বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নামকাওয়াস্তে চলছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ॥ স্মার্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে কবে?
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

২০১৪ সালে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্যে ৭টি প্রজেক্টর পায় ফরিদগঞ্জ এআর মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে সবক’টিই নষ্ট হয়ে গেছে। ওয়ারেন্টি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মেরামত করে দেয়নি। ফলে যেখানে ৭টি প্রজেক্টর দিয়ে প্রতিদিন ৭টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করা যেতো, সেখানে বর্তমানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব দিয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালাতে হচ্ছে। এতো গেল যাদের সদিচ্ছা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে। বস্তুত ফরিদগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়া হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব, ল্যাব সঙ্কট, সর্বোপরি শিক্ষকদের অনীহার কারণে নামকাওয়াস্তে চলছে এসব ক্লাস। হাতে গোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে কয়েকটি ক্লাস হচ্ছে। এতে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির নীতিও ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন ঘুরে এবং তাদের সাথে বলার পর এই চিত্র উঠে আসে।

জানা গেছে, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক্সেস টু ইনফরমেশন অব বাংলাদেশ (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ইনফরমেশন কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি (আইসিটি) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু হয়। ২০১২ সালের ২০ মে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার রিয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের উদ্বোধন করেন। সফলতা আসায় পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালুর জন্যে ল্যাপটপ, মডেম, সাউন্ডবক্স, স্পিকারসহ প্রজেক্টর দেয়া হয়। শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে কম্পিউটার বিষয়ে প্রথমে ৩দিন ও পরে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস গ্রহণে সক্ষমতা অর্জনের জন্যে ১২দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ধীরে ধীরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস শুরু করেন। মুখস্থ ও গদবাঁধা নিয়মের বাইরে ছবি দেখে শিক্ষাপাঠের আনন্দ লুফে নেয় শিক্ষার্থীরা। শ্রেণিকক্ষের গদবাঁধা নিয়ম বা পাঠ্যপুস্তকের বাইরে শিক্ষাঙ্গনে লেগেছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রচলিত শ্রেণিকক্ষের জায়গা দখল করেছে ডিজিটাল ক্লাসরুম, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তিত হয়েছে ডিজিটাল বই বা পিডিএফ ফাইল এবং ডিজিটাল-মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সরকারের দেয়া প্রজেক্টর ও কম্পিউটার ব্যবহার করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগী করতে সমর্থ হয়। কিন্তু করোনাকালীন সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের পরিবর্তে অনলাইন ক্লাসের দিকে শিক্ষকরা ঝুঁকে পড়ে। অনলাইন ক্লাসের পরিবর্তে বর্তমানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চললেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসগুলো হচ্ছে না বললেই চলে।

প্রচলিত পদ্ধতিতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনে লেকচার দেন। সামনে বসে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের আলোচনা বা বর্ণনার কোনো অংশ না বুঝলে প্রশ্ন করে, সে অনুযায়ী শিক্ষক উত্তর দেন বা বোর্ডে লিখে বুঝিয়ে দেন। ডিজিটাল বা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের পদ্ধতি ভিন্ন। বর্তমানে পড়ালেখা কেবল শ্রেণিকক্ষ বা পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়। পড়ালেখার অঙ্গনে লেগেছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রচলিত শ্রেণিকক্ষের জায়গা দখল করেছে ডিজিটাল ক্লাসরুম, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তিত হয়েছে ডিজিটাল বই বা পিডিএফ ফাইল এবং ডিজিটাল-মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এবং প্রতি সপ্তাহে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখন আর সেই বালাই নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন শিক্ষক জানান, প্রথম প্রথম বিষয়টি অনেকের কাছে ভালো লাগলেও বর্তমানে এটাকে বাড়তি ঝামেলা মনে করছেন। তাই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে শিক্ষকদের আগ্রহ কম। এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া বেশ ক’জন শিক্ষার্থী জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে আমরা সুবিধা পেলেও কলেজে এসে এর দেখা পাইনি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই মাল্টিমিডিয়া বলতে অনলাইন ক্লাসকেই মনে করছে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রজেক্টর এবং ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডেজিটাল ল্যাব থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এর সঠিক ব্যবহার করছে না। কয়েকটি ল্যাবের অবস্থা বলার মতো স্থানে নেই। অথচ, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে একাধিক স্লাইডের সাহায্যে যেকোনো মূর্ত-বিমূর্ত বিষয় অতি সহজেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান যেমন আনন্দময়, তেমনি সহজবোধ্য করে। সনাতন চক, ডাস্টার, চকবোর্ড দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক তত্ত্বগত ধারণা যথাযথভাবে দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। কিন্তু ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে একাধিক স্থির বা চলমান চিত্রের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের যেকোনো বিষয়ে পূর্ণ ধারণা দেয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ হবে অনেক বেশি আনন্দদায়ক।

জানতে চাইলে রূপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আকরামুল হক জানান, প্রজেক্টর নষ্ট থাকায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের মাধ্যমেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু রেখেছেন। তবে ক্লাসের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

কাউনিয়া শহীদ জাবেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব সরকার বলেন, আমি বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া শুরু করেছি।

ফরিদগঞ্জ এআর মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়ার বিষয়টি সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা প্রয়োজন।

উপজেলার সহকারী প্রোগ্রামার নাজমুল হোসেন বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভিজিট করি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে মাসিক রিপোর্ট দেয়, আমি সেভাবেই পাঠাই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে তাতে ভাটা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দিচ্ছি নিয়মানুযায়ী ভালোভাবে ক্লাস শুরু করার জন্যে।

সরকার ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও এসেছে অনেক পরিবর্তন। শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুঠোফোনে বা ল্যাপটপেই পাচ্ছে আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়া। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এভাবে পিছিয়ে পড়ে, তবে স্মার্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে কবে-এই প্রশ্ন সচেতন মহলের।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়