প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২২, ০০:০০
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের সহযোগিতায় চাই শিক্ষাখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শীর্ষক মতবিনিময় সভা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কাক্সিক্ষত অর্জন না হলেও করোনাকালীন দুই বছর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত ছিলো। ভার্চুয়ালি পাঠদান ও সরাসরি পাঠদানের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সরকার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। হয়তো এমন একটা সময় আসবে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আগ্রহের মাধ্যমেই ক্লাসে আসবে। তখন আর উপবৃত্তির প্রয়োজন হবে না। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী শর্ট সিলেবাসে পাঠদান চলছে। শিক্ষকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে নেওয়ার জন্য। আশা করছি, শিক্ষা ব্যবস্থা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। করোনাকালীন অনেকেই ঘরে বসে থাকলেও শিক্ষকরা ঘরে বসে ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রহমতে আমরা করোনার বিদায় ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। ২ মার্চ ২০২২ থেকে স্কুল খুলবে। শিক্ষার্থীদের কীভাবে পুনরায় স্কুলমুখী করা যায়, কীভাবে তাদেরকে আবার পাঠে ফেরানো যায়, ঝরে পড়া রোধ করা যায় এজন্যে তিনি সনাকের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, করোনকালীন সনাকের সাথে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের সভা বন্ধ ছিলো না। যে ৭টি বিদ্যালয়ে একটিভ সিটিজেন গ্রুপ গঠন করা হবে সেই বিদ্যালয়গুলোর একটিভ সিটিজেন গ্রুপকে সহযোগিতা করার জন্য সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। তিনি সনাকের এ পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকবৃন্দ যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে একটিভ মাদার্স ফোরামকে সক্রিয় করা সম্ভব। তিনি এ ব্যাপারেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রতিটি ক্লাস্টারে অন্তত একটি স্কুলকে মডেল ধরে একটিভ মাদার্স ফোরামকে সক্রিয় করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলার মডেল স্কুলগুলোতে একটিভ মাদার্স ফোরামকে সক্রিয় করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি আশা করছি করছি স্কুল খোলার পর শিক্ষকরা খুবই আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে। আমরা সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশে আবার নতুন করে শুরু করতে পারবো এই প্রত্যাশা করছি। তিনি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দীন আহাম্মদ বলেন, করোকালীন সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠদানে সক্রিয় রাখা। তিনি বলেন, এই সময়টাতে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা শিক্ষায় চলে গেছে। আবার দেখা যাবে, স্কুল খুললে তারা পুনরায় মাদ্রাসা শিক্ষা ছেড়ে প্রাথমিকে চলে আসবে। এজন্যে শিক্ষার্থীদের যেকোন একটাতে নিয়মিত হওয়ার জন্য প্রচারণা করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি বেড়ে গেছে। এই আসক্তি থেকে মুক্ত করার জন্য অভিভাবকদের তাদের করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা, স্থানীয় পত্রিকায় প্রচারণা করা, ক্যাবল নেটওয়ার্কে প্রচারণা করা কিংবা লিফলেট তৈরি করেও প্রচারণা করা দরকার। তিনি আরও বলেন, একটিভ সিটিজেন গ্রুপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী কাজ করবে তার একটি প্লান তৈরি করার জন্য সনাকের প্রতি আহ্বান জানান এবং প্লানের একটি কপি শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলের সহযোগিতা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, করোনাকালীন ঝরে পড়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অ্যাকটিভ মাদার্স ফোরামকে আরো বেশি কার্যকর করার জন্যে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়াও যে ৭টি স্কুলে একটিভ সিটিজেন গ্রুপ গঠন করা হবে সেই গ্রুপগুলোকে কাজের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ছিলো। স্কুল খোলার পর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কীভাবে স্কুলমুখী করা যায় সে ব্যাপারেও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত দুবছর আমরা একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছি। আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষার্থীদের কীভাবে স্কুলমুখী করা যায়। তিনি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
মতবিনিময় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য মোঃ আলমগীর পাটওয়ারী। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোসাম্মৎ রাবেয়া আক্তার, মানছুর আহমেদ, উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফওজিয়া আকতার, উত্তর তরপুরচ-ী কাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোদেজা বেগম, উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শাহজাহান সিদ্দিকী ও ইয়েস গ্রুপের সহ-দলনেতা নাঈমা ফেরদৌসী। সভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ ইলিয়াছ ও মোহাম্মদ আবদুল হাই, ইয়েস গ্রুপের দলনেতা খায়রুল আলম, সহ-দলনেতা টিপু সুলতান, সদস্য তানজিনা আক্তার ও মোঃ আলআমিন খান।