প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জের ধানুয়া ছালেহিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষের কাণ্ড
ছিলেন বরখাস্ত, হলেন অধ্যক্ষ!
উপাধ্যক্ষ হিসেবে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে প্রথমে সাময়িক, পরে চূড়ান্ত বরখাস্তের জন্যে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেই তথ্য গোপন করে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এই কর্ম করা হাবিবুন্নবী মোঃ মহিউদ্দীন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া ছালেহিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ছিলেন। নৈতিক স্থলনসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বরখাস্ত হন। কিন্তু তিনি এই তথ্য গোপন ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শ্রীপুর ইসলামিয়া কামিল (এমএ) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
জানা গেছে, হাবিবুন্নবী মোঃ মহিউদ্দীন (ইনডেক্স নং-৩১২১৪১ (১/২/১৯৭২) ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল থেকে উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানুয়া ছালেহিয়া মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ ও কখনো কখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে নৈতিক স্থলন, বিধি বহির্ভূতভাবে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকা, চাকুরি বিধি লঙ্ঘন, অসদাচরণসহ নানা অভিযোগ আনেন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ভুক্তভোগীরা। এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে বহুবার তাকে শোকজ করা হয়।
বিধি মোতাবেক গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতিমালা নভেম্বর-২০২০ ইং-এর ৩৭(১)-এর খ, গ (২)-এর খ, ৪, ৫ এবং ৬ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে দণ্ডবিধি ৩৮-এর ক, খ, ঘ ও ছ এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে অবহিত করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বরখাস্তের পরেও তার বেপরোয়া আচরণের কারণে তিনি পুনঃশোকজ নোটিশপ্রাপ্ত হন। এমনকি বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সহ-সভাপতি মোঃ ফিরোজ আলম। মামলা নং ৬৬০/২০২৩। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি তাকে চূড়ান্ত বরখাস্তের সুপারিশ করে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরই মধ্যে গত ৪ মার্চ কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার শ্রীপুর ইমলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন হাবিবুন্নবী মোঃ মহিউদ্দীন।
এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা মুঠোফোনে জানতে চাইলে হাবিবুন্নবী মোঃ মহিউদ্দীন বরখাস্তের কথা স্বীকার এবং নতুন কর্মস্থলে যোগদানের সত্যতাও নিশ্চিত করেন। বরখাস্ত থাকা অবস্থায় নতুন কর্মস্থলে যোগদান করা যায় কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কল কেটে দেন।
ধানুয়া ছালেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী বলেন, মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হাবিবুন্নবী মোঃ মহিউদ্দীনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বরখাস্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জানতে পেরেছি তিনি একটি নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। সেখানে তিনি আমার স্বাক্ষর জাল করে ছাড়পত্র তৈরি করে সেখানে জমা দিয়েছেন। যার একটি কপি আমার হাতে এসেছে। মাদ্রাসা কমিটির পরামর্শের আলোকে আমি এ বিষয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, বরখাস্ত থাকা অবস্থায় কেউ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সভাপতিই ভালো বলতে পারবেন তিনি কোন্ প্রক্রিয়ায় তাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
শ্রীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, বরখাস্তের বিষয়টি তিনি গোপন করেছেন। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।