প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন কেন্দ্র ঘোষিত তারিখেই হওয়া চাই। কোনো অজুহাতে যেনো তারিখ পেছানো বা স্থগিত করা না হয়। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব তথা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের হতাশ করেছেন। তাঁরা সকল নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসুক সেটা আমি একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে প্রত্যাশা করছি। সে সাথে আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ প্রতিটি নেতা-কর্মীর এটিই এখন মুখ্য দাবি। কারণ বর্তমান নেতৃত্ব দলের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তিসহ দলটাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলেছে।
বিভিন্ন প্রশ্নের আলোকে এভাবেই কথাগুলো বললেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি, চাঁদপুরের রাজনীতিতে রাজপথে সরব একসময়ের ছাত্রনেতা বর্তমান যুবনেতা অ্যাডঃ জাফর ইকবাল মুন্না।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে ভাবনা শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বের মুখোমুখি হয়েছেন জাফর ইকবাল মুন্না। প্রশ্নোত্তর আকারে তাঁর সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি কেন্দ্র ঘোষিত তারিখে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন চান? আর কেনইবা সম্মেলন চান?
জাফর ইকবাল মুন্না : চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরো পাঁচ বছর আগে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আর কতদিন থাকবে! যেহেতু কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সে জন্য আমি ঘোষিত তারিখ তথা ১৭ জুন সম্মেলন হোক সেটাই চাই। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সম্মেলন কেনো চাই তার জবাবে বলতে হয়, আমি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব চাই। বর্তমান নেতৃত্ব তথা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের হতাশ করেছেন। চাঁদপুরের স্থানীয় সকল নির্বাচনে তাঁরা নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যার একটি প্রমাণ হলো সর্বশেষ অনুষ্ঠিত চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন। এ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মনোনীত অর্থাৎ নৌকার প্রার্থী হন জিল্লুর রহমান জুয়েল। এ নির্বাচনকে ঠেকানোর জন্য বর্তমান সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদ তাঁর নিকটাত্মীয় দিয়ে একাধিক মামলা করেছেন। মামলার কারণে নির্বাচন পেছানো হয়েছে। শেষ অব্দি নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচনের কোনো কর্মকাণ্ডে আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছিল না। এছাড়া আরো বহু প্রমাণ রয়েছে। তাই আমি মনে করি, এই দলের নেতৃত্বে থাকার নৈতিক অধিকার ওনারা হারিয়ে ফেলেছেন। এ জন্য আমি সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে এ প্রত্যাশা করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি জেলা আওয়ামী লীগে কী ধরনের নেতৃত্ব চান?
জাফর ইকবাল মুন্না : এককথায় বললে আমি চাই আওয়ামী পরিবারের কেহ আসুক। যার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। যাদের পরিবার এই জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রেখেছে, যেই পরিবার থেকে জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়েছে, এমন পরিবারের সদস্য তরুণ প্রজন্মের আইডল কেউ নেতৃত্বে আসুক। তবে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলো এমন কেউ হলে সবচেয়ে ভালো হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি কোনো নেতৃত্বে আসতে চান?
জাফর ইকবাল মুন্না : দেখুন আমি একজন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। চাঁদপুর জেলা এবং পৌর ছাত্রলীগের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলাম। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমার রাজনীতির বলতে গেলে পুরো সময়টাই আমি চাঁদপুরে কাটিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সবসময় অবিচল ও আস্থাশীল ছিলাম এবং তাঁর নির্দেশনা মাঠে-ময়দানে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকায় থেকেছি। জাতীয় নির্বাচন হতে শুরু করে স্থানীয় সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জন্য আমি দিনরাত পরিশ্রম করেছি। হামলা, মামলা, জেল-জুলুম কোনো কিছুই আমাকে দল এবং আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারে নি। আর এসব কিছু আপনারাই সাক্ষী। অতএব আমার প্রত্যাশা থাকবে, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় এবং জেলা শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আমাকে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আগামী কমিটিতে স্থান দিবেন এবং আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ প্রত্যাশা করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নের বাইরে আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন।
জাফর ইকবাল মুন্না : বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তথা বৃহত্তর আওয়ামী পরিবারের প্রতিটি নেতা-কর্মীর কাছে আমার আহ্বান, দয়া করে আর বিভেদ নয়। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হলে সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই। দলের সাথে যারা বেঈমানি করেছে, যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে, যারা দলের ভেতর কুচক্রী মহল, যারা প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে থাকে, তাদের ব্যাপারে সবসময় সজাগ থাকুন, সতর্ক থাকুন। এদেরকে বয়কট করুন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে চাঁদপুরের মাটি ও মানুষের নেত্রী মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি যে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন সেসব যেনো আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরি। সারাদেশে টানা ১৫ বছরে বর্তমান সরকারের মেগা উন্নয়নগুলো যেনো আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে হবে। এর বিকল্প কোনো কিছু নেই। এ লক্ষ্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবশেষে চাঁদপুরে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেখতে চাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।