শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০

আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে এই সম্মেলনের বিকল্প নেই
গোলাম মোস্তফা ॥

চাঁদপুরে আওয়ামী পরিবারের মধ্যে অন্যতম একটি পরিবার রয়েছে, যে পরিবারের সকলে একই রাজনীতির মতাদর্শে বিশ্বাসী। পরিবারটি হলো চাঁদপুর পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডস্থ মধ্য ইচলী ভূঁইয়া পরিবার। সে পরিবারের সন্তান হলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম সংগঠক, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের পর পর দুবারের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকারী এবং এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের মুখোমুখি হন। সম্মেলন নিয়ে তিনি নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। যা নি¤েœ হুবহু তুলে ধরা হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ১৭ জুন ২০২৩ হলো কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ। এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হোক আপনি কি তা চান? চাইলে কেনো চান?

অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া : সম্মেলন হলো রাজনৈতিক দলগুলোর একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ায় মেয়াদ শেষ হলে নতুন নেতৃত্বের জন্যে নেতা-কর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী সম্মেলন হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরো পাঁচ বছর পূর্বে। নানা প্রতিকূলতার কারণে হয়তো সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে সম্মেলন করার জন্যে তারিখ ঘোষণা করেছেন। আমি মনে করি ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী সম্মেলন হবে। আর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে এবং দল সুসংগঠিত হবে। তাই সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি।

প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে, ‘সম্মেলন কেনো চাই?’ সেই প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বার্থের এবং বৈষম্যমূলক নেতৃত্বের কারণে দলে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। তাঁদের দ্বি-মুখী আচরণ ও আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতিসন্নিকটে। এই নির্বাচন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিজয় সুনিশ্চিত করতে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বিকল্প নেই। তাই অতিদ্রুত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন চাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : এই সম্মেলনে আপনি কি বর্তমান নেতৃত্বের বহাল চান, নাকি কোনো পরিবর্তন চান?

অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া : আমার বক্তব্যের শুরুতে বলেছি, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আমরাসহ তৃণমূল হতাশ। সেই কমিটি বহাল চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। দেখুন, জেলা আওয়ামী লীগের অধীনস্থ ৯টি ইউনিটের মধ্যে ৭টি ইউনিট অর্থাৎ মতলব উত্তর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা ব্যতীত ৭টি ইউনিটের সম্মেলন করা হয়েছে করোনার পূর্বে। সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া ৭টি ইউনিটের একটিরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আজো অনুমোদন হয় নি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বেশ ক’টি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। এ সকল সংগঠনের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো সমন্বয় বা সুসম্পর্ক নেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করার পর দীর্ঘ ৭ বছরে একটিমাত্র বর্ধিত সভা করেছে বর্তমান কমিটি। এভাবে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। শুনলে চমকে যাবেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক শীর্ষ নেতা, এমপিদের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান বা স্বজনরা মৃত্যুবরণ করলে সামাজিকভাবেও এই কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কোনো ধরনের সমবেদনা বা সামাজিক অনুষ্ঠানে এদের উপস্থিতি দেখা যায় না। তাহলে এ ধরনের নেতৃত্ব দিয়ে দলের আগামীর কোনো কল্যাণ বা দলকে সুসংগঠিত করার কোনো উপায় দেখছি না। আবার শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বয়স বাড়িয়ে এফিডেভিট করে মুক্তিযোদ্ধা হন। তাহলে তাদেরকে নেতৃত্বে রাখা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি।

জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ১৮ বছর যাবত দলের একই পদে, সভাপতি দীর্ঘ ৮ বছর। অথচ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমে ওনাদের উপস্থিতি নেই। অতএব, নানা কারণে আমি মনে করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বা ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলকে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করতে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন শতভাগ জরুরি এবং সময়ের দাবি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুটি পদের কোনো পদে আসতে চান? সেটি কোন্ পদে এবং কেনো আসতে চান?

অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া : অবশ্যই আসতে চাই। কারণ আমার জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পরিবারে। এই জেলায় আমার পরিবার ও গোষ্ঠীর মতো এমন পরিবার খুবই কম রয়েছে, যে পরিবারের সকলে একই রাজনীতির মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং মূল সংগঠন থেকে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এবং এখনো রয়েছে। দলের দুঃসময়ে আমার পরিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে যত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা এ জেলায় খুব কম পরিবারেই রয়েছে। তাছাড়া আমি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পথচলা শুরু করে স্কুলজীবনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খাটতে হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন এবং ৯০ স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতৃত্ব দিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পর পর দুবার একই পদে দায়িত্ব পালন এবং পেশাগত জীবনে একজন আইনজীবী হিসেবে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার পরিবারের মধ্যে সবার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মরহুম সফিকুর রহমান দুলাল ভূঁইয়া সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা; সেজো ভাই রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া চাঁদপুর জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা; সেজো ভাই আলহাজ্ব মোঃ মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে আহ্বায়ক; তারপরের ভাই দলিলুর রহমান ভূঁইয়া জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আমার সবচেয়ে ছোট ভাই কামাল ভূঁইয়া জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলো। বর্তমানে যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে শুরু। বর্তমানে পরপর দুবার জেলা আওয়ামী লীগের একই পদে দায়িত্ব পালন করছি। অতএব, আমি ও আমার পরিবার শত লোভ-লালসা পরিহার করে একই ছাতার নিচে, একই রাজনৈতিক মতাদর্শের রাজনীতি করছি। তাই আমি মনে করি, দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলার কারণে আমি আসন্ন সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

বিগতদিনে আমার ও পরিবারের সদস্যদের এ দলের জন্য কী করেছে সে সকল কিছু বিবেচনা করে আমাকে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করবেন, এটা আমার প্রত্যাশা। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যন্ত শক্তিশালী সংগঠনে রূপান্তর করবো ইনশাআল্লাহ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের বাইরে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে বলুন।

অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া : বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সবসময় অবিচল ও আস্থাশীল ছিলাম এবং তাঁর নির্দেশনা মাঠে-ময়দানে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকায় রেখেছি। স্থানীয় নির্বাচন থেকে জাতীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জন্য কাজ করেছি। বিভিন্ন সময়ের হামলা, মামলা, জেল-জুলুম কোনো কিছুই আমাকে দল এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ, আমৃত্যু পারবেও না।

সর্বোপরি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তথা বৃহত্তর আওয়ামী পরিবারের প্রতিটি নেতা-কর্মীর কাছে আমার আহ্বান, দয়া করে আর বিভেদ নয়। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হলে সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই।

বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে চাঁদপুরের মাটি ও মানুষের নেত্রী মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি টানা ১৫ বছরে বর্তমান সরকারের মেগা উন্নয়নসহ সকল উন্নয়নের কথা আমরা মানুষের সামনে যেনো তুলে ধরি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। চাঁদপুরে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেখতে চাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়