প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হাজীগঞ্জে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক নির্মূলে বিএনপির মতবিনিময় সভা
অপকর্মে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না
------ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক
‘সে যেই হোক, অপকর্ম করলে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলি, আমাদের দলীয় কিংবা অন্য যে কোনো লোকের মাধ্যমে কেউ হয়রানি বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাকে ফোন করে জানাবেন, আমরা ব্যবস্থাগ্রহণ করবো’। ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার হাজীগঞ্জে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক নির্মূলকল্পে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক।
হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সভায় ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এরপর ওইদিন থেকে দেশের সকল স্থানে কম-বেশি বিশৃঙ্খলা হয়েছে। ৫ আগস্ট আমার অনুপস্থিতিতে হাজীগঞ্জেও বিক্ষুব্ধ কিছু লোক কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটায়। যা দুঃখজনক। বিষয়টি জানতে পেরে ৬ আগস্ট হাজীগঞ্জে এক জনসভার মাধ্যমে আমি সবাইকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্ক করি। ইতোমধ্যে আমরা দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি। এরপর থেকে আজ ১ মাস ১০ দিন হলো, হাজীগঞ্জে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিংবা অস্বস্তিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, থানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের দুঃশাসন তুলে ধরে ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২শ’ মামলা দায়ের করে ৫০ হাজার নেতা-কর্মীকে হয়রানি করা হয়েছে। এতে আমাদের নেতা-কর্মীরা জেল-জরিমানাসহ পারিবারিক, সাংসারিক, আর্থিকসহ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা রাতে ঘুমাতে পারেনি। সর্বশেষ গত ৪ ও ৫ আগস্ট আমাদের ছাত্রনেতার বাবা আজাদ সরকারকে কুপিয়ে হত্যা, যুবনেতার দোকান লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে আজাদ সরকার, আবুল কালাম আজাদ, হান্নান ও রাছেল বকাউলসহ আমাদের চারজন নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকার দুঃশাসন, গুম, মামলা, হামলা ও লুটপাট দিয়ে শুরু করে এবং হত্যার মধ্যে তাদের ক্ষমতার শেষ হয়। গত ১৭ বছর হাজীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, জায়গা-জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, পরিবহন সেক্টর, হাট-বাজার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি হয়েছে। এতে কোনো প্রতিবাদ, প্রশাসনিক ব্যবস্থা কিংবা প্রচার-প্রচারণাও হতে দেখিনি। এর মধ্যে ডাকাতিয়া নদী খনন ও নদীর পাড় বাঁধাইয়ের নামে ১শ’ কোটি টাকা এবং জেলা পরিষদের মার্কেটে ২১২টি দোকান নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগ।
ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় নেতা প্রাক্তন সাংসদ এমএ মতিন ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। তিনি ছিলেন শিক্ষক ও ক্লিন ইমেজের মানুষ। তাঁর দোষত্রুটি ছিল মানুষের কাছে ক্ষমার যোগ্য। আর মেজর রফিক তিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত। তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা চাঁদাবাজি ও লুটপাট করেছে। কিন্তু বীর উত্তম খেতাবের কারণে সেসব খবর প্রকাশিত হয়নি এবং তাদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থাও নেয়নি। আওয়ামী লীগ যা করেছে, তার চেয়ে পুলিশ আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর বেশি অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে। আমি ভাগ্যবান যে, গত ১৭ বছর মামলা, জুলুম, অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার প্রায় ৫০ হাজার নির্যাতিত নেতা-কর্মীসহ দুই উপজেলার প্রায় ১১ লাখ মানুষের পাশে ছিলাম। তখন কেউ কোনো কথা বলেনি। অথচ গত ৫ আগস্ট আমার অনুপস্থিতিতে ২/৩ জন আওয়ামী লীগ নেতার ক্ষতি হয়। এজন্যে সমালোচনা হচ্ছে। আমি হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিবাসীকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।
নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক বলেন, আমরা প্রশাসন, পুলিশ, ব্যবসায়ী, পর্যটন সেক্টরসহ সকলের কল্যাণে কাজ করতে চাই। এ জন্যে কয়েকটি প্রস্তাব করছি। তা হলো, জনগণের স্বার্থে পরিবহন সেক্টরে সকল চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। হাট-বাজার, সিএনজি-অটোরিকশা, খেয়াঘাট, বালুঘাট, বাল্কহেডসহ সড়ক ও নৌপথের সকল চাঁদা আদায় বন্ধ করতে হবে। বাজার যানজটমুক্ত রাখতে পূর্ব বাজার ব্রিজের পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম বাজার আখড়া পর্যন্ত যানবাহনে যাত্রী উঠানামা করতে পারবে না।
পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনী কাজ করছে। অথচ অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ অফিসার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের যৌথ অভিযানের লিস্টে নাম রয়েছে উল্লেখ করে ভয় দেখায়। এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল দলের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আপনারা টেলিফোন ভয়েস রেকর্ড করে রাখবেন এবং আমাদের অবহিত করবেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। নতুন বাংলাদেশে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, হিন্দু, মুসলমান কারো কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে এক সাথে এবং শান্তিতে বসবাস করবো। কাউকে কোনো অপকর্ম করতে দেবো না। যে করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল খায়ের মজুমদারের সভাপ্রধানে ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব ইমাম হোসেন, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আসফাকুল আলম চৌধুরী, উপজেলা পূজা উদযপন পরিষদের সভাপতি রোটাঃ রুহিদাস বণিক, কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন ও গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল।
এ সময় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ নাফের শাহ, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আকতার হোসেন দুলাল, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ভুট্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাবউদ্দিন শাবু, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক শাহিন মজুমদার, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সুমন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সেলিম, সদস্য সচিব বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী, পৌর বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হাছান রাজনসহ উপজেলা, পৌর বিএনপি ও যুবদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন বেলাল, সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম মিঠু, পৌর আহ্বায়ক মজিবুর রহমান, উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ইমান হোসেন, পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি রাশেদ আলম হীরা, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক এসএম ফয়সাল হোসাইন, সদস্য সচিব জুয়েল রানা তালুকদার, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবু ইউসুফ, সদস্য সচিব দ্বীন ইসলাম টগর, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পরিবহন সংগঠন ও বিভিন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।