প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
মাদক এবং কিশোর অপরাধ বাদ দিলে চাঁদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো বলতে হবে। গেলো ঈদুল আজহা জেলাবাসী শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করেছে। কোরবানির পশুর হাট নিয়ে কোথাও কোনো অভিযোগ আসে নি। আবার ঈদুল আজহার খুব কাছাকাছি সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। উভয় ধর্মীয় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে। এর জন্যে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলসহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ছিল। এ জন্যে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
এভাবেই গত জুন মাসের চাঁদপুর জেলার আইনশৃঙ্খলার মূল্যায়ন করা হয় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়। গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। সভায় বক্তারা তাঁদের আলোচনায় জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তবে আলোচনায় মুখ্য হয়ে ওঠে কিশোর অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে। বক্তারা বলেন, চাঁদপুরে কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। তারা এতোটাই বেপরোয়া যে শহরের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে ফেলে। কথায় কথায় তারা ধারালো ভয়ঙ্কর ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে যায়। এসব কিশোর গ্যাং তথা কিশোর অপরাধীর বিচরণ শহরের বিভিন্ন স্পটে দেখা যায়। তবে উল্লেখযোগ্য স্পট হচ্ছে চাঁদপুর প্রেসক্লাব এলাকা। এখানে দিনে-রাতে গ্রুপে গ্রুপে কিশোর বয়সী ছেলেরা আড্ডা দেয়, আর এই আড্ডা থেকেই দেখা যায় মারামারির ঘটনা ঘটে যায়। এসব মারামারিতেই তারা ভয়ঙ্কর ধরনের দেশীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। তাদের আরো কিছু স্পট হলো- হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা, অঙ্গীকার এলাকা, মুখার্জি ঘাট এলাকা, নতুনবাজার-পুরানবাজার ব্রিজের এপার ওপার। কিশোর গ্যাংয়ের এই উৎপাত, উপদ্রব এবং দৌরাত্ম্য থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বক্তারা।
সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) বলেন, কিশোর গ্যাং শুধু চাঁদপুরে নয়, সারাদেশেই এই সমস্যা। এদের দমনে শুধুমাত্র প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার দায়িত্ব নয়। অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এই কিশোর অপরাধীরা তাদের অভিভাবকদেরও মানে না। তারা তাদের বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় থাকে, তাদেরকেই মান্য করে। সে জন্য ভাই যারা আছেন, তারা সময়ে তাদেরকে ব্যবহার করবেন, আবার বলবেন তাদেরকে দমন করতে, এই ডাবলস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর অভিভাবকরা তাদের সন্তানরা স্কুল, প্রাইভেট, কোচিং সময়ে সেখানে না গিয়ে কোথায় গেলো, সন্ধ্যার পর পড়ার টেবিলে বা বাসায় না থেকে কোথায় কার সাথে আড্ডা মারছে সে সবের খবর না রেখে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর দায়িত্ব দিয়ে দিলে তো কিশোর অপরাধ দমন বা নিয়ন্ত্রণ হবে না। কারণ কিশোর হওয়ার কারণে তাদের উপর আইন প্রয়োগ করা যায় না। তবে হ্যাঁ যদি ফৌজদারি অপরাধ সংগঠিত হয় তখন পুলিশ ভূমিকা নিতে পারে। তাই অভিভাবকদের যে দায়িত্ব রয়েছে তা তাদের পালন করতে হবে। এরপরও পুলিশ সুপার আশ্বস্ত করেছেন যে সব স্পটে এদের বিচরণ থাকে সে সব জায়গায় কিছু দিন পর পর পুলিশ ঝটিকা অভিযান চালাবে।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানও তাঁর বক্তব্যে একইভাবে অভিভাবক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে কিশোর অপরাধ দমন বা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জেলা প্রশাসক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন বলে তাদের প্রতি অনুরোধ জানান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ক্লাস চলাকালীন সময়ে আড্ডা দিলে থানা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সামনের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। নির্বাচনকালীন সময়টাতে সকলকে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কেহ দাবি আদায়ের নামে সড়ক অবরোধ করলে তা কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
সভায় বিগত সভার কার্যবিবরণী পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুছ, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান, এনএসআই-এর উপ-পরিচালক শাহ আরমান আহমেদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী মাঝি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিয়মিত পরিচালক একেএম দিদারুল আলম প্রমুখ। এছাড়া কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বক্তব্য রাখেন।