখে পতাকা উত্তোলন, ৩ তারিখে ইশতেহার পাঠ, আর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধু। এভাবেই স্বাধীনতার পটভূমি তৈরি হয়।
আজ বঙ্গবন্ধু নেই। আছে তাঁর স্মৃতি। ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আজও বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গাঁথা আছে। বঙ্গবন্ধুকে কী করে ভুলে বাঙালি। বাঙালি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে তাঁকে। এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করা হয়েছে। শতবছর আগে ১৭ মার্চ প্রিয় এ মানুষটির জন্ম। তিনি ভালোবেসেছিলেন বাঙালি জাতিকে। বীর হতে চাননি যিনি, ভয় পাননি শহীদ হতে। রক্ত দিয়ে যিনি দেশবাসীর ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করতে প্রস্তুত ছিলেন সর্বদা, তাঁকে কী করে স্মরণ না করে বাঙালি? বঙ্গবন্ধু ক্ষমতাকে ভালোবাসেননি, হৃদয় দিয়ে দেশকে ভালোবেসেছেন, দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন। অর্থ লোভ তাঁকে ছোঁয়নি কখনো। দেশের ভালোবাসার কাছে অর্থ ছিলো তুচ্ছ। এমন নেতা কী আর জন্মাবে কখনো এদেশে? যা দেখছি তাতে বোধ করি কখনোই না। বঙ্গবন্ধু হয়ে আর আসবেন না কখনো কেউ। এক বঙ্গবন্ধু, এক বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বাংলাকে ভালোবাসার এমন মানুষ আর কখনোই আসবে না এদেশে। তাঁর মতো করে কেউ বাংলাকে আর ভালোবাসবে না; বাঙালিকে তাঁর মতো করে কেউ আর আগলে রাখবে না।
আমরা সত্যি অকৃতজ্ঞ জাতি। যিনি আমাদের দেশমাতৃকাকে উপহার দিলেন, এই তাকেই কত না নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। জাতির পিতার বাসভবনে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হলো সেদিন। শিশু রাসেলের কান্না আর আকুতিও ওদের হৃদয় স্পর্শ করলো না। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকারীরা তার কবর তিন মাস পর্যন্ত পাহারা দিয়েছে। সেখানে কাউকে আসতে দেয়া হয়নি। এমনকি দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের ছবি এদেশে নিষিদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর কবর দেখতে না দেয়া, তার হত্যার ছবি প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ ঘৃণ্য হন্তারক ওই সামরিক শাসকরা তাতে ভয় পেতো। তাদের ভয়টা ছিল এখানেই যে, তারা নিশ্চিত জানতো জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা আরো জানতো, সে সময় এসব ছবি প্রকাশ পেলে কোনো কিছুতেই বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।
সেই ১৫ আগস্ট। সিঁড়িতে পড়ে আছে বাঙালি জাতির প্রাণপ্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তমাখা নিথর লাশ। সিঁড়ি গড়িয়ে রক্ত চলে এসেছে বাহির আঙ্গিনায়। মহান সেই নেতার রক্ত সোঁদা মাটিতে মিশে গেছে। তিনি তো শুধু এ দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, ছিলেন না দলবিশেষের প্রধান। দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী ঝড়-মেঘ ইতিহাসের পথে আমাদের যাত্রায় তিনি ছিলেন সঙ্গী ও পথপ্রদর্শক। তাকে ভুলবো কেমন করে? তাঁকে কি ভোলা যায় কখনো? তাই তো ইতিহাসের এই মহানায়কের উদ্দেশে কবি লিখেছিলেন, ‘যতদিন রবে পদ্মা, যমুনা/গৌরী, মেঘনা বহমান/ততদিন রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান।’
অবিসংবাদিত এই নেতার জীবন চলার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকার তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বজ্রদৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাঁরই বজ্র নির্ঘোষ ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ধারণ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অদম্য সাহস ও অকুণ্ঠ আত্মত্যাগ, সাংগঠনিক শক্তিতে নিজের বাঙালিসত্তার গভীর অনুরণন উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। কখনো স্বভাবের প্রেরণায়, কখনো সযতœ উৎসাহে তার উন্মোচন ঘটিয়েছিলেন। দেশবাসীকেও তেমনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন সেই সত্তার জাগরণ ঘটাতে। দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে এক মোহনীয় স্বপ্ন রচনা করেছিলেন তিনি ধীরে ধীরে, সেই স্বপ্ন সফল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন সকলের প্রতি। কী বিপুল সাড়া তিনি পেয়েছিলেন, তার পরিচয় তো আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। ১৯৭১ সালে যেভাবে তিনি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন, তাতে বিস্মিত হয়েছিল সারাবিশ্ব। ক্ষাত্র শক্তির সঙ্গে নৈতিক শক্তির দ্বন্দ্ব পৃথিবীতে এই প্রথম সংঘটিত হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ঐক্য যে শৃঙ্খলা যে দুর্জয় সংকল্পের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল তার তুলনা হয় না। তারপর সেই ৭ই মাচের্র ভাষণ, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। যে শুনেছে সে ভাষণ তারই শরীরে বয়ে গেছে বিদ্যুৎপ্রবাহ। কী ছিল সে ভাষণে? কোনো অজ্ঞাত তথ্য নয়, কোনো অপ্রত্যাশিত ঘোষণা নয়, ভাষার কোনো কারুকার্য নয়, বলবার কোনো পরিশীলিত ভঙ্গি নয়। তাতে ছিল এ দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের অকথিত বাণীর প্রকাশ, তাদের চেতনার নির্যাস, বক্তব্যের অবিসংবাদিত আন্তরিকতা। