প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রিতে প্রথম স্থান অর্জন করেও চাকুরি না পাওয়া
হাইমচরের জাকির হোসেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার প্রত্যাশী
চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০১৫ সালে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রিতে প্রথম স্থান অর্জনকারী হাইমচরের জাকির হোসেনের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বেকারত্ব ও দরিদ্রতা ম্লান করে দিচ্ছে। হাইমচরের মেঘনা নদীর ভাঙ্গনগ্রস্থ নীলকমলের অবহেলিত ঈশানবালার নিভৃত পল্লির চরাঞ্চলে ১৯৮৮ সালে জন্ম নেয়া জাকির হয়তো ভেবেছিলো লেখাপড়া করলেই তার ও তার পরিবারের জীবনের মোড় ঘুরে যাবে। কিন্তু নিয়তির কী পরিহাস! দেশে উচ্চপদস্থ তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই বলে শত চেষ্টা করেও তার একটি চাকুরি মিলেনি। অনেক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। উচ্চতর ডিগ্রির বিষয়টি আড়াল করে ছোট পদে আবেদন করে শেষ পর্যন্ত নগদ কড়ির যোগান দিতে না পারায় চাকুরি হয়নি।
বর্তমানে দরিদ্রতা ও বেকারত্ব তার জীবনকে অভিশপ্ত করে তুলছে। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করার জন্যে গণমাধ্যমের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন। জাকির হোসেন ঈশানবালার উত্তর চরকোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপনী শেষ করে নীলকমল ওচমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াবস্থায় লজিং জীবন শুরু করেন। এ সময় তিনি নিজ উদ্যোগে সারাদিন স্কুল ও টিউশনি করে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যান। এভাবে বছরের পর বছর পরিশ্রমের ফলে ২০০৫ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেন এবং ২০১৪ সালে ৪ বছর মেয়াদি অনার্স হলেও ৭ বছরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স কমপ্লিট করেন। ২০১৫ সালে এমএসএস (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) উচ্চতর ডিগ্রি নেন ও প্রথম স্থান লাভ করেন। অতঃপর যুব উন্নয়নের ৬ মাসের কম্পিউটারের ওপর একটি প্রশিক্ষণ কোর্সও করেন। এরই মধ্যে ৯-১০ বার নদীভাঙনে জাকিরের পরিবারটিও সবদিক থেকে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। তার বাবা মৃত ইমান হোসেন খান ছিলেন নীলকমল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একজন কর্মচারী। মা জীবনী বেগম ৯০ বছরের একজন বৃদ্ধা। নদী ভাঙনের কারণে তার পরিবারটি বর্তমানে অসহায় ও ভিটেমাটিহীন। তারা ৬ ভাই ও ৪ বোন। ভাইয়েরা যার যার পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছে। সারা জীবন তিনি পার করেছেন লজিং আর টিউশনি করে। বাবার সামান্য পেনশনের টাকা থেকে মায়ের দেয়া অর্থ দিয়ে সময় সময় বিভিন্ন পরীক্ষার ফি ও ভর্তির কাজে ব্যবহার করেছেন।
১৯৯৯ সালে লেখাপড়া ত্যাগ করে বিদেশ পাড়ি জমানোর ইচ্ছা করলেও অর্থের অভাবে তাও হয়নি। ফলে শিক্ষাকেই প্রধান অবলম্বন মনে করে লেখাপড়া চালিয়ে সবার নিরন্তর চেষ্টা শুরু করেন। ইতোমধ্যে জাকির হোসেন বেসরকারিভাবে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরি করেন কিছুদিন। কিন্তু অর্থনৈতিক বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দেয়া ও অনৈতিকতার চাপে কাজ না করে অবশেষে চাকুরিটি ছেড়ে দেন। কলেজ জীবনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী সংগঠন বাংলাদেশে ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে ঈশানবালা ও নীলকমল ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। তার বাবাও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের বাড়িতে অনেক হিন্দু পরিবারের সদস্য আত্মগোপন করেছিলেন। ফলে তাদের থাকাণ্ডখাওয়ার দায়িত্ব বহন করতে হয়েছে। এক সময় তাদের পরিবারের জমি-জমা, হালের বলদ ও গোলায় ছিলো ধান। কিন্ত মেঘনা নদীর করাল গ্রাস বার বার তাদের পরিবারটিকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী জাকির হোসেন অত্যন্ত হতাশার সাথে বলেন, আশায় আশায় সরকারি চাকুরির বয়স শেষ। এখন হতাশা আর অনিদ্রাগ্রস্ত জীবন তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তুলেছে। দরিদ্রতার প্রতিকূলতাকে এড়িয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও একটি চাকুরি পাচ্ছি না। কারণ চাকুরি পেতে হলে প্রয়োজন নগদ বড় অংকের টাকা। অন্যদিকেও বিদেশেও যেতে পারছি না নগদ অর্থের অভাবে। এখন জীবনের জন্যে প্রয়োজন একটি কর্মসংস্থান বা চাকুরি। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্যে একজন অসহায় নাগরিক হিসেবে একটি কর্মসংস্থানের প্রত্যাশায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সাক্ষাৎকারে বিনীত আবেদনটুকু পেশ করতে চান। তার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে বললেই তার একটি স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার উদাত্ত কামনা রইলো। তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে মোবাইল নাম্বার হলো-০১৮৪২-৫৬২ ৭০৮।
লেখক : আবদুল গনি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।