প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সোনালি আঁশ পাটের চেয়ে আলুুুর দাম প্রতি কেজি ৮ টাকা বেশি। আলুর চেয়ে পাটের উৎপাদনে কৃষকের কষ্টও কয়েকগুণ বেশি। অথচ পাটের কেজি এখন ৩৭ টাকা আর গোলআলু এখনো ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনটাই বাস্তবে দেখা যাচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে।
সরেজমিনে গত ক’দিন হাজীগঞ্জের হাট-বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সোনালি আঁশখ্যাত পাটের মণ ১৩শ’ টাকা থেকে সাড়ে ১৩শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা সুতলি পাটের বাজার দর। বগি পাটের কেজি ৪০ টাকা দরে মণ ১৬শ’ টাকা হলেও এই অঞ্চলে বগি পাটের উৎপাদন অনেক কম।
অপরদিকে গোলআলুর গেলো মৌসুমে জমিতে আলুর কেজি ১২ টাকা দরে মণ ৫শ’ টাকা পাইকারি বিক্রি হয়েছে। মধ্যস্বস্তভোগীর কারণে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ১২ টাকার সেই আলু এখন কমপক্ষে ৪৫ টাকা কেজি দরে অর্থাৎ ৫শ’ টাকা মণের আলু ১৮শ’ টাকায় খুচরা ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে। তবে এখনো ক্রেতাভেদে গোল আলুর কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
হাজীগঞ্জের চিলাচোঁ গ্রামের একাধিক কৃষক আক্ষেপ করে জানান, গতবারের আগেরবার আলুর জমি বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত বছর আলু না করে পাট চাষ করেছি। এখন দেখি পাট চাষ না করে আলু করলেই ভালো হতো।
একই মাঠের কৃষক সোলেমান ও মিয়া ফজলু মিয়া জানান, আমরা আলু জমিতেই ১১ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। আমাদের ১১ টাকার আলু আমাদের চোখের সামনে ৪৫/৫০ টাকায় বিক্রি করছে। কৃষি কাজ করাই আমাদের জন্য কাল। লাভের গুড় অন্যরা খেয়ে নিচ্ছে।
কৃষক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাট উৎপাদন করতে একজন কৃষককে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। পাটের জমি তৈরি করা, সার দেয়া, বীজের কিছুটা দুষ্প্রাপ্যতা, কয়েক দফা নিড়ানি দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, পাট কাটা, পানিতে ডুবানো, আঁশ ছড়ানো, ধোয়া, পানি ছড়ানো, রোদে রেখে কয়েক দফা উল্টিয়ে শুকানোসহ নানা ঝুঁকিতে পাট উৎপাদন ও সংরক্ষণ হয়।
অপরদিকে গোলআলু জমির তৈরি, সার কীটনাশকসহ বীজ রোপণ, গাছ উঠার পরে দুই দফা নিড়ানি, সার দেয়া, কীটনাশক দেয়া শেষে ফলন উঠিয়ে নিলেই কৃষকের কাজ শেষ হয়। তবে আলু উৎপাদনে বৈরী আবহাওয়া বিপদজনক ও লোকসান হলে কেবল কৃষকদেরই হয়। পাইকারদের লোকসান হয় না।
আলু সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত আলুর মৌসুমে জমিতে ১০/১১ টাকায় কেজি প্রতি পাইকারি হারে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে হিমায়িত করে। এই সকল ব্যবসায়ী পরে হিমাগার থেকে আলু উঠিয়ে কেজি দরে বিক্রি করছে। এই তরকারি ব্যবসায়ীরা এখন ক্রেতাকে রীতিমতো জবাই করে চলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, পাটের মণ মিল মালিকরা নির্ধারণ করে। তবে বাস্তবে দুই আড়াই টাকা কমে কৃষকরা বিক্রি করছে। আলুর বর্তমান দামটা মূলত কৃষক পাচ্ছে না। এই সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলছেন, আলুর দাম সহনীয় রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে আমরা তাতে সহযোগিতা করবো।
জানা গেছে আলুর দাম নির্ধারণ করে দেবার পরে যারা বেশি দামে আলু বিক্রি করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।