প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০
২৫ জুলাই রোববার চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাপ্রধান ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। জুম প্লাটফর্মে ভার্চুয়ালি আয়োজিত এ সভায় প্রাধান্য পায় করোনা পরিস্থিতি, লকডাউন কার্যকর ও কঠোর করতে নানা পদক্ষেপ, সচেতনতা বৃদ্ধিতে করণীয়, হাসপাতাল পরিস্থিতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আলোচনা।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জানান, জেলার করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বরং দিন দিন এর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। তিনি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানান, এখনো জেলার বেশিরভাগ মানুষই অসচেতন। আর এই অসচেতনতা এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে শিক্ষিত সচেতনদের মধ্যেও। ব্যক্তিগত সুরক্ষা কেউই মানছেন না। কোনো কারণ ছাড়াই সচেতনরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, রিক্সা চলার সুযোগে একটি রিক্সায় ৩-৪ জন বসছেন।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এই অবস্থা কোনো ভাবেই চলতে দেয়া যায় না। তিনি সভায় অংশ নেয়া কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে যে সিদ্ধান্ত নেন তা হলো : এখন থেকে জেলা শহর পৌর এলাকা এবং অন্যান্য পৌরসভা এলাকাসহ অতিরিক্ত লোকসমাগম এলাকাগুলোতে রিক্সা চলাচলও বন্ধ করা হলো। কাল থেকে এটি আরো কঠোর করা হবে। শুধুমাত্র রোগী আনা নেয়া ছাড়া কোনো রিক্সা সড়কে চলাচল করতে পারবে না। আর উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হলেই তাকে জরিমানাই শুধু নয়, গ্রেফতারও করা হবে। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আমার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ প্রদান করছি।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির আলোকে এই কঠোর সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি আশা করি, আজ থেকে এই বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার না হতে এবং করোনা আক্রান্ত থেকে নিজেকে রক্ষা, পরিবারকে রক্ষা এবং অন্যকে বাঁচতে ঘরে অবস্থান করুন। আর আপনারা যারা কর্মহীন হবেন, যদি খাদ্য সংকটে পড়েন, আপনার খাদ্য সহায়তা পেতে ৩৩৩ নাম্বারে ডায়াল করবেন, খাদ্য পৌঁছে দেয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর মেয়রসহ আমাদের যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তারা কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করবেন। জনপ্রতিনিধিরাও যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন।
জেলার করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক আপডেট জানাতে বিশেষ করে সিভিল সার্জন ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, করোনা পরিস্থিতি এখানে চরম অবস্থায় এবং দিনদিনই অবনতি হচ্ছে। গড়ে এখন ৩ শতাধিক স্যাম্পল নেয়া হচ্ছে। রোগী যে হারে বাড়ছে, তাতে এখন অক্সিজেন সংকটও দেখা দিয়েছে। রোগীর চাপ বাড়ছে জেনারেল হাসপাতালের দিকে। উপজেলায় করোনা বেড থাকা সত্ত্বেও সেসব এলাকার রোগীরা জেনারেল হাসপাতালমুখী। রোগীদের এই প্রবণতারোধে আমাদের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং করোনা প্রতিরোধ কমিটির সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালেই ২০টি করে করোনা বেড বাড়ানো হয়েছে।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, আমরা আমাদের পৌরসভার উদ্যোগে একটা কন্ট্রোলরুম খুলেছি। এদিকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার থেকে আমরা স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে, গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে তারা স্বাস্থবিধি মেনে কাজ করবে। তিনি বলেন, অযথা ঘোরাঘুরি এবং অপ্রয়োজনে রিক্সা চলতে দেয়া যাবে না। আমার পৌরসভার পক্ষে আমরা যা যা করণীয় সেটা আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে থেকে করবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সময়ে কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমিও লক্ষ করছি, একটা উছিলা ধরে রিক্সায় বা হেঁটে অপ্রয়োজনে লোক রাস্তায় ঘুরে। শুধু রিক্সাই না, কেউ সাইকেলে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। এসব চলতে দেয়া যায় না।
সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বলেন, আমি সরকারি জেনারেল হাসপাতালে জীবাণুনাশক যন্ত্রের ব্যবস্থা করে দেবো এবং ৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেবো। তিনি বর্তমানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমিয়ে আনারও অনুরোধ জানান।
সভায় জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীও ৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ^াস দেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, কর্মহীন রিক্সা শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের পাশে খাদ্য সহায়তায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন এবং সরকারের অন্যান্য স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি যারা বিত্তবান, ধনাঢ্য ব্যক্তি আছেন, তারা দাঁড়ান। না হলে অনেক মানুষই কঠোর লকডাউনের সময়ে সমস্যায় পড়ে যাবে।
এ সভায় আরো সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, এনএসআই ডিডি শেখ আরমান আহমেদ, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিবুল করিম, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, মতলব উত্তর উপজলা পরিষদ চেয়ারম্যান আঃ কুদ্দুস, মতলব পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন লিটন, পিডিবি নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, জেলা তথ্য অফিসার মনির হোসেন প্রমুখ। এছাড়া সভায় শাহরাস্তি পৌর মেয়র, সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।