রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সমাবেশ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥
দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির সমাবেশ

১৮ আগস্ট বোরবার বেলা দেড়টায় দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে শাহাবাগ মোড় থেকে রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত দুর্নীতি বিরোধী মিছিল শেষে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক, চাঁদপুরের কৃতী সন্তান সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন জাতীয় ব্যক্তিত্ব কাইয়ুম রাজা চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, আ. ব. ম. মোস্তাফা আমীন, আবুল কালাম আজাদ, সেতারা রেজভী লাকী প্রমুখ।

সমাবেশে জনাব সারোয়ার ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ৮ আগস্ট অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্বকারী সৎ সজ্জন নিবেদিত দেশপ্রেমিকগণ উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহণ করায় বীরের জাতি বাঙালি মহান স্বাধীনতার পূর্ণতা পেলো।

সমাবেশে সংগঠনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট ১১ দফা দাবি পেশ করা হয় :

১) রাষ্ট্রের সকল সেক্টর দুনীতিমুক্ত করে প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে যারা আইন অমান্য করেছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশার দলদাস সুবিধাভোগী, লুটেরা, দুর্বৃত্ত, পাচারকারী, জাতীয় বেঈমানদের দেশত্যাগ বন্ধ করার যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশ জোয়ার ভাটার দেশ। আমরা বাঙালি জাতি আবেগপ্রবণ জাতি। আমরা সহজেই সব কিছু ভুলে যাই। দুর্নীতি ও পাচারকৃত টাকা (যে টাকা দিয়ে বাংলাদেশের ৫ বছরের বাজেট করা সম্ভব) উদ্ধার করতে না পারলে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জাতি আর কোনোদিন পাবে না। লুটেরাদের সাথে আপস, দেশত্যাগের সুযোগ জাতি কোনোদিন মেনে নিবে না। যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ (১) অনুচ্ছেদে জনগণকে প্রজাতন্ত্রের মালিক ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২০ (২) অনুচ্ছেদে কোনো ব্যক্তিকে অনুপার্জিত অর্থ ভোগ করতে না দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে; যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে মেহেনতি মানুষ তথা কৃষক, শ্রমিক, অনগ্রসর, সকল জাতিগোষ্ঠীকে সকল প্রকার শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্ত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে এবং যেহেতু মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায় রচিত সংবিধানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি নৈতিক মানবিক সাম্য সামাজিক ন্যায়বিচার ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করার জন্যে স্বাধীনতার পর থেকেই ভ্যাট, ট্যাক্স, চার্জ, ফি, ডিউটি, ইত্যাদি খাতে বাংলাদেশের জনগণ থেকে আদায় করা অর্থ একটি দুর্নীতিবাজ লুটেরা গোষ্ঠী আত্মসাৎ করেছে এবং জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জাতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করেছে, সেহেতু আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধার করে দেশ ও জনগণের সার্বিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থাগ্রহণ করতে

হবে।

২) আইন বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক ও দলীয় শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সকল আদালতে দলদাস অসৎ ব্যক্তিদের সরিয়ে সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।

৩) দেশে ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের মুখে পড়ে আছে। একই পরিবার বা একই ব্যক্তির নিকট ব্যাংক কুক্ষিগত হওয়ার সব সুযোগ বন্ধ করতে হবে। এক ব্যক্তি, এক পরিবারকেন্দ্রিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশের নানা দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপেশাদার ব্যক্তিদের দ্বারা ব্যাংকিং খাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দ্রুত একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে ব্যাংকিং সেক্টরে সংস্কার করতে হবে। এই কমিশন অবশ্যই দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সরিয়ে সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে নিতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে। ব্যাংক সমূহ শূন্য। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থাগ্রহণ করা জরুরি। অর্থ পাচার বন্ধ করতে পারলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ নেয়া বন্ধ করতে পারলে ব্যাংকি খাতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা পাবে।

