মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নির্মিত আধুনিক ফ্ল্যাট পাচ্ছে হরিজন সম্প্রদায়ের ৮৮ পরিবার

আধুনিক আবাসন পেয়ে আনন্দিত হরিজন সম্প্রদায়

অনলাইন ডেস্ক
আধুনিক আবাসন পেয়ে আনন্দিত হরিজন সম্প্রদায়

চাঁদপুরে এই প্রথমবারের মতো আধুনিক ফ্ল্যাট পাচ্ছেন হরিজন সম্প্রদায়ের ৮৮টি পরিবার। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে সরকার ও ইউএনডিপির অর্থায়নে এই ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়। আধুনিক আবাসন পেয়ে উন্নত জীবনের স্বপ্ন বুনছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর মানুষ। এখান থেকে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের।

বুধবার (১০ জুলাই) সকালে প্রাথমিক পর্যায়ে হরিজন সম্প্রদায়ের ১০ জন সদস্যের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল।

মোরগ ডাকা ভোরে যখন পূর্বের আকাশে উদীত হয় সূর্য, নগরীর অনেকেই তখনো হয়তো ভোরের বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়ায় গায়ে কাঁথায় জড়িয়ে ঘুমে বিভোর। ঠিক তখনি নগর পরিষ্কারের যুদ্ধে নেমে পড়ে একদল মানুষ। সমাজে যারা পরিচিত হরিজন কিংবা পরিচ্ছন্নকর্মী নামে। মহাসড়ক থেকে অলিগলি ও মার্কেট থেকে বাসা-বাড়ি সকল স্থানের ময়লা-আবর্জনা তারা ঝাঁড় দিয়ে পরিষ্কার করে তোলে প্রকৃতি। আগের দিনের ময়লা-আবর্জনায় এটো করে রাখা শহর হয়ে ওঠে পরিষ্কার ঝলমলে।

আশপাশের সকল ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে পরিবেশ আলো ঝলমলে করে তুললেও নিজেদের জীবনটা অন্ধকারে ঘেরা। দিন দিন সমাজ কিংবা রাষ্ট্র সামনে এগোলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাদের যাত্রা আরো পশ্চাতে। তবে আশার বাণী হচ্ছে-প্রান্তিক এসব মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা রোড এলাকার হরিজন দম্পতি জুনু ও রজনী রাণী। বংশ পরম্পরায় করে আসছেন পরিচ্ছন্নতার কাজ। খুব ভোরে তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ময়লা সংগ্রহের কাজে। শহরের অলিগলি ধরে বাঁশি ফুঁকে সংগ্রহ করেন ময়লা-আবর্জনা। উঁচু-উঁচু সব ভবন দেখে মনের কোণে জমে হাহাকার- সমাজ পরিষ্কারের কাজ করলেও নিজেদের বসবাসের জন্যে নেই কোনো পরিষ্কার স্থান। এ অবস্থায় পৌরসভার দেয়া ফ্ল্যাট পেয়ে ঘুচেছে আজন্ম সেই আক্ষেপ। স্বপ্ন বুনছেন উন্নত পরিবেশে বসবাস করে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী করে ছেলে-মেয়েদের গড়ে তোলার।

জুনু হরিজন ও তার স্ত্রী রজনী রাণী বলেন, আমাদের বাবা, দাদা থেকে শুরু করে বংশ পরম্পরায় পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসছি। কিন্তু কখনো ভাবিনি নিজেদের থাকার জন্যে এমন ঘর পাবো। আমরা অনেক খুশি। ছেলে মেয়েদের ভালোমত লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে চাই। যেনো ভবিষ্যতে এই পেশায় না থেকে ভালো কিছু করতে পারে।

পুকুর লাগোয়া প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে পাশাপাশি ৫তলাবিশিষ্ট দুটি ভবন। পরিবেশবান্ধব ব্লকে তৈরি আধুনিক এই ভবনের নান্দনিক ডিজাইন মন কাড়বে যে কারো। দূর থেকে তাকালে মনে হতে পারে ইউরোপ কিংবা উন্নত বিশ্বের কোনো বাসভবন। এমন দৃষ্টিনন্দন ভবন দুটি তৈরি করা হয়েছে হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের জন্যে। যাতে রয়েছে ৮৮টি ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে একটি করে বসবাসের রুম, টয়লেট ও রান্নঘর। প্রতিটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে অনুষ্ঠান করার জন্য কমন স্পেস।

জুনু হরিজন কিংবা রজনী রাণী নয়। আধুনিক এমন ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে খুশিতে আত্মহারা আরো অনেকেই। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছেলে-মেয়েদের আরো উন্নতজীবন গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর হরিজন পরিবারগুলো। তবে ফ্ল্যাটে বসবাসের জায়গার কিছুটা স্বল্পতার কথা বলছেন কেউ কেউ।

জনি হরিজন বলেন, ফ্ল্যাট পেয়ে আমরা খুশি। তবে থাকার জায়গা কম। একটা মাত্র রুম তাও আবার ছোট। যেখানে পরিবার নিয়ে তথা স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে একসাথে এক রুমে থাকা অনেক কষ্টকর এবং লজ্জারও। এর সমাধান করা প্রয়োজন।

চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, আজকে ১০ জনের মাঝে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেয়া হলো। খুব সহসায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সকলের মাঝে ফ্ল্যাটের কাগজপত্র হস্তান্তর করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান আপনাদের এই আধুনিক বাসস্থান।

তিনি বলেন, এটা সত্যি বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন কম। এতে আমাদের পৌরসভার কোনো হাত ছিলো না। এটি প্রজেক্ট ডিপার্টমেন্টের কাজ। তবে আমরা পরিবারের সদস্য সংখ্যা দেখে পাশাপাশি একাধিক ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছি। যা করে তাদের বসবাসে সমস্যা না হয়। ভবিষ্যতে যেসব ভবন নির্মাণ করা হবে, সেখানে এই ডিজাইন পরিবর্তন করা হবে।

মেয়র বলেন, পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে এই আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা। জীবনযাপনের পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি পিছিয়েপড়া এই সমাজের শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। এসব জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি বলে জানান তিনি।

লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান বলেন, একটি রাষ্ট্র কেমন আছে তা বোঝা যায় সেই রাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান দেখে। সরকার পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠী হরিজনদের আধুনিক আবাসনের ব্যবস্থা করেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের উপর যদি গুরুত্ব দেয়, তবে সামগ্রিকভাবে তাদের যেমন উন্নতি হবে, একই সাথে রাষ্ট্রের সম্পদের সুষম বণ্টন হবে, রাষ্ট্র আরো এগিয়ে যাবে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ও ইউএনডিপির অর্থায়নে ভবন দুটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালে। প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৮৮টি ফ্ল্যাট। এছাড়া নতুন আরো দুটি ভবন নির্মাণের কাজ সহসায় শুরু হবে। চাঁদপুরে প্রায় শতবছর ধরে বসবাস করছে হরিজন সম্প্রদায়ের ৩ শতাধিক পরিবার। সূত্র : সময়ের আলো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়