প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দেন। শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে নিয়োগ কার্যকর হবে।
১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে তাঁকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা জানানো হয়।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী অবসরে যাচ্ছেন। কিন্তু সে সময় সুপ্রিমকোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায়, গত ৩১ আগস্ট ছিলো তাঁর বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শপথগ্রহণের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। টানা ২০ মাস বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর ৬৭ বছর পূর্ণ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। তাই সংবিধান অনুসারে ওইদিন তিনি অবসরে যাবেন।
ওবায়দুল হাসান দেশের প্রধান বিচারপতি হবার আগে একদিনের সফরে সস্ত্রীক চাঁদপুর এসেছিলেন। গত ৯ জুন শুক্রবার সকালে তিনি চাঁদপুর জেলা জজকোর্ট মিলনায়তনে দিনব্যাপী এক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় তিনি চাঁদপুরে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মহসিনুল হক। বিভিন্ন আদালতের বিচারক ও আইনজীবী নেতারা কর্মশালায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন ছয়াশী প্রকাশ হাটনাইয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডাঃ আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ১৯৭০ সালের গণপরিষদ সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
গণপরিষদ সদস্য হিসাবে তিনি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। তাঁর অনুজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান পরিবহন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদণ্ডসদস্য। তাঁর মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের স্ত্রী নাফিসা বানু বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য (ফিন্যান্স)। তাঁদের সন্তান আহমেদ শাফকাত হাসান একজন ব্যারিস্টার। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডারহাম থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন।
ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসাবে জেলা বারের সনদপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৯ সালের ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর সদস্য হিসাবে ওবায়দুল হাসান ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর টাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনাল-২-এ কর্মরত থাকাকালে ১১টি মামলার রায় ঘোষিত হয়।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯১ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরে একটি আইন সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ২০১৫ সালের আগস্টের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনাল, তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার বিচারকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।
‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র : একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ : একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দুটি গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।