বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

বিদেশ পাঠানোর নামে পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে দালাল উধাও

ফরহাদ চৌধুরী ॥
বিদেশ পাঠানোর নামে পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে দালাল উধাও

স্পেন, মাল্টা, পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে চাঁদপুর জেলার কয়েকটি গ্রামের অর্ধ শতাধিক যুবকের কাছ থেকে প্রতারণা করে ৫ কোটি টাকারও বেশি নিয়ে উধাও হয়েছে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের প্রবাস ফেরত মোঃ হান্নান মিয়া ও তার ছেলে স্পেন প্রবাসী সুলতান ওরফে রুবেল। বৈধভাবে ভিসার মাধ্যমে স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিবে বলে প্রত্যেক যুবক থেকে হাতিয়ে নেয় ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে।

প্রতারকরা কন্ট্রাক্ট করে অর্ধ শতাধিক যুবককে প্রথমে নেয় দুবাই। দুবাই থেকে সাউথ আফ্রিকা হয়ে নেয়া হয় মরোক্কোর মৌরতানিয়া। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন কারোরই ভিসা হয় নি। তখন বাবা-মায়ের শেষ সম্বল বিক্রি করা যুবকরা ভাগ্যোন্নয়নে স্বপ্নের স্পেন যাওয়ার জন্যে প্লাস্টিক নৌকা দিয়ে জীবনবাজি রেখে অবৈধভাবে উত্তাল সাগর পাড়ি জমান। সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকে নিখোঁজ হয়ে যান।

নিখোঁজ হওয়াদের অন্যতম কচুয়া উপজেলার কাদলা ইউনিয়নের দোঘর গ্রামের স্বর্ণকার বাড়ির জিতু মিয়ার ছেলে ইমাম হোসেন। তাকে স্পেন পাঠানোর জন্যে দালাল সুলতান ওরফে রুবেল ও তার বাবা হান্নানকে ১৮ লাখ টাকা দেন। তিন মাস পরে স্পেন যাওয়ার উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ইমাম হোসেন বাড়ি ত্যাগ করেন। মৌরতানিয়া যাওয়ার পর ইমাম হোসেন জানতে পারেন তার নামে কোনো বৈধ ভিসা নেই। তাকে জীবনবাজি রেখে ৯৬ ঘণ্টা শুকনো খাবার খেয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেন যেতে হবে। ৫ মাস মৌরতানিয়া অপেক্ষা করে ইমাম হোসেন জমিজমা, স্বর্ণালঙ্কার, গরু-ছাগল বিক্রি ও ঋণের কথা চিন্তা করে গেমের মাধ্যমে গত ২৪ মে রওনা হন স্পেনের উদ্দেশ্যে।

২৭ সেপ্টেম্বর ইমাম হোসেনের নিখোঁজ হবার বিষয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাংবাদিকসহ প্রতারক দালাল রুবেলের পিতা হান্নান মিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামে যান। তারা গিয়ে দেখতে পান, প্রতারকরা সকলে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পলাতক রয়েছেন।

স্বামীর নিখোঁজ অবস্থায় ইমাম হোসেনের স্ত্রী রেহানা আক্তার রুমি তার তিন সন্তানকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। নিখোঁজ ইমামের ২ বছরের ছোট ছেলে সাইদুল ইসলাম বাবার কথা মুখে বলতে না পারলেও নীরবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

ইমাম হোসেনের বড়ো ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া শফি আহমেদ ও একমাত্র ৪ বছরের কন্যা সাইফা ইসলাম বাবাকে মনে করে কেবল কাঁদে।

ইমাম হোসেনের পিতা জিতু মিয়া ছেলের কথা বলতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। ইমামের স্ত্রী রেহানা আক্তার রুমি জানান, আমার স্বামী অনেক টাকা ঋণ করে গেছেন। একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে আমার স্বামী নিখোঁজ রয়েছেন। আমি তিন সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো? আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।

দালাল সুলতান ওরেফে রুবেলের আপন চাচাতো ভাই মামুন বলেন, আমি সৌদি আরব ছিলাম। ওইখান থেকে প্রলোভন দেখিয়ে দেশে এনে আমাকেও বৈধ ভিসার মাধ্যমে স্পেন নেবে বলে আমার কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়েছে। আমার পরিবার এই দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সে রেহাই দিলো না আপন চাচাতো ভাইকেও।

নিখোঁজ ইমাম হোসেনের পরিবারের সদস্যরা আরো জানান, দালাল আমাদের কাছ থেকে বহু সময় নিয়েছে এবং টাকা দিবে বলে প্রতারণা করেছে। বহুবার সময় দেয়ার পর আমরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক নিয়ে জুম্মার নামাজের পর মসজিদে গ্রামবাসীর নিকট বিচার দেই এবং গ্রামবাসী আমরা বিচার পাবো বলে আশস্ত করেন। এ বিষয়ে ইমাম হোসেনের পরিবার চাঁদপুর বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়