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এই আন্তরিকতার বন্ধন গড়ে উঠেছিল বলেই তো শত্রুদেশে বন্দী থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর প্রেরণা ছিল সক্রিয়। স্বাধীনতা লাভের জন্য যেমন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল সকলে তেমনি প্রবল আকাক্সক্ষা ছিল তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলার। বন্দীদশা থেকে মুক্তিলাভ করে দেশে প্রত্যাবর্তন করেই তিনি বলেছিলেন, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে; পূর্ণ হবে না। এই ছিল তাঁর স্বপ্নেরই অংশ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই তাঁকে সপরিবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হলো।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক বিশাল প্রতীক এবং নিরন্তর প্রেরণার উৎস। এইসব উপাদানের সমন্বয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং এই ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং সর্বোচ্চ স্থানটি যে বঙ্গবন্ধুর যুক্তিবাদী, বিচারশীল এবং ইতিহাসবোধসম্পন্ন সকল মানুষই এটা স্বীকার করবেন। এ ব্যাপারে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু তবুও কিছু লোক বিতর্ক তুলেছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালনের সরকারি সিদ্ধান্তকে ক্ষমতার জোরে অন্যায়ভাবে বাতিলও করে দিয়েছেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত ছিল অদূরদর্শী, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বিরোধী এবং ইতিহাসকে অস্বীকার করার নামান্তর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপরবর্তী নানা অস্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহের ¯্রােতে এই দিনটিকে ১৯৭৫ পরবর্তীকাল থেকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। রাজনৈতিক নানা স্বার্থ, স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্ত এবং কিছু লোকের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কারণে এটি সম্ভব হয়নি। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যখন এই দিনকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করলো তখন তাকে সকল গণতান্ত্রিক, ইতিহাসবোধসম্পন্ন ও শুভবুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত দলের মানুষেরই মেনে নেয়া উচিত ছিল। কারণ বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশ আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্যে তিনি প্রায় সিকি শতাব্দী সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন এবং তারই ফলে মানুষের মনে তার চিন্তা-চেতনা গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এবং ধাপে ধাপে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ আন্দোলনকে রাজনৈতিক সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি ইতিহাস। বাঙালির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সন্তান তিনি। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। সংগ্রামের মধ্যেই তিনি বড় হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়ায়। ছাত্র অবস্থায় তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠন, কপ, পিডিপির আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে মহানায়ক হিসেবে ১৯৭০-এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে এদেশের গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। অবিসংবাদিত এই নেতার জীবন চলার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ঢাকার তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বজ্র কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তারই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ধারণ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অদম্য সাহস ও অকুতোভয় আত্মত্যাগ, সাংগঠনিক শক্তিতে নিজের বাঙালি সত্তার গভীর অনুরণন উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। দেশবাসীকেও তেমনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন সেই সত্তার জাগরণ ঘটাতে। দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে এক মোহনীয় স্বপ্ন রচনা করেছিলেন তিনি ধীরে ধীরে, সেই স্বপ্ন সফল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন সকলের প্রতি। কী বিপুল সাড়া তিনি পেয়েছিলেন, তার পরিচয় তো আমরা স্বচক্ষে দেখেছি।
বঙ্গবন্ধুকে জীবনের একটা বড় অংশ বাঙালি জাতির জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে। দেশের জন্য দিয়েছেন নিজের জীবনও। জেল জুলুম ছিল তাঁর জীবনের একটা অংশ। বন্দিদশা থেকে মুক্তিলাভ করে দেশে প্রত্যাবর্তন করেই তিনি বলেছিলেন, ‘যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না’। এই ছিল তাঁর স্বপ্নেরই অংশ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই তাঁকে সপরিবারে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে স্বপ্ন দেখা মানুষ গুলো। তিনি চলে গেলেন। আর ফিরে এলেন না। আফসোস, এমন একটা নেতা এদেশের আর জন্মায়নি একটিও। তাঁর মতো করে বাংলাকে আর ভালোবাসবেনি কেউ, দেশের মানুষকে আগলে রাখেনি কেউ। হে মহান নেতা ভালো থাকো, স্বর্গীয় সুখে থাক। হাজারো সালাম তোমায়।
লেখক- মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক।