প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮
শিক্ষার্থীদের বিকাশে মানসিক স্বাস্থ্য
শিক্ষার্থীর ব্যক্তি-নির্দিষ্ট শিক্ষা গ্রহণ মূলত তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। অনেক সময়ে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, হয়রানি, আতঙ্ক বা ভয়ের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকছে। আর তাদের শিক্ষা গ্রহণের ওপর এর তীব্র প্রভাব পড়ছে। ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত ইয়ুথট্রুথের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা, চাপ বা উদ্বেগের কারণে শিক্ষা গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্বীকার করেছে ৫০ শতাংশের বেশি স্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক) শিক্ষার্থী।
মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত নানান সমস্যা শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে এবং তাদের শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়াকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। আত্মমর্যাদা কমে যাওয়ার কারণে তাদের মনোযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। পড়াশোনা, পরীক্ষা বা নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে। উদ্বেগ ও বিষণ্নতার কারণে ক্রমেই তাদের মনোযোগ কমে যাচ্ছে। ফলে শেখার ক্ষেত্রে মনোযোগ ধরে রাখা, নতুন কিছু সহজে বোঝা অথবা যে কোনো কাজ যথাসময়ে শেষ করার বিষয়ে তাদের অনীহা তৈরি হচ্ছে। নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য ও একাডেমিক ক্যারিয়ার ঠিক রাখতে গিয়ে অথৈ সমুদ্রে পড়ছে এসব শিক্ষার্থী।
এ কারণেই শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি-নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ করতে পারবে, এমন শিক্ষাক্রমের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। যেখানে আলাদা করে প্রত্যেক শিশুর দুর্বলতা ও সক্ষমতা বোঝা যাবে, সে অনুযায়ী তাদের আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করা যাবে। সব মিলিয়ে তাদের শিক্ষা গ্রহণের উপায়কে আরও সুগম করে তোলা যাবে। এ ক্ষেত্রে অনেক স্কুল ও পাঠ্যক্রম সামাজিক আবেগীয় শিখন পদ্ধতির (সোশ্যাল ইমোশনাল লার্নিং-এসইএল) ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এখানে শিশুদের সামাজিক, আবেগীয় ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের শিক্ষা গ্রহণকে সামগ্রিকভাবে বিকশিত করার চেষ্টা করা হয়।
সামাজিক আবেগীয় শিখন পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীকে ৫টি বিষয়ের ওপর দক্ষ করে তোলা হয়। আত্মসচেতনতা একজন শিক্ষার্থীকে নিজের সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে সহায়তা করে। তার নিজের সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সতর্ক করে তোলে। ফলে ওই শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। আত্মব্যবস্থাপনা (সেলফ-ম্যানেজমেন্ট) একজন শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনা, আবেগ ও কার্যক্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসে, যা তার শিক্ষা গ্রহণ ও পরবর্তী জীবনের বিকাশে বিশেষভাবে কাজে লাগে। সামাজিক সচেতনতা (সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস) একজন শিক্ষার্থীর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সমাজে টিকে থাকতে হলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা, সংস্কৃতি ও চিন্তাভাবনার মানুষের সঙ্গে বসবাস করা শিখতে হয়। এ ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা একজন শিক্ষার্থীকে সমাজের বাকি অংশের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল করে তোলে। সম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা (রিলেশনশিপ স্কিল) একজন শিক্ষার্থীকে আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে করণীয় বিষয়ে সহায়তা করে। এই দক্ষতা সমাজে আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা, নানান মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও তা বুঝতে পারা, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা বা সংকটের সমাধান করা এবং সহাবস্থান বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ (রেসপনসিবল ডিসিশন মেকিং) একজন শিক্ষার্থীর পরিস্থিতি অনুযায়ী আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। ফলে ওই শিক্ষার্থী নিজের ও অপরজনের স্বার্থ বজায় রেখে নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা সফল করে তুলতে পারে।
একজন শিক্ষার্থীকে আগামীর জন্য প্রস্তুত করে তুলতে তার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার কোনো বিকল্প নেই। তবে দেশে নানা ধরনের শিক্ষাক্রম চালু থাকায় রাতারাতি তা নিশ্চিত করা বেশ দুঃসাধ্য। মানসিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ প্রয়োজন।