বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২১:৩৯

গৃহবধূ আসমার মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি

লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্নে নির্যাতনের আলামত, দুই দেবর পলাতক

প্রবীর চক্রবর্তী ॥
গৃহবধূ আসমার মৃত্যুর  কারণ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি

ফরিদগঞ্জে আসমা আক্তার নামে গৃহবধূর মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গৃহবধূর স্বামীর পরিবার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার কথা বললেও মরদেহ গোসলের সময় মৃতের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন, নির্যাতন খুনের ইঙ্গিত বহন করে বলে জানিয়েছেন আসমা নামের ওই গৃহবধূর স্বজনরা। এদিকে ঘটনার পর থেকে আসমার দুুই দেবর পলাতক রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, লাশের সুরতহাল রিপোর্টের সময় শরীরে অস্বাভাবিক কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। এদিকে লাশ পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর ওই গৃহবধূর দুই দেবর সাইমুন ও শাহীন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চির্কা গ্রামের রাঢ়ি বাড়ির হানিফ রাঢ়ির ছেলে মাসুমের সাথে চরমথুরা গ্রামের হাফেজ খানের মেয়ে আসমার ইসলামী শরীয়াহ মতে গত প্রায় ৩ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ১৮ মাস বয়সী আয়ান নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। জীবিকার তাগিদে আসমার স্বামী মাসুুম মালয়েশিয়া থাকলেও তার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং দুই দেবর সাইমুন (২২) ও শাহীন (১৭)সহ একসাথে একঘরেই থাকতেন।

সরজমিনে গেলে আসমার বড়ো ভাবী ফাতেমা বেগম জানান, তার ননদ আসমার লাশ পোস্টমর্টেমের পর গোসল করানোর সময় তার শরীরের স্পর্শকাতর কয়েকটি স্থানে কামড়ের চিহ্ন দেখতে পাই। অথচ আমাদেরকে বলা হয়েছিল সে গলায় ফাঁস দিয়েছে। আমরা কিছু ছবি তুলে রেখেছি। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন নিশ্চিত করে তাকে যৌন ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ আম গাছে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়।

আসমার লাশের গোসলের সময় উপস্থিত থাকা মিনু আক্তার জানান, তিনিও দেখেছেন আসমার গোপন স্থানে তাজা আঘাতের চিহ্ন। আঘাতের চিহ্নগুলো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বলে মনে হয়।

লাশের নিয়মিত গোসল দেয়া লতুফা বেগম জানান, আমি এই পর্যন্ত ৫০টির উপর লাশের গোসল দিয়েছি। শনিবার দিনও দুটি লাশের গোসল করিয়েছি। আসমার লাশের গোসলের সময় তার গোপন কয়েকটি স্থানে তাজা রক্তের দাগের মতো দেখেছি।

আসমার বান্ধবী ফাবিয়া জাহান, আসমা তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তার কাছে আসমা শ্বশুর বাড়ির নির্যাতনের কথা ইতিপূর্বে তাকে জানিয়েছে। চরমথুরা খান বাড়ির মোশারফ খানের স্ত্রী ও আসমার সম্পর্কে ভাবী রিয়া বেগম জানান, আসমা শনিবার রাত ১২টার পর আমার মুঠোফোনে কল করে আমার সাথে কথা বলেছে। এ সময় সে কান্নাকাটি করে বলেছে তার শরীর ভালো নেই। এরপর ইমুতেও আমাকে ম্যাসেজ দেয়। আসমার কথা শুনে মনে হয়েছে তার ওপর অত্যাচার হয়েছে। ভোরবেলা শুনতে পাই সে মারা গেছে।

আসমার ভাই রুবেল খান জানান, রাতে আমার বোন আমাকে তিনবার কল দিয়েছিল। কিন্তু ঘুমে থাকার কারণে ধরতে পারি নি। ভোর রাতে বোনের স্বামীর বাড়ির লোকজন আসমা গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে আমাকে জানায়। আমি দ্রুত তাদের বাড়িতে ছুটে গিয়ে দেখি আসমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে আমিও গিয়েছি তাদের সাথে। তখন চিকিৎসক আমার বোনকে মৃত ঘোষণা করেন। আমি মনে করি আমার বোনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আমি বিচার বিভাগের কাছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি।

আসমার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানায়, তারা কেউই আসমাকে গাছ থেকে নামাতে দেখেনি। আসমার শ্বশুর হানিফ রাঢ়ী জানান, তিনি শনিবার রাতে আনুমানিক ৪টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠলে ঘরের পাশের আম গাছে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পেলেন। এ সময় তার দুই ছেলে প্রথমে ছুটে এসে আসমাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে ঘরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে বাড়ির বাসিন্দা সাবুসহ কয়েকজন ছুটে আসে। তবে বাড়ির বাসিন্দা সাবুর বক্তব্যের জন্যে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

আসমার শাশুড়ি মাছুমা বেগম জানান, প্রতিদিনের ন্যায় আসমাসহ পরিবারের অন্যরা শনিবার (২ নভেম্বর) রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোররাতে আসমার শ্বশুর (আমার স্বামী) হানিফ রাঢ়ি বাথরুমে যাওয়ার জন্যে ঘর থেকে বের হলে ঘরের পাশের আম গাছের সাথে আসমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে আসমাকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় নামিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো জানান, আমার ছেলে সাইমুন ঘরের ভিতরের একটি কক্ষে, আমার সাথে নাতিসহ আসমা পাশের একটি কক্ষে ঘুমায়। রাতে আসমা ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে ফোনে কথা বলতো। কার সাথে কথা বলতো আমরা জানি না। জিজ্ঞাসা করলে বলতো, আমার ছেলের সাথে কথা বলে। আসমার পরিবারের সাথে ইতিপূর্বে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিলো বলে তিনি জানান। আসমার একটি মোবাইল তার ছেলে সাইমুন ভেঙ্গে ফেলেছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। এই ঘটনার পর থেকে তার দুই ছেলে সাইমুন ও শাহীন বাড়িতে নেই বলে তিনি স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, আসমার মরদেহ সুরতহাল করার সময়ে আমার সঙ্গীয় নারী পুলিশ সদস্যসহ অন্যরা আসমার শরীরে কিছু লালচে চিহ্ন থাকার কথা জানান। আমি এগুলো সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হানিফ সরকার বলেন, সংবাদ পেয়ে আসমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করা হয়েছে। থানায় জিডি হলেও ময়না তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়