প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
হাজীগঞ্জের মাতৈন গ্রামে ঔরসজাত সন্তান কামাল পাটওয়ারীকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে বাধা দিচ্ছে বাবা আবদুল কাদের। একই ঘটনায় স্বামীর লাশ দাফনের আগেই স্ত্রী ও সন্তানের ন্যায্য পাওনা চাচ্ছে মৃত কামাল পাটওয়ারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি। এ ঘটনায় এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে সোমবার সন্ধ্যার পর। সর্বশেষ হাজীগঞ্জ থানার পুলিশের একটি টিম ও স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি সুরাহা করে মৃতের লাশ দাফনের জন্যে রফাদফা করছেন বলে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ জানিয়েছেন।
মৃত কামাল পাটওয়ারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি জানান, প্রায় ২৩ বছর পূর্বে তার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের পাটওয়ারী বাড়ির আবদুল কাদের পাটওয়ারীর ছেলে কামাল পাটওয়ারীর। তিনি কালো হওয়ায় তার শ্বশুর-শাশুড়ি কামালের স্ত্রী হিসেবে তাকে মেনে নেয়নি। তার ওপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতো। বিশেষ করে আমার শাশুড়ি ও ননদদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন বলে দাবি করেন বিউটি।
বিউটি আরো জানান, ২০০০ সালের দিকে আমার বাবার পরিবার টাকা খরচ করে কামালকে বিদেশ পাঠায়। কামাল বিদেশ যাওয়ার পর সব টাকা বাবার নামে পাঠাতো, তারপরেও সে তার বাবা-মা ও বোনদের মন জয় করতে পারেনি। এক পর্যায়ে কামাল অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশ থেকে দেশে চলে আসে। সে সময় কামালকে তার পরিবারের কেউ কোনো চিকিৎসা করাতে এগিয়ে আসেনি। এক পর্যায়ে তাকে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির সহযোগিতায় ঢাকায় চিকিৎসা করাই। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কামাল মৃত্যুবরণ করলে লাশ দাফন করার জন্য বাড়িতে আনি। কিন্তু আমার শ্বশুর কামালকে তার সন্তান নয় বলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনে বাধা দেয়। এখন আমি ও আমার সন্তানের ন্যায্য দাবি শ্বশুর থেকে বুঝে না নেয়া পর্যন্ত লাশ দাফন করতে দেবো না।
এ দিকে পাটওয়ারী বাড়িতে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করেও মৃত কামালের পিতা আবদুল কাদেরের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি সংবাদকর্মীদের। তিনি তার বিল্ডিংয়ের দরজা-জানালা বন্ধ করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভেতরে অবস্থান নেন। মৃত কামালের ভাই স্বপন বলেন, কামাল প্রসঙ্গে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
পাটওয়ারী বাড়ির নুরুল আলম পাটওয়ারীসহ বাড়ির অন্যরা জানান, আবদুল কাদের খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক। এরপরেই এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল কাদেরের ঘরে হামলার চেষ্টা চালায়। পরে বাড়ির অন্য লোকজনের সহযোগিতায় উত্তেজিত লোকদের নিবৃত্ত করা হয়।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দ জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন ও এসআই নাজিমউদ্দিন ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন, তারা একটা ব্যবস্থা বের করবেন।
চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন জানান, কামালের স্ত্রী ও সন্তানের দাবির প্রেক্ষিতে তাদেরকে থাকার জন্যে কামালের ক্রয়কৃত সোয়া ৯ শতাংশ জমি স্ত্রী বা তার ছেলেদের নামে দেয়া হবে। এই মর্মে রাতেই একটি স্ট্যাম্প করা হবে। মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদের কামালের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে এ জমি দিতে রাজি হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ চলছে।