প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০২
মা প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
পৃথিবীর আলো-বাতাস আর মায়ের স্পর্শ শুধুমাত্র মানব শাবক নয়, প্রতিটি প্রাণী শাবকের একই সাথে পাওয়া প্রকৃতির নিয়ম। এই নিয়মের মাধ্যমেই শিশুর মাতৃক্রোড় হয়ে উঠে জীবনের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ পাঠশালা। এই পাঠশালার বিনা বেতনের শিক্ষক আমাদের মা। কোনো বিনিময় ছাড়া, শুধু একটি মাত্র শর্ত যেখানে জীবনের সমস্ত আবেগ মিশে আছে, তোমাকে মানুষের মত মানুষ হতে হবে।
হামাগুড়ি থেকে বসতে শেখা, আস্তে আস্তে দাঁড়ানো, দুই-এক পা করে হাঁটা এ শিক্ষা কোনো শরীরচর্চা শিক্ষকের কাছে নয়, পেয়েছি জীবনের প্রথম শিক্ষক মায়ের কাছ থেকেই।
আধো আধো আলতো আলতো করে কথা বলতে শেখানো ছিল মায়ের ব্যস্ততম জীবনের আনন্দ আয়োজন।
আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মানুষ আমার বাবা কৃষক মা গৃহিণী। আমি আমার গৃহিণী মায়ের চোখে এ বিশ্বটারে যখন প্রথম চিনতে শিখলাম জানতে শিখলাম। মা আমাকে চিনালো ন্যায়-অন্যায়ের ফারাক।
সহজ-সরল জীবনে অভ্যস্ত মা প্রথম শোনালো আমায় মদন মোহন তর্কালঙ্কারের সেই শিশুপাঠের নীতিকথাগুলো
বারোমাস তিথী যত
একে একে হয় গত।
লেখাপড়া করে যেই
গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই।
পর ধন নাহি লব
চিরদিন সুখে রবো।এছাড়া সততা, সত্যবাদিতা, পরোপকার, সহমর্মিতার মত জীবনবোধের নীতি-নৈতিকতা।
আজও ব্যক্তিজীবনের প্রাত্যহিক কাজে মায়ের সেই শিক্ষা আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে।
আমি আমার মাকে কখনো আমার সাথে বিদ্যালয়ে যেতে দেখিনি। আমার মা আমার বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে তেমন চিনতেন না কিন্তু কোনো অবস্থাতেই যেন আমার দ্বারা শিক্ষকদের অমর্যাদা না হয় সে বিষয়ে মা ছিলেন খুবই সচেতন। মায়ের হাতে সাজানো টিফিনের পরিমাণ সর্বদাই এমন ছিল যেন দু-একজন বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে পারি।
আজকের এই কর্মজীবনে এসেও মায়ের কাছে পাওয়া শিক্ষাগুলো প্রতিদিনই প্রাসঙ্গিক। তাই মা শুধু এই জীবনের প্রথম শিক্ষকই নয়, জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকও আমার মা।
উপেন্দ্র নাথ রায় : সহকারী শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।