প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০
কুমিল্লায় পৃথক দুটি হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। ২৫ মে বৃহস্পতিবার এ রায় দেন কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক রোজিনা খান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা অনুমান ৬টা হতে পরদিন ১১টা পর্যন্ত যে কোনো সময় কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার জরুন্ডা গ্রামস্থ জনৈক মোস্তফার মৎস্য প্রজেক্টের পাশে সাহেব আলীর আলু ক্ষেতে আসামি রবিউল প্রকাশ রবিউল্লা বাদীর ছোট ছেলে ভিকটিম মোঃ মাসুদকে বলাৎকার করে হত্যা করে। এ ব্যাপারে ভিকটিমের পিতা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কংগাই গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান (৪৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে চান্দিনা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই স্বপন কুমার দাশ মামলার তদন্ত শেষে আসামি মোঃ রবিউলকে আদালতে সোপর্দ করলে রবিউল বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তৎপর তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২০ জুন দঃবিঃ ৩৭৭/৩০২ ধারার বিধানমতে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন (যার অভিযোগপত্র নং-৭২)। তারপর মামলাটি বিচারে আসলে ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি রবিউলের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণক্রমে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামী রবিউলকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার বিধানমতে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করেন আদালত। রায়ে আরও উল্ল্যেখ করেন, আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন কতৃর্ক অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণাকালে আসামি রবিউল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ রবিউল প্রকাশ রবিউল্লা হলেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার জরুন্ডা গ্রামের মোল্লা বাড়ীর রমিজ উদ্দিনের ছেলে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডঃ মোঃ নুরুল ইসলাম।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ কৌঁসুলি বলেন, বাদী এবং রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছি এ রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ড শীঘ্রই কার্যকর করবে।
আরেকটি মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় চুরি করার সময় চোরকে হাতেনাতে ধৃত করলে চোরের হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে মোঃ মজিবুর রহমান (৬০)কে ঘাঁই মেরে হত্যা করে। এ ব্যাপারে ভিকটিমের ভাগিনা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নুরপুর গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে আসামি আঃ জলিল (৪২)সহ চারজনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় দণ্ডবিধির ৩৮২/৩২৬/৩০২/৩৪ ধারায় মামলা রুজু করলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহরিয়ার খান ঘটনার তদন্তপূর্বক আসামি মোঃ আঃ জলিল সহ ৩জনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৩০ মে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন (অভিযোগপত্র নং- ৪১)। এরপর মামলাটি বিচারে আসলে ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠনক্রমে রাষ্ট্রপক্ষে ২৭জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে পলাতক আসামি আঃ জলিল-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। রায়ে আরও উল্লেখ করেন যে, আসামি আঃ জলিলের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে ফাঁসির রুজ্জুতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণাকালে আসামি আঃ জলিল আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হলেন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার নবীয়াবাদ গ্রামের মৃত আঃ গফুরের ছেলে আঃ জলিল।
এদিকে এই মামলায় আদালত কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাতাঘাসি গ্রামের ছানা উল্লার ছেলে মোঃ মফিজ (৩৫)-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস প্রদান করেন। অপর আসামি চান্দিনা নুরপুর গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে বজলুর রহমান ভুলু মামলা চলাকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।