প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
রাসেলস ভাইপার নিয়ে উভয় সংকট, ছড়াচ্ছে জেলায় জেলায়
কয়েক মাস ধরেই চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার নামে সাপটি আলোচনার তুঙ্গে। জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এক সময় বিলুপ্ত ঘোষণা করা জাতটি। ফসলের মাঠে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। রাসেলস ভাইপার-বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন জেলায় আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে বিষধর এই সাপ। বাংলায় সাপটির নাম চন্দ্রবোড়া, তবে দেশের মানুষ বেশি চেনে ইংরেজি নামটি।
এক সময় বিলুপ্ত ঘোষণা করা প্রাণীটি উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল। তবে এখন পদ্মা অববাহিকা ধরে ছড়িয়ে গেছে দেশের ২৬ থেকে ২৭টি জেলায় এবং সংখ্যাটা বেড়েই চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণ হারাচ্ছে কৃষক বা কৃষি শ্রমিক।
এর প্রতিক্রিয়ায় ফসলের মাঠে বা নদীর কিনারায় একের পর এক ছোবলের পর মানুষ দেখা মাত্রই সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। কিন্তু সাপের জাতটি সংরক্ষিত। ফলে নিধন করা আইনে নিষেধ, আছে শাস্তির বিধানও।
তবে যেভাবে ছোবলের ঘটনা ঘটছে, তাতে উৎকণ্ঠিত মানুষের এই প্রতিক্রিয়াও অস্বাভাবিক নয়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে ভাবছে বন বিভাগ; কাজ করছে তাদের বিশেষজ্ঞ দলও।
সাপের প্রাণ বাঁচাতে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী একটি দল এগিয়ে এসেছে। তারা বেশ কয়েকটি নম্বর দিয়ে বলেছে, কোথাও রাসেলস ভাইপার দেখলে না মেরে তাদেরকে জানাতে। সেসব নম্বরে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ ফোন আসছে।
সাপগুলো বেশি দেখা যাচ্ছে ফসলের মাঠে। কারণ তাদের প্রধান খাবার হল ইঁদুর, যেটি আবার ফসলের প্রধান শত্রু। অর্থাৎ একদিক দিয়ে এ সাপ কৃষকের বন্ধু, আবার শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা ফসলের মাঠে কাজ করতে যাওয়া কৃষকদের গামবুট ও লম্বা গ্লাভস পরার পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই। এমন প্রেক্ষাপটে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সাপ নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা অভয় দিচ্ছেন যে এ সাপ নিজে থেকে আক্রমণাত্মক না; এটি দেশের সবচেয়ে বেশি বিষধরও না।
তারা বলছেন, এটি ছোবল দেয় আতঙ্কিত হলে। এর আগে আবার সতর্ক করে শব্দ করে। কাজেই সতর্ক-সচেতন থাকলে ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন কিছু নয়।
যেসব কারণে আতঙ্ক
গত এক বছরে প্রথমে রাজশাহী অঞ্চল থেকে আসত ছোবলে আহত বা প্রাণ হারানোর খবর। চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন রাসেলস ভাইপারের কামড় নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
এ সময়ে পদ্মা অববাহিকার জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণিটি। প্রায়ই সাপের ছোবলে আহত অথবা মৃত্যুর খবর আসছে।
গত মার্চে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলে প্রাণ হারান এক কৃষক। এরপর মে মাসে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের দেখা মেলে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার ধামরাইয়ে আর ফরিদপুরে এ সাপের ছোবলে দুই জনের প্রাণ যায় বলে খবরে এসেছে। পদ্মার তীরের মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলাতেও সাপের উপদ্রব বাড়ছে।
শুক্রবার সাতক্ষীরায় ফসলের মাঠে একটি সাপ দেখার পর পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পটুয়াখালী ও ভোলাতেও দেখা মিলেছে বিষধর জাতটির। এর মধ্যে ভোলায় বাসাবাড়িতেও ঢুকে গেছে এটি।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এক যুগ আগে যেখানে ১৭টি জেলায় বিষধর এ সাপের দেখা মিলেছে, এখন তা ছড়িয়েছে প্রায় ২৬-২৭টি জেলায়।
