প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নারায়ণপুর পৌরসভার হালচাল-৩
আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে পৌরসভার অনলাইন সেবা
স্থানীয় সরকার বিভাগের সফ্টওয়ারে ‘নারায়ণপুর পৌরসভা’ শব্দটি এবং পৌর কোড যুক্ত না হওয়ায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত নারায়ণপুর পৌরসভার হাজারো নাগরিক। মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবগঠিত নারায়ণপুর পৌরসভা কার্যালয়ে সরজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। পৌরসভার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেবা নিতে আসা সেবাপ্রার্থীগণ অনলাইন জটিলতার কারণে বিদ্যালয়গামী ছেলে-মেয়েদের জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারছেন না। বিদেশগামীরা পাসপোর্টের কাজ করতে পারছেন না। এমন ভোগান্তিতে রয়েছেন নারায়ণপুর পৌরসভার শত শত নাগরিক।
পৌরসভার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নারায়ণপুর পৌরসভায় রূপান্তরিত হওয়ায় সীমানা নির্ধারণ এবং ওয়ার্ড বিভাজন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ওয়ার্ড বিভাজন গেজেট না হওয়ায় পৌরসভা হিসেবে সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত অনলাইন সেবা দিতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধন সেবা, পাসপোর্টের সাথে কারো জন্ম নিবন্ধনে নামের অমিল থাকলে তার সংশোধন সংক্রান্ত সেবাসহ সকল প্রকার অনলাইন সেবা আপাতত বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং বিদেশগামী রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছে না নিয়ম অনুসরণ করে জন্মনিবন্ধন সনদের অভাবে। জন্ম নিবন্ধন সনদ না পাওয়ার কারণে সরকারের উপবৃত্তির টাকার আবেদন করতেও পারছে না তারা। সাধারণ মানুষের দাবি দীর্ঘদিন নির্বাচন বঞ্চিত জনপ্রতিনিধিদের সেবা থেকে তারা দূরে। পৌরসভা হওয়ার পর আমরা কোনো সেবা পাচ্ছি না। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই
জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে আসা বাড়ৈগাঁও গ্রামের জিশান বলেন, আমার মেয়েকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর জন্য বছরের শুরুর দিকে পৌরসভা অফিসে জন্ম নিবন্ধন সনদ আনতে গেলে অনলাইন হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এতে আমি আমার মেয়েকে নিয়ম মেনে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারিনি। ফলে সরকারের দেয়া উপবৃত্তি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমার মেয়ে।
পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধনে নামের জটিলতায় জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে আসা বাগিচাপুর গ্রামের মোঃ আজাদ বলেন, আমি চাকুরির জন্য বিদেশে যাওয়ার ভিসা করেছি। কিন্তু পাসপোর্টের নাম আর জন্ম নিবন্ধনের নামে অমিল থাকায় বিদেশে যেতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, আমার মতো এমন অনেকে আছেন যারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন জটিলতায় বিদেশে যেতে পারছেন না।
ঘিলাতলী আদর্শ বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ কামাল হোসেন বলেন, আমার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনলাইন ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন। পৌর অফিসে গেলে ওনারা বলেন অফলাইন ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার জন্য। অথচ আমার অনলাইন ট্রেড লাইসেন্স দরকার।
এমন অভিযোগ নারায়ণপুর পৌরসভার ছোট-বড় মিলিয়ে ৬টি বাজারের শত শত ব্যবসায়ীর। যারা ঋণ, ব্যবসায়িক কাজ ও ভ্রমণ ভিসা প্রসেসিংয়ে অনলাইন ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ভোগান্তিতে পড়তেছেন।
পৌর সহায়ক কমিটির সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান মুন্সি কাকন বলেন, পৌরসভা হওয়ার কারণে আমরা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে পারছি না। কারণ জাতীয়ভাবে জন্মনিবন্ধন সফ্টওয়্যারে নারায়ণপুর ইউনিয়ন লেখা রয়েছে। পৌরসভার ওয়ার্ড বিভাজন গেজেট হলে ইউনিয়ন কোডের জায়গায় পৌর কোড অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন আমরা সকল প্রকার অনলাইন সেবা দিতে পারবো। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন যে সকল অফলাইন সেবা দিচ্ছি এর জন্য কোনো ফি নিচ্ছি না। এছাড়া পৌরসভায় বয়স্কভাতা, জেলে কার্ড, পবিত্র ঈদ উপলক্ষে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের ১০ কেজি চালসহ দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বহাল আছেও বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নারায়ণপুর পৌরসভার প্রশাসক এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা সুলতানা বলেন, পৌর নাগরিকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সুযোগ সুবিধাগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। এখানে সকল কার্যক্রম নতুনভাবে করতে হচ্ছে। ওয়ার্ডভিত্তিক সীমানা নির্ধারণসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কিছু বিষয়ে গেজেট পাস ও নির্দেশনা আসতে হবে। তাহলে পৌর নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী অনলাইন সেবাসহ সকল সুযোগ সুবিধা এবং নির্বাচন সম্পন্ন করা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পৌর প্রশাসক বলেন, আমি ১৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে দায়িত্ব পাওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে নারায়ণপুর পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করি এবং এর কিছুদিনের মধ্যেই ওয়ার্ডভিত্তিক সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে প্রস্তাব আকারে আবেদন পাঠিয়েছি। এসব তরান্বিত করার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি। গেজেট পাস হলেই সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে আপতত বিশেষ ব্যবস্থায় অফলাইনে কোনো সরকারি সেবা চার্জ ছাড়াই ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স এবং নাগরিক সনদের মতো কিছু সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যা কিছুটা হলেও নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে সাহায্য করছে।