প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
হোটেল বয়ের কাজ করা আরিফ হোসেন (১৮) চলতি বছর অনুষ্ঠিতব্য আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছেন। পরীক্ষার জন্য আসছে ৩০সেপ্টেম্বর হোটেলের চাকুরি ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়িতে থেকে একটু ভালো প্রস্তুতির জন্যে চাকুরি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আরিফ নিজেই। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসার গ্রামের মরহুম আলহাজ্ব হজরত মাওলানা আঃ রহিম সাহেবের বাড়ির শাহ আলম মিজির ছেলে। হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ বিশ্বরোড চৌরাস্তা এলাকার মোহাম্মদিয়া হোটেলে কাজ করেন। নওহাটা ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলীম পরীক্ষার্থী তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরীক্ষার পড়ার জন্যে চাকুরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আরিফ। চাকুরির সময় রাতে হোটেলের রুমে যখনই সময় পেয়েছেন, তখনই কষ্ট করে পড়তেন তিনি। পরীক্ষার প্রস্ততি বেশ ভালো বলে জানায় আরিফ। আরিফ দাখিলে জিপিএ-২.৬ পেয়েছে। আলিমে আরো ভালো ফল হবে বলে আশাবাদী তিনি। চাকুরিটা তাকে ভালোভাবে পড়ালেখার সুযোগ করে দিতে পারেনি। গরীব বলে তার যতো কষ্ট। তবে হোটেলের মালিক ভালো। তাই হয়তো কাজের পাশাপাশি পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে জানায় আরিফ।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, আরিফ ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার ছোট। বড় বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ভাইদের মধ্যে বড়রা সবাই সবার মতো চলছে। বাবা অসুস্থ ও বেকার। আরিফ নিজে বাবা-মাকে দেখাশোনা করেন। হোটেলে চাকুরি করে মালিকের ওপর খেয়ে ৭ হাজার টাকা বেতন পেতেন। এই টাকা বর্তমান সময়ে কিছুই না। তারপরও তার জন্য এই টাকাই বেঁচে থাকার অবলম্বন। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য চাকুরি ছেড়েছেন ঠিকই কিন্তু পরীক্ষা পর্যন্ত কীভাবে চলবেন এটা নিয়েই এখন আরিফের মাথা ব্যথা।
কর্মস্থল মোহাম্মদীয়া হোটেলে কথা হলে আরিফ তার এই বয়সের ব্যাপক চরাই-উৎরাইয়ের কথা অনায়াসে জানান। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় ৮/১০ জন কৃষকের মতো অন্যের জমিতে দিনমজুরি প্রাপ্তির হিসেবে কৃষি কাজ শুরু করেন। সেই থেকে অন্যের কাজ করে করে পড়ালেখার পাশাপাশি বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন। মাঠে কৃষি কাজের পাশাপাশি ধান মাড়াইয়ের মেশিনে কাজ করেছেন বহুদিন। কাজ আর পড়ালেখা নিয়ে বাড়ির পাশে নওহাটা ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন। আলিমে ভর্তি হন একই মাদ্রাসায়। করোনায় মাদ্রাসায় তেমন একটা যেতে হয়নি। তাই কৃষি কাজ ছেড়ে খাবার হোটেলে বয়ের চাকুরিতে যোগ দেন আরিফ।
আরিফ আরো জানান, ১ হাজার টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেছি। পড়ালেখা করতে গিয়ে মাদ্রাসা থেকে কিতাব পেয়েছি আর শিক্ষকদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছি। তবে প্রয়োজনীয় সুযোগ পেলে হয়তো অনেক ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারতাম। হোটেলে সারাদিন কাজ করার পর পড়ার জন্যে শরীরে আর শক্তি থাকে না। আরিফ বলেন, আমি সুযোগ পেলে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পড়ালেখা করবো। প্রয়োজনে আরো পরিশ্রম কববো, কোনো সমস্যা নেই আমার জন্য।
আরিফের প্রতিবেশী ও বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, আরিফকে বিনা বেতনে পড়ার জন্যে নওহাটা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বলা আছে। তার বাবা অসুস্থ থাকায় তাকে ১০ টাকা কেজির চাল ও আরো আগে কার্ড দেয়া হয়েছে।