৪) দুর্নীতি দমন কমিশনকে নতুন করে সাজাতে হবে। দুর্নীতিবাজ আজ্ঞাবহ অসৎ দলদাস ব্যক্তিদের কমিশন থেকে বের করে দিতে হবে। নতুন, সৎ ও যোগ্য নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নতুন করে সাজাতে হবে। রাষ্ট্রে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি। এই সরকারের প্রধান ও অন্যতম কাজ হচ্ছে মহান স্বাধীনতার পর বিগত সরকারের আমলে গঠিত সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির যথাযথভাবে বিচার করা। যাতে দেশ ভবিষ্যতে দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার সকল অন্তরায় দূর হয়।

৫) দেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নিরপেক্ষ, সৎ মানুষ দ্বারা ভারতের আদলে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা আবশ্যক । সরকারি দলের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করতে হবে। সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা প্রধান কাজ। ভুয়া ভোটারদেরকে বাদ দিয়ে সত্যিকার ভোটার তালিকা প্রণয়ন নির্বাচন কমিশনের প্রথম কাজ এবং পরবর্তী সকল নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নিয়ম মাফিক করার শক্তি অর্জন করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব।

৬) দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। দলদাস ব্যক্তিদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল স্তরে আজ দুর্নীতি ও অনিয়মে ভরপুর। দলদাস ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে সৎ সজ্জন, যোগ্য, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। দ্রুত কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তথা উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সংস্কার করতে হবে।

৭) দেশের অন্যতম কমিশন হচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন। যোগ্য ও মেধাবীদের পরিবর্তে দলদাস অসৎ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে বিগত সরকারগুলো সকল সেক্টরে ঘুষ ও দুর্নীতির কারখানা তৈরি করেছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন নতুন করে পুনর্গঠন করতে হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে পরীক্ষা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম চিরতরে দূর করতে হবে।

৮) আমাদের দেশে এখনও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হচ্ছে বস্ত্রখাত তথা তৈরি পোশাক শিল্প। এই খাতে আরও বেশি নীতি সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। ভারতের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। বিশেষ করে স্পিনিং খাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অবিলম্বে স্পিনিং খাতকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে। সুতা আমদানির ওপর নীতি ও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। কোনো আমদানিকারক রফতানির জন্যে ৪০ শতাংশের অধিক সুতা আমদানি করতে পারবে না এই মর্মে আদেশ প্রদান করলে তৈরি পোশাক শিল্প তথা বস্ত্র খাত রক্ষা পাবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। রফতানিও দ্বিগুণ বাড়বে। আমদানি কমে আসবে। তাহলে অসম প্রতিযোগিতা থেকে স্পিনিং খাত রক্ষা পাবে। অনেক স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাতে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। বেকার বাড়ছে। স্পিনিং খাত ও তৈরি পোশাক শিল্প আজ আমাদের একমাত্র ও প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের খাত হওয়া সত্ত্বেও এই খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

৯) আমাদের সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রথম প্রণীত হয়। পরবর্তীতে হয় বহু সংশোধন। বর্তমান সংবিধানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্যতার অভাব আছে। তাই সংবিধান সংশোধন ও সংস্কার প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এজন্যে প্রয়োজন একটি উচ্চ পর্যায়ের শক্তিশালী সংবিধান সংস্কার কমিটি গঠন করা। উক্ত কমিটির পরামর্শক্রমে পরবর্তী সংসদ সংবিধানকে সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করে উপযুক্ত পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। তাতে দেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলসমূহ উন্নতির দিক নির্দেশনা পাবে।

১০) এই চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলা করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে উল্লেখিত চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সৎ যোগ্য প্রকৃত নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

১১) দেশপ্রেমিক ছাত্র- জনতার গণআন্দোলনে হাজারের উপরে ছাত্র- জনতা শহীদ হয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখের কম নয়। উক্ত বিষয়ে জাতিসংঘের অধীন একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে দ্রুত কত নিহত ও আহত হয়েছে তা নির্ধারণ করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা রাষ্ট্রীয়ভাবে করতে হবে। নিহত তথা শহীদ হয়েছে যারা, তাদের পরিবারের জন্যে শহীদের ভাতা চালু করতে হবে। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন সূচনা ও বাস্তবায়ন ও নিষ্ঠুর- নির্মমণ্ডনির্দয়-মর্মস্পর্শী হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়