মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

কোটা নিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করা হয়েছে।

১৪ জুলাই রোববার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করেন।

রায়ে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ, ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে, কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনো বাধা তৈরি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে।

২৭ পৃষ্ঠার রায়ে রিট আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি, ইতিহাস পর্যালোচনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বিপুল সংখ্যক মেধাবী ও যোগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের দৃশ্যপটের আড়ালে ঠেলে দেওয়া হয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অবদান রাখা মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের একটি অংশ যোগ্য-মেধাবী হওয়ার পরও প্রজাতন্ত্রের পরিষেবাগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়নি।

রিটকারী পক্ষের এ যুক্তিতে বিবাদীদের কোনো বিরোধিতা ছিল না উল্লেখ করে রায়ে আরও বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির গর্ব। সুতরাং আমরা মনে করি যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; যা দেশের নাগরিকদের মধ্যে তাদের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশে পরিণত করেছে।

এ কথা ঠিক যে দেশের কিছু জেলা, উপজেলা বেশি উন্নত এবং এসব জেলা-উপজেলার নাগরিকরা বেশি সুবিধা ভোগ করেন। নারী, প্রতিবন্ধী, উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষরা এখানো অনগ্রসর অংশ। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরাও এই অনগ্রসর অংশে বিবেচনায় আসতে পারে। যদিও তাদের অনগ্রসর হিসেবে বিবেচনায় (২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্রে) নেওয়া হয়নি। তাই সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনগ্রসর অংশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন বিবাদীরা।

২০১৩ সালের আপিল বিভাগের রায় তুলে ধরে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সুরক্ষিত ছিল। যেহেতু আপিল বিভাগ ইতোমধ্যে (২০১৩ সালে দেওয়া রায়ে) বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন। সংবিধানের ১১১ ও ১১২ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের সেই সিদ্ধান্ত হাইকোর্টসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল কর্তৃপক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক এবং তা না মানা সংবিধানের লঙ্ঘন।

রায় প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান বলেন, বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় কার্যকর হবে না।

গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে– এ বিষয়ে আপিল বিভাগই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে বুধবার (১০ জুলাই) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের এ রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এসময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন আদালত। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।

এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়