বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

শারদীয় দুর্গোৎসবের সফল সমাপ্তি

শারদীয় দুর্গোৎসবের সফল সমাপ্তি
বিমল চৌধুরী ॥

মহামায়ার মহামায়ার লীলা বুঝি নাকো, শুধু বলি আর বছরে আবার এসো মাগো। হৃদয়ের এমন আকুতি জানিয়ে দুর্গোৎসবের বিদায় পর্ব শেষ করলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের সফল সমাপ্তি হয় গতকাল ৫ অক্টোবর বুধবার। এদিন দশমী বিহীত পূজা শেষে পুরোহিতের পুতঃপবিত্র মন্ত্র পাঠে দেবীকে বিসর্জন দেয়া হয়। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক দেবী কাঠামো বিসর্জন পর্ব। চাঁদপুর শহরের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল। তিনি সকলকে শুভ বিজয়ার অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই উৎসবে আমরাও সামিল হয়েছি। পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছি। আমরা সকল সময় আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো। চাঁদপুর সম্প্রীতির শহর, তা রক্ষায় আমাদের সকলকেই সচেতন থাকতে হবে। আজকের এই বিসর্জন পর্ব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে চাঁদপুর পৌরসভা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। আগামীতে যাতে এস্থানে প্রতিমা বিসর্জনপর্ব আরো সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায় সে লক্ষ্যে আপনাদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সকলের ধর্মীয় উৎসবের সফলতা কামনা করেন।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়ের সভাপ্রধানে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সিনিয়র সহ-সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, পৌর প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াস, পৌর কাউন্সিলর সোহেল রানা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মোর্শেদ জুয়েলসহ বিসর্জনপর্বে আসা বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিগণ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিসর্জন পর্বে সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য সকলেই জেলা পূজা উদযাপন পরিষদসহ পৌর পূজা উদযাপন পরিষদকে ধন্যবাদ জানান।

বিগত বছরগুলোতে মুখার্জি ঘাট এলাকায় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হলেও গত ৩ বছর ধরে প্রতিমা বিসর্জনের সুবিধার্থে চাঁদপুর শহরের চৌধুরী ঘাট (১০নং ঘাট) এলাকায় বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হয়ে আসছে। এ বছর বিসর্জন পর্ব স্থানে দেখা যায় ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা। পূজারীদের বিসর্জনের সুবিধার্থে পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ বিসর্জনস্থলে নির্মাণ করে সুসজ্জিত বিসর্জন মঞ্চ। রাখা হয় পর্যাপ্ত আলোসহ মাইকের ব্যাবস্থা। প্রশাসনসহ কর্তাব্যক্তিদের বসার জন্যে মঞ্চে রাখা হয় চেয়ার। বিসর্জন পর্বে যাতে কোনোরূপ অঘটন না ঘটে বা কেউ শৃঙ্খলা নষ্ট না করে সেজন্য মঞ্চ থেকে দেয়া হয় নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা মেনেই আগত প্রতিমা বিসর্জনকারীরা সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে ঘরে ফেরেন।

গতকাল দশমী বিহীত পূজা শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে দেখা দেয় বিষাদের সুর। যে মণ্ডপ বিগত ৪ দিন যাবৎ ছিল আনন্দমুখর, সেই মণ্ডপেই দেখা দেয় অন্ধকার। দীর্ঘ একবছর অপেক্ষার প্রহর শেষে গত ১ অক্টোবর পূজারীগণ উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু করেন শারদীয় দুর্গোৎসব। আর গতকাল সেই উৎসবেরই পরিসমাপ্তি করেন দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিককে বিসর্জন দিয়ে। বিসর্জনের দিন দুপুর থেকেই মা-বোনেরা পূজা মণ্ডপে ছুটে আসেন দেবীকে বিদায় বেলায় তেল-সিঁদুর পরিয়ে দিতে। এ সময় আগত নারীদের অনেকের চোখে মুখেই ছিল বিষাদের ছায়া। আবার একটি বছর পর দেবী আসবেন মর্ত্য,ে পূজা লাভ করবেন মণ্ডপে মণ্ডপে, তখন হয়তো কেউ থাকবে আবার হয়তো কেউ থাকবে না। এ সত্য উপলব্ধি করে অনেকের চোখই জলে ভরে উঠে। তবে তাদের সকলের প্রার্থনাই ছিল-মাগো তুমি এসো আবার একটি বছর পরে। আমরা যেন থাকি সুখে তোমার আশীর্বাদে।

এ বছর জেলা শহরে ২১৯টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরের পর যার যার সুবিধামত সময় অনুষ্ঠিত হয় দেবী কাঠামো বিসর্জন পর্ব। অনেকস্থানেই বিসর্জনপর্ব চলে রাত ১০টা অবধি। চাঁদপুর শহরের হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্সের দুর্গা প্রতিমা, পুরাণবাজার দাসপাড়া দুর্গা প্রতিমা, নতুনবাজার কুণ্ডের বাড়ি মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা, লেকের পাড় মজুমদার বাড়ির দুর্গা প্রতিমা আর প্রতাপ সাহা রোডের মাখন দাসের বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়নি। এ সকল মণ্ডপের দেবী দুর্গা প্রতিমা আগামী বছর বিসর্জন দেয়া হবে। এছাড়া সকল প্রতিমারই বিসর্জন সম্পন্ন হয় শান্তিপূর্ণভাবে। গতকাল শহরে বিসর্জন পর্ব শুরু হয় বিকেল ৫টায়। এ সময় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃত্বে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পরিলক্ষিত হয়। শোভা যাত্রাসহ প্রতিমা বিসর্জন পর্ব সম্পন্নে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি পৌর পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের সদস্যদের আন্তরিকতা ছিল চোখে পড়ার মত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়