প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রাতে মতলবের মেঘনায় প্রভাবশালীদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের অস্তিত্ব ধংসের মুখে
চলমান ৩শ’ ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার পুনঃমেরামত ও সংস্কার কাজ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা
রাতে মতলব উত্তরের মেঘনা নদীতে প্রভাবশালীদের মদদে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। চাঁদপুরের নৌ পুলিশের অভিযানে বালু উত্তোলনকারী চক্র ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে যায়, পরে আবার ফিরে আসে। ফলে বাহাদুরপুর গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প অস্তিত্ব ধ্বংস এবং ৩শ’ ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পাউবোর তীর সংরক্ষণ কাজ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মতলব উত্তরের মোহনপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের এলাকাবাসী জানান, দশানী এলাকায় মেঘনা নদীতে গত ক’দিন ধরে রাতের বেলা প্রভাবশালীদের মদদে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ৮/১০ টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা বলেন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, গুলিবর্ষণ, লুটতরাজ, ডাকাতি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী চিহ্নিত ক’জনের নেতৃত্বে প্রতিদিন রাতে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ দশানীর মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে অবৈধ বালু উত্তোলনের নিকটবর্তী বাহাদুরপুর গ্রামের মানুষের মাঝে ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মেঘনা নদীর দশানী এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দেশের অন্যতম বৃহৎ মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের অস্তিত্ব ধংস হয়ে যাবে বলে সচেতন মহল মনে করেন। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ৩শ’ ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষণ, স্লোব প্রতিরক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ পুনঃমেরামত, মাঠ ও নালা পাকাকরণসহ চলমান উন্নয়ন কাজ ভেস্তে যাবে। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ধান চাষাবাদ ব্যাহত হবে, ধানের উৎপাদন কমে যাবে ও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাহাদুরপুর গ্রামসহ নদীর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী তাদের ভিটেমাটি রক্ষায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে যোগাযোগ করলে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বিষয়টি জানার পর তা বন্ধের জন্যে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাকে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়নতু পাল জানান, মতলবের মেঘনায় বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানার পর এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের নির্দেশ দিয়েছি। অবৈধ বালু উত্তোলনের সত্যতা পাওয়া গেলে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প রক্ষায় তা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয় জানার পর গত ২ দিন নৌ পুলিশ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালিয়েছে। পুলিশ দেখে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে যায়। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে নৌ পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মতলবের মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার সাব লেঃ মোঃ ফজলুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানাতে বলেন। জেলা প্রশাসক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিলে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মতলবের মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।