শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর-২ আসনে ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাসদ নেতা আবুল হোসেন
অনলাইন ডেস্ক

কুমিল্লা জেলার মতলব থানা স্বাধীনতাত্তোর সময়কাল থেকেই নানা কারণে দেশে বেশ পরিচিত ছিল। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শস্য উৎপাদন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ অঞ্চলটি জন্ম দিয়েছে এক সমৃদ্ধ জনপদের। তাছাড়া দেশের প্রধান নদ-নদীগুলো মতলবের বুক চিরে বয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। নদীগুলো বন্যার পানির সাথে পলিমাটি বহন করে এতদঞ্চলের জমিকে দিয়ে গেছে চরম উর্বরাশক্তি। তাই তৎকালীন সময়ে ধান,পাট ও অন্যান্য শস্য উৎপাদনে মতলব ছিল যথেষ্ট এগিয়ে। খাল-বিল, নদী ও পুকুর ভরা ছিল হরেকরকমের সুস্বাদু মিঠাপানির মাছে। এমনি সোনালি এক সময়ে ১৯৭২ সালে মতলব থানার এখলাছপুর ইউনিয়নের হাশিমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার খান বাড়ির মফিজুল ইসলাম ও আফিয়া খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেন আবুল হোসেন খান। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে আবুল হোসেন ভাই-বোন সবার মধ্যে দ্বিতীয়।

শৈশব : শৈশবে আবুল হোসেন খান খুবই দুরন্ত স্বভাবের ছিলেন। দিনমান খেলাধুলা, ছুটোছুটি, মাছ ধরা, হৈচৈ করেই সময় কাটতো তাঁর। সমবয়সি বন্ধুদের থেকে দৈহিক সক্ষমতা ও উপস্থিত বুদ্ধি অনেকটাই বেশী ছিল তাঁর। বস্তুত শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্ব গুণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বাড়ির পাশে খাল বিল, ছোট নদী থাকায় জলের সাথে খেলেই শৈশব কেটেছে তাঁর।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়িতেই এক চাচীর কাছে অক্ষরজ্ঞানের হাতে খড়ি হয় তাঁর। এরপর শিশুশ্রেণি বা তৎকালীন ছোট ওয়ানে ভর্তি হন হাশিমপুর ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। ঐ সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ফ্রি প্রাইমারি স্কুল নামেই অভিহিত করা হতো। স্কুলে তিনি কয়েকজন ভালো সহপাঠী পেয়েছিলেন, যাদের সাথে তাঁর তীব্র প্রতিযোগিতা হতো। ফলে শুরু থেকেই পড়াশোনার একটি পজিটিভ পরিবেশ পান আবুল হোসেন। তাছাড়া ঐ সময়ে অতুল চন্দ্র মজুমদার নামে একজন শিক্ষক ছিলেন তাঁদের স্কুলে যিনি সময়ের চেয়ে কমছে কম পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিলেন। পড়াশোনা, দক্ষতা, নিবেদন, প্রগতিশীলতা, মানবতা, শিল্পমনস্কতা, স্মার্টনেস ইত্যাদি বিষয়ে তিনি বর্তমান সময়ের প্রাথমিক শিক্ষকদের থেকে বহুগুণ এগিয়ে ছিলেন। সব কিছু মিলিয়ে আবুল হোসেন একটি শক্তপোক্ত প্রাথমিক শিক্ষার ভিত পেয়ে নিজে তাঁর সুবিধা ষোলআনা উপভোগ করেছেন। হাশিমপুর স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণির কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এখলাছপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৮৮ সালে বিজ্ঞান শাখা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন আবুল হোসেন। উল্লেখ্য, সে বছর এখলাসপুর হাই স্কুল থেকে শতাধিক পরীক্ষার্থীর মাঝে মাত্র ছয়জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল।

উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায় এবং রাজনৈতিক জীবন : এসএসসিতে ভালো ফলাফল করলেও আর্থিক অসুবিধার কারণে নামিদামি কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারেন নি আবুল হোসেন খান। তা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি তোলারাম কলেজে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি'তে ভর্তি হন তিনি। উল্লেখ্য, ঠিক ঐ সময়ই পদ্মা ও মেঘনার মিলিত প্রবাহের করাল গ্রাসে হাশিমপুর গ্রামের পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় । কৃষক বাবা সর্বস্ব খুইয়ে চরম আর্থিক দুরবস্থায় নিপতিত হন। আর তাই মাধ্যমিক শিক্ষার শেষ দুটি বছর ও পরবর্তী জীবনে শিক্ষা গ্রহণ যাবতীয় দায় নিজের দায়িত্বেই সম্পন্ন করতে হয় তাঁকে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার চাপ সামলেও ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। আবার ঠিক এ সময়টাতেই তিনি যোগ দেন প্রগতিশীল বাম ঘরানার একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনে। সংগঠনটির নাম বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল ( বাসদ - মাহবুব)। বাসদ মাহবুবের ছাত্র সংগঠন বাসদ ছাত্রলীগে সক্রিয় রাজনীতির মাধ্যমে তার শৈশবের নেতৃত্বগুণ জেগে উঠে। সহসাই তিনি সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব লাভ করেন। এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদে বাসদ ছাত্রলীগের হয়ে কাদের-ফরহাদণ্ডআবুল পরিষদে এজিএস পদে নির্বাচন করে সামান্য ভোটে পরাজিত হন। নির্বাচনের কিছু দিন আগে প্রার্থী সংকটে পড়ায় বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে এজিএস পদে নির্বাচনের প্রস্তাব পান। বিএনপি-জামাত জোট তথা স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠনের সাথে ছাত্রদলের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তিনি ঘৃণাভরে উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের লক্ষ্যে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হয়ে এবং নিজ সংগঠন বাসদের হয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের রাজপথের এক লড়াকু সৈনিকে পরিণত হন। রাজনৈতিক কারণে এরশাদ জমানায় তিনি বেশ কয়েকবার স্বল্প সময়ের জন্য কারাবাসের শিকার হন। নিজের পড়াশোনা, রাজনীতি, ছাত্র পড়ানোর চাপ সামলে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে অল্পের জন্য প্রথম বিভাগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক ব্যস্ততা বেড়ে গেলে তিনি স্নাতক পর্যায়ে বিএসএস শাখায় ৩০০ নম্বরের ইংরেজি নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

স্নাতকোত্তর, এলএলবি ডিগ্রি অর্জন ও কর্মজীবন : স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, শ্রীপুর, গাজীপুর শাখায় মাঠ কর্মকর্তা পদে চাকুরি নেন। এরপর কিছুদিন এই চাকুরিতে থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ইতোমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরি পেয়ে যান। পোস্টিং হয় মতলব উত্তরের বাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এনজিওর সুযোগ সুবিধা বেশী থাকা সত্ত্বেও পিতার আগ্রহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৯৯ সালে। একদল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেন খানের সময়কালে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োজিত হন। শীঘ্রই আবুল হোসেন খান এই নবনিযুক্ত শিক্ষকগণের মধ্যমণিতে পরিণত হন। পুরোনো আমলের কায়েমি স্বার্থবাদী শিক্ষক নেতাদের অশিক্ষকসুলভ ও শিক্ষক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড তাঁকে ব্যথিত করে। সহসাই সমমনা কয়েকজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে আবুল হোসেন তৈরি করেন নতুন একটি গ্রুপ। পুরোনো দিনের স্বার্থবাদী নেতারা আবুল ও তাঁর বন্ধুদের উপর দারুণ কুপিত হয়ে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের এমপির মাধ্যমে তাঁদের কয়েকজনকে হয়রানিমূলক বদলি করেন। এ সময় আবুল হোসেন খান অত্যন্ত ঠাণ্ডামাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করে বদলি ঠেকিয়ে পুরোনো কর্মস্থলে ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে তিনি নারায়ণগঞ্জ 'ল কলেজ থেকে এলএলবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বার কাউন্সিলে সনদ গ্রহণের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ভাইবায় অংশ নেয়ার দিনক্ষণ গুণছিলেন। বিভাগীয় পরীক্ষার্থী হিসেবে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভ করা যখন সময়ের ব্যবধান ঠিক এ সময়েই ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ডিভি লটারি জিতে আমেরিকার নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে সপরিবারে দেশত্যাগ করেন আবুল হোসেন খান।

জীবনের নতুন অধ্যায় ও সমাজসেবা : আমেরিকায় থিতু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সমাজসেবার মাসনে গঠন করেন আবুল হোসেন খান ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে কাজ শুরু করেন। মতলব উত্তরের প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেন এককালীন শিক্ষা বৃত্তি। এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করে চলছেন সাধ্যমতো। ঈদ, রোজাসহ নানা উৎসব পার্বণে দান করেন খাদ্য সামগ্রী। শীতবস্ত্র, গরিব ছাত্রদের বইপত্র, সামাজিক সাহায্য, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা সাহায্য, এলাকার বিদ্যালয় সমূহের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, তরুণদের শিক্ষা সফর, ক্রীড়া উপভোগ, পুনর্মিলনীসহ নানা উপলক্ষে সহায়তা দিয়ে আসছেন নিয়মিত।

স্বপ্ন : আবুল হোসেন খান স্বপ্ন দেখেন একদিন তাঁর এলাকার মানুষ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভেঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য, গণতান্ত্রিক অধিকার, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে দেশে অগ্রগণ্য নাগরিক হিসেবে পরিচিত হবেন এবং ক্ষুধামুক্ত, বৈষম্যহীন, সবুজ পৃথিবী বিনির্মাণে তাঁর সারথি হিসেবে একযোগে কাজ করবেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যম : একমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমেই মানুষের জীবনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব। আর তাই মানুষকে স্বীয় অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তাদেরকে রাজনীতি সচেতন করতে হয়। বিক্ষিপ্ত সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদারিত্ব। দীর্ঘদিন প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত থাকায় এবং এনজিওতে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করায় আবুল হোসেন খান সমাজ পরিবর্তনে করণীয় হিসেবে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। আর তাঁর এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে তিনি অঙ্গীকারাবদ্ধ। আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম অংশীদার জাসদ (ইনু) থেকে তিনি চাঁদপুর -২ ( মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনে মনোনয়ন পেতে আশাবাদী। জোটের মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঘনিষ্ঠজনদের কাছে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আর তাই যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে, শিক্ষিত, সুরুচিবান, মানবতাবাদী একজন মানুষ হিসেবে আপনাদের মূল্যবান মতামত ও সমর্থন আবুল হোসেন খান প্রত্যাশা করেন। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়