প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৩
ডিজিটাল ভুত
রাত প্রায় দশটা বাজে। একটা টিনের ঘর। ভেতরে মোবাইল দেখছে ১৫ বছর বয়সী অনিক। মোবাইলে খুব নিমগ্ন। ভূতের ভিডিও দেখছে। এ সময় দরজায় ঠক্ঠক্ আওয়াজ। চমকে উঠলো অনিক। হাতের মোবাইলটা পড়ে গেল ফ্লোরে। মোবাইল থেকে খুব উচ্চকণ্ঠে ভূতের আওয়াজ আসছে- হা হা হা। শব্দ শুনে ভয়ে কুঁকড়ে গেলো অনিক। এদিকে দরজায় ঠক্ঠক্ আওয়াজ চলছে। খুব কম্পিত হস্তে দরজা খুলে দিলো অনিক। তারপর অন্ধকারে পরনে কালো পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে দেখে সে আরো ভয় পেয়ে তোতলাতে শুরু করলো।
অনিক : ক্কে, ক্কে? আগন্তুক লোককে ঠিক ভূতের মতোই লাগছে। লোকটা কথা বলে উঠলো : কিরে অনিক, কেমন আছিস? কি হয়েছে তোর? এমন ভয় পাচ্ছিস কেনো? অনিক খুব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘কে তুমি?’ লোকটা বললো, ‘আরে, আমি তোর মামা। সুজন।’ অনিকের মুখ থেকে উচ্চারিত হলো, ‘ওহ।’ যেনো সে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। সুজন : কি হয়েছে সোনা? এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? অনিক : মামা! মামা!’ এমন সময় সুজনের চোখ পড়লো ফ্লোরে থাকা অনিকের মোবাইলটার উপরে। সেটা থেকে ভূতের হা হা হা শব্দ আসছে। সে ফ্লোরে পড়ে থাকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে অনিককে বললো, ‘ওহ, তুই ভূতের ফিল্ম দেখছিস? ভূতের ফিল্ম দেখে ভয় পাচ্ছিস?’ অনিক হতভম্বের মতো হ্যাঁসূচক মাথা নেড়ে উত্তর দিলো, ‘হ্যাঁ মামা।’ সুজন প্রশ্ন করলো, ‘তোর মা কোথায়?’ অনিক উত্তর দিলো, ‘রান্নাঘরে।’ ঠিক সেই সময় অনিকের মা সুমি বেগম মামা-ভাগ্নের কথা শুনে এদিকেই এলেন। তারপর ভাই সুজনকে দেখে প্রশ্ন করলেন, ‘কিরে সুজন, কখন এলি?’ ‘এই তো আপা, এই মাত্র এলাম। তো, দুলাভাইয়ের খবর কি?’ ‘আর বলিস না! তোর দুলাভাই সৌদি আটকা পড়ছে। কিসব কাগজপত্র