ভোলায় বাড়ির ভেতরে লাকড়ির স্তূপের ফাঁকে বা খাটের নিচ থেকে সাপ বের করে আনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে ফেইসবুক-ইউটিউবে। সেগুলোর পাশাপাশি ছড়াচ্ছে নানা ধরনের ভুল তথ্যও। দাবি করা হচ্ছে, এ সাপের বিষের প্রতিষেধক নেই। এসব তথ্যে আতঙ্কিত হচ্ছে মানুষ।
জেলায় জেলায় ছড়াচ্ছে যেভাবে
রাসেলস ভাইপার নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম ফরিদ আহসান।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। এর আগে নব্বইয়ের দশকেও ছিল না যে, বলা যাবে না। গত শতাব্দীতেও রেকর্ড পাওয়া যাবে। রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা থেকে রেকর্ড আছে। মাঝখানে রাসেলস ভাইপারের আক্রমণ, আনাগোনা, উপস্থিতি শোনা যায়নি। তার গবেষণার তথ্য বলছে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত চার বছরে ২০ জন মারা গিয়েছিল।
পরে রাজশাহী অঞ্চল থেকে এ সাপ বর্ষার সময় স্রোতের ভাসা কচুরিপানার উপর বসে চরাঞ্চলে গিয়ে ঠেকছে; তারপর আশপাশে ফসলের খেতে যাচ্ছে।
ফরিদ আহসান তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, মূলত আশপাশের নদীতে, যেখানে বন্যার স্রোতে পানি আসে, এভাবেই ছড়িয়েছে বেশি। পদ্মা অববাহিকায় সবচেয়ে রাসেলস ভাইপারের উৎপাত বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ফিরোজ জামানও বলছেন, বন্যার সময় পানির ঢলে ভেসে আসে বেশি এ সাপ। বাংলাদেশের কিছু পপুলেশন, ইন্ডিয়ার কিছু পপুলেশন এসে যোগ হয় বিধায় সংখ্যায় বেশি দেখা যায়। ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে গেছে। এ সময়টা হচ্ছে তাদের প্রজনন মৌসুম। এ সময় বেশি অ্যাকটিভ থাকে। ছোট ছোট এক ফুট, দেড় ফুট সাইজের বাচ্চাগুলো ভেসে আসে বেশি। সাঁতার কেটে নদীর কূলে উঠে আশ্রয় নেয়। এখন পুরো তিন চার মাস ধরে প্রাদুর্ভাব থাকবে তাদের।
গবেষণায় যা মিলেছে
২০১৮ সালে প্রকাশিত মোঃ ফরিদ আহসান ও মোঃ আবু সাইদের ‘রাসেলস ভাইপার ইন বাংলাদেশ : ইটস বুম অ্যান্ড থ্রেট টু হিউম্যান লাইফ’ গবেষণায় বাংলাদেশে সাপটির বংশবিস্তারের চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক ফরিদ বলেন, “আমরা ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৭টি জেলায় পেয়েছিলাম। বিস্তৃতি কেমন, কত লোক মারা গেছে তা তুলে ধরে দেখিয়েছিলাম (২০১৩-২০১৬) রাজশাহীর ওইদিকে ২০ জন মারা গিয়েছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এখন ৬০ এর বেশি মারা গেছে সব মিলিয়ে। এখন ৬৪ জেলার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি এলাকায় উপস্থিতি দেখা গেছে।”
মোঃ ফরিদ আহসান ও মো আবু সাইদ এর যৌথ গবেষণা ‘রাসেলস ভাইপার ইন বাংলাদেশ: ইটস বুম অ্যান্ড থ্রেট টু হিউম্যান লাইফ’ ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়।
পুরনো রেকর্ড (২০১৩ সালের আগে যেসব জেলায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে)- নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম।
নতুন রেকর্ড (২০১৮ সাল পর্যন্ত আরো যেসব জেলায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে)-দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী।
সাম্প্রতিক সময়ে আরও বিস্তার ঘটেছে- মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, ভোলা, ফরিদপুর, মেহেরপুর।
এই গবেষক বলেন, কোথায় কেমন সংখ্যক এ সাপ রয়েছে তার পরিসংখ্যান নেই, কেউ করেছে বলেও জানা নেই। কিন্তু বিস্তৃতির ডেটা রয়েছে আমাদের। এখন শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী পর্যন্ত পাওয়া গেছে; চট্টগ্রামেও মিলেছে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০২ সালের দুটি নমুনা (স্পেসিম্যান) রয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটা এত বেশি ছিল বলে জানা ছিল না।
যে কারণে বিস্তার ও মৃত্যু বেড়েছে
রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বাড়ার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক এম ফরিদ আহসান বলেন, এরা ডিম দেয় না, বাচ্চা দেয়। বাচ্চাদের সারভাইভাল রেটও বেড়ে যায়। বিস্তৃতিও এত জায়গায় ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে লোকজনের আতঙ্ক বেড়েছে।
খাবারের সহজপ্রাপ্যতাও রাসেলস ভাইপারের বংশবিস্তারের একটা বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি।
বরেন্দ্র এলাকায় তাদের বিস্তৃতি বেশি ছিল জানিয়ে ফরিদ আহসান বলেন, সেখানে বছরে এক থেকে দুটো ফসল হত। নব্বইয়ের দশকে গভীর নলকূপ বাড়ায় মাঠগুলোয় তিনটি ফসল হচ্ছে। এসময় ইঁদুর থাকে বেশি। মাঠে ইঁদুর থাকলে রাসেলস ভাইপার খাবারের সুযোগ পায়; তার সঙ্গে প্রডাকশন রেটও বাড়ছে, বাচ্চারাও বাঁচে বেশিদিন।
দ্বিতীয়ত, পদ্মার ওপারে পানির তোড়েও ভেসে আসছে অনেক, খুব সম্ভবত ইন্ডিয়ার দিক থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত দিয়ে পানির তোড়ে আসে। এই সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়ার পেছনেও কিছু কারণ তুলে ধরেন তিনি।
এই অধ্যাপক বলেন, এটা শুষ্ক এলাকার প্রাণী, ঝোপঝাড়ে থাকে। কিন্ত একেবারে গভীর বনে থাকে না। ক্ষেতে ফসল কাটতে গিয়ে (কৃষকরা) কামড় বেশি খেয়েছে তুলনামূলকভাবে, মারাও গেছে।
রাসেলস ভাইপারের চেয়ে বিষধর সাপ বাংলাদেশে আছে, যেমন গোখরা। মূলত ওই সাপগুলো বেশির ভাগ সময় সন্ধ্যার দিকে বের হয়। কিন্তু রাসেলস ভাইপার দিনেও পাওয়া যায়, রাতেও পাওয়া যায়, এটাই বেশি মৃত্যুর কারণ।
বরেন্দ্র এলাকার লোকজন এ সাপের বিষয়ে মোটামুটি সচেতন হয়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু অন্য জায়গার লোকজন বুঝে উঠতে পারেনি। আগে ছিল না; যার জন্য মৃতের ঘটনাও বেড়েছে।”
করণীয় কী
ছোবল দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ফরিদ আহসান বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। কখনও আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে। যাকে কামড়াবে সে যেন হাঁটাহাঁটি, দৌড়াদৌড়ি না করে, আরেকজনের সাহায্য নিয়ে পৌঁছাতে হবে। চিকিৎসকদের অনেকে প্রশিক্ষিত। নার্সদেরও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। জনগণের সচেতন থাকতে হবে।
ফসলের মাঠে যাওয়ার আগে বাঁশ বা কিছু দিয়ে নাড়িয়ে দেওয়া, যেন সাপ থাকলে সরে যায়। মোটা কাপড়ের প্যান্ট, বিশেষ বুট পড়ে যেতে পারলে ভালো, হাতে গ্লাভস থাকলে ভালো।
সর্বোপরি, সরকারের উদ্যোগ থাকলে ভালো সাড়া মিলবে, বলেন তিনি।
প্রতিষেধক কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ফিরোজ জামান বলছেন, ‘কম্পোজিট’ অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় সবখানে।
কম্পোজিট অ্যান্টিভেনম এখন সব বিষধর সাপের কামড়ের চিকিৎসায় কাজ করে। এ সময়ে সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম সহজে যেন পাওয়া যায়, তাতে আক্রান্তরা সেবা পাবে। তবে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ, তাদের (রাসেলস ভাইপার) বিষ দ্রুত ছড়ায়।
এ সাপের দংশনে কয়েক ঘণ্টার মধ্য মারা যাবে- এমনও বলা যাবে না। তবে বুঝতে হবে আসলে রাসেলস ভাইপার কামড় দিয়েছে কি না।
তিনি বলেন, শুধু রাসেলস ভাইপারের জন্য বিশেষ অ্যান্টিভেনম মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে রয়েছে। বাংলাদেশে নেই, কম লাভ হওয়ায় দেশের কোনো কোম্পানি উৎপাদনে আগ্রহী না।
তবে কমন পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম বা কম্পোজিট অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়। ভারত থেকে আসে। চারটা বিষের তৈরি ওষুধ দিয়ে তৈরি অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়। ভারতেও সেটি ব্যবহার করে।
গত এক দশকে সাপটি ২৬ থেকে ২৭ জেলায় ছড়ানোর তথ্য মিলেছে। এই সংখ্যাটি কেবল বাড়ছে। বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকায় এর প্রকোপ বেশি।
গত এক দশকে সাপটি ২৬ থেকে ২৭ জেলায় ছড়ানোর তথ্য মিলেছে। এই সংখ্যাটি কেবল বাড়ছে। বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকায় এর প্রকোপ বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ও সাপ গবেষক ইব্রাহিম আল হায়দার বলেছেন, ২০২৩ সালে তারা অ্যান্টিভেনম তৈরির একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। প্রথমেই রাসলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির চেষ্টা করছেন।
অল্প সময়ের মধ্যে প্রকল্প থেকে একটি সুখবর দিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
রাসেলস ভাইপারের বিস্তার ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকার তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর।
জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মত কিছু হয়নি। আমাদের কাছে কাছে স্ট্যাটিস্টিকস আছে কী পরিমাণ পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে এবং কী সিচুয়েশন। আমরা খুব কনসার্ন এটা নিয়ে। আমাদের যে কাজ, জনগণকে সতর্ক করার জন্য যেটুকু অ্যাডভাইজ দেওয়ার দিচ্ছি। অ্যান্টিভেনম সব জায়গায় অ্যাভেইলেবল করেছি। চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে, বলেন তিনি।
২০২৩ সালের তুলনায় এ বছরের রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষক মাঠে যাওয়ার সময় সচেতনতা অবলম্বন করবে; শুধু সাপ নয়, কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেবে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত এলাকায় সতর্ক থাকা, রাতের বেলা লাইট নিয়ে বের হওয়া।
ভাবাচ্ছে বন অধিদপ্তরকেও
বন কর্মকর্তারা বলেন, এ জাতের সাপের বিস্তারের বিষয়টি ভাবাচ্ছে তাদেরও।
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী বলেন, দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিলভুক্ত প্রায় ১ হাজার ৩৩৪টি প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষিত। রাসেলস ভাইপারও তার একটি।
রাসেলস ভাইপার এখন এপিডিমিওলজিক্যাল ইভেন্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ এটা ডায়রিয়ার মতো বিস্তার হয়ে গেছে অনেক দূর। সংখ্যাও বাড়ছে গত দুয়েক বছরে। বন্যার কারণে এক চর থেকে আরেক চর এলাকায় বিস্তারও হয়েছে।
এ নিয়ে আরও বেশি আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করার বিষয় রয়েছে। আরেকটা হচ্ছে- এর পপুলেশন (সংখ্যা) এক্সট্রিম (মাত্রাতিরিক্ত) পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনরা সিদ্ধান্ত নেবেন; এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি রয়েছে।
স্নেক রেসকিউ টিমের আহ্বান
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্নেক রেসকিউ টিম এই সাপের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে। সাপ দেখা মাত্র পিটিয়ে না মেরে তাদেরকে খবর দিতে বেশ কয়েকটি নম্বর দিয়েছে ফেইসবুকে। কল পেলে তারা সাপ উদ্ধার করে নিয়ে আসবে।
নম্বরগুলো হল : ০১৭৮০৯৩২৭১৭, ০১৬১৪৫৮৯১১১, ০১৮৪১৫৯৭০০৩
যোগাযোগ করা যাবে [email protected] GI।
এ টিমের সভাপতি মো. রাজু আহমেদ বলেন, ২০২০ সাল থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার উদ্ধারে কাজ করছে তার দল। অন্তত ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের চার হাজার সাপ উদ্ধার করেছেন তারা। তিনি বলেন, এমনভাবে ছড়ানো হচ্ছে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে সাপ, এতে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। বিষের দিক দিয়ে সাপটি বিশ্বের ৩০তমও নয়, দেশের মধ্যে পাঁচটি বিষধর সাপের পরে থাকবে। স্থানীয়রা একটু সচেতন থাকলেই হবে, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এটা শান্ত, লাজুক ও অলস ধরনের সাপ। এটা তেড়ে এসে কামড়ায় না। তার রেঞ্জে পেলে দ্রুত আক্রমণ করতে পারে। এ সাপ মারা উচিত নয়। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম