প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নারায়ণপুর পৌরসভার হালচাল-৪
জনবল ছাড়া নামকাওয়াস্তে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম
অফিসিয়ালি পৌর প্রশাসক অফিস করছেন সরকারের নির্দেশনা মেনে। তাকে সহায়তা করছেন পৌর সহায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ। তারপরেও জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই। ভোগান্তিতে আছেন খোদ পৌর প্রশাসক এবং তার সহায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দও। কারণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পৌরসভার সার্ভার চালু না হওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এখন পর্যন্ত অনুমোদন না হওয়ায় নাগরিকদের অসুবিধা হচ্ছে। আবার জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে না পারার কারণে প্রতিনিয়ত পৌর নাগরিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন পৌর প্রশাসক এবং সহায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালে নারায়ণপুর পৌরসভার গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর দীর্ঘ আইনি জটিলতার পথ অতিক্রম করে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু পৌর নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোনো জনবল দেয়া হয়নি। চালু করা হয়নি কোনো ধরনের অনলাইন সেবা কার্যক্রম। ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন নারায়ণপুর পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সরজমিনে নারায়ণপুর পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য সেবাপ্রার্থী ভিড় করছেন বিভিন্ন প্রয়োজনে। তাদের সেবা দেয়ার জন্যে নেই কোনো পৌর কর্মকর্তা কর্মচারী। পৌর ডিজিটাল সেন্টার বা পিডিসির কর্মকর্তা, যা আউটসোর্সিং সার্ভিস হিসেবে পরিচিত মোঃ নজরুল ইসলাম যতটুকু সম্ভব নাগরিকদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করছেন। আর মোঃ ইকবাল হোসেন নামে একজন রিসিপশনিস্ট আছেন তিনি সরকারি বিভিন্ন চিঠিপত্র গ্রহণ ও বিতরণ করার দায়িত্বে রয়েছেন।
পিডিসি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন শতাধিক মানুষ নারায়ণপুর পৌরসভা অফিসে আসেন জন্মনিবন্ধন সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ নেয়ার জন্যে। কিন্তু তাদেরকে উল্লেখিত সেবা সংক্রান্ত কোনো সদুত্তর দিতে পারি না।
গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কাজে আমাদের পৌর কার্যালয়ে যেতে হয়। কিন্তু জনবল না থাকায় আমরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছি না। তাছাড়া নারায়ণপুর পৌরসভার কোনো নাগরিক সেবাই চালু হয়নি। একটি অফলাইনের ওয়ারিশ সনদ পেতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি আমরা।
তিনি আরো বলেন, আমরা একটা কার্যকর পৌরসভা চাই। অন্যথায় আমাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হোক। এ সমস্যা থেকে নারায়ণপুরবাসী দ্রুত মুক্তি চায়।
এছাড়া পৌর কার্যালয়ে সাবেক নারায়ণপুর ইউনিয়নে কর্মরত ৬ জন গ্রাম পুলিশ যারা প্রায় ৮ মাস যাবৎ কোনো বেতন পাচ্ছেন না। তারপরও পৌর কার্যালয়ে আসেন যদি এখানে তাদের কাজের কোনো গতি হয়ে যায়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পৌরসভায় গ্রাম পুলিশের কোনো পদ নেই। তাদের বেতন বা চাকুরি বহাল হওয়ার কোনো সুযোগও নেই। আবার গ্রামপুলিশের চাকুরির শর্ত হলো সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। এই আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এদেরকে অন্য কোনো ইউনিয়নে স্থানান্তর করাও যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সাবেক নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৪ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী গ্রাম পুলিশ সদস্য মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সাবেক ৪নং নারায়ণপুর ইউনিয়ন বর্তমান পৌরসভার গ্রামপুলিশ সুকুমার রায় বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে আমরা নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত হই। বর্তমানে পৌরসভা হওয়ায় আমাদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। আমরা এখন অনিশ্চিত এবং মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের বয়স বিবেচনায় এই ৬ জনের পৌরসভায় কোনো একটা কাজের ব্যবস্থা করা হোক।
পৌরসভার জনবল নিয়োগের বিষয়ে নারায়ণপুর পৌর প্রশাসক এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা সুলতানা বলেন, আমি দায়িত্বগ্রহণের পর পরই স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে নারায়ণপুর পৌরসভার জনবল নিয়োগের বিষয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন এই পৌরসভা কোন্ ক্যাটাগরির হবে তার উপর নির্ভর করবে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা নির্বাহী হিসেবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পর কোনো জনবল ছাড়া অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নারায়ণপুর পৌরসভার নাগরিকদের সেবা দেয়া যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। তবুও কোনো রকম সরকারি চার্জ ছাড়াই সেখানে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌরসভার জনবল কাঠামোতে গ্রামপুলিশের কোনো পদ নেই। তাই আপাতত এদের জন্যে আমার কিছু করার নেই। আর আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় তাদেরকে আমি অন্য কোনো ইউনিয়নে ট্রান্সফার করতে পারছি না।