প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে চলাচলের রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এর ফলে গত দুই মাস ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা। বাইরে বেরোতে না পারায় কষ্টে দিন কাটছে এসব পরিবারের লোকজনের। ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের লাড়ুয়া এলাকার এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফরিদগঞ্জ থানা এবং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত ওই অবরুদ্ধ পরিবারদের অভিযোগের সমাধান করতে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ।
লাড়ুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ রহমতউল্লাহ ও তার লোকজন ৮/৯টি পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে বাঁশ ও টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। এ অবস্থায় ৮/৯ পরিবারের নারী-শিশু সহ সকলে টানা দুই মাস ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। এই আট-নয়টি পরিবারের স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকসহ অন্যরা বর্তমানে আরেকজনের জায়গার ওপর দিয়ে বিধি-নিষেধকে উপেক্ষা করে হাঁটাচলা করছেন। জানা যায় তাদের বাড়িতে ঢোকার রাস্তা না থাকায় বর্তমানে আত্মীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের বিরোধ চলে আসছিলো। কিন্তু স্থানীয়ভাবে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানসহ অন্যরা সমস্যার সমাধান করতে চাইলে অভিযুক্ত রহমতউল্লাহর আন্তরিকতা না থাকায় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় নি। বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ হলেও রহমতুল্লাহর আন্তরিকতা না থাকায় সেখানেও সমস্যা সমাধান হয়নি।
অভিযোগের বাদী মোঃ মমিনুল ইসলাম বলেন, আমি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। রহমত উল্লাহ যে পথে বেড়া দিয়েছেন সেটি ৮০/৯০ বছর আগের পুরানো পথ। আমার দৈনন্দিন স্কুলে যাওয়া এবং বাড়ির ৮ থেকে ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যদের বাইরে আসা-যাওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যের জায়গার ওপর দিয়ে বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে গত দুই মাস কোনোমতে আসা-যাওয়া করছি। তিনি আরো বলেন, রহমতুল্লাহ একজন বড় মাপের মামলাবাজ। ইতিপূর্বে তিনি আমাদের বাড়ির এবং এলাকার বিভিন্ন জনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অসংখ্য অভিযোগ আছে।
অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নাসির উদ্দিন ও শাহজালাল জানান, রহমতুল্লাহ আইন আদালত, এলাকার সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান, থানা, ইউএনও প্রশাসন কারোই কোনো মূল্যায়ন করেন না। তিনি এলাকায় মামলাবাজ নামে পরিচিত। ইতিপূর্বে তিনি এলাকার অনেকের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। তারা আরো বলেন, গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ রয়েছে। বাইরে বের হতে পারছি না। এমনকি বাজারও করতে পারছি না। আমাদের স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে আমাদের। এই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
আত্মীয়-স্বজনদের দেখতে এসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ উল্লাহ আল আমিন জানান, বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার পর একাধিকবার চেষ্টা করেছি সমাধান করে দেয়ার জন্যে। কিন্তু অভিযুক্ত রহমত উল্লাহর আন্তরিকতা না থাকায় এ সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হই। অবরুদ্ধ এই পরিবারগুলোর অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্যে বাইরে যেতে পারছেন না। ওষুধপত্র ও বাজার করার প্রয়োজন পড়লেও তারা বের হতে পারছেন না।
বাড়ির বয়োবৃদ্ধ ও সেনাবাহিনীর সাবেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালীউল্লাহ বলেন, মামলাবাজ রহমত উল্লাহ যে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন, সেটি ৮০/৯০ বছরের পুরানো এজমালি রাস্তা। তিনি তার নিজ মর্জিমত কাজ করেন। এলাকার কোনো ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি থানা, উপজেলা প্রশাসন কারোরই কোনো তোয়াক্কা করেন না। তিনি একটি দলের পরিচয় দিয়ে এসব করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার এসবের কারণে ওই দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোঃ রহমত উল্লাহ বলেন, মমিনুল ইসলাম গং বিভিন্ন দাগে আমার জমি দখল করেছে। তাই আমার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করেছি। যেখানে বন্ধ করেছি সেখানেও আমার জায়গা আছে।
স্থানীয় ১০নং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে বারবার চেষ্টা করার পরেও রহমতুল্লাহর খামণ্ডখেয়ালিপনার কারণে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি তার ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে লিখিত আকারে অপারগতা প্রকাশ করে বাদীকে একটি লিখিত প্রতিবেদন দেন।
বিষয়টি নিয়ে মতামত জানতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমুন নেছার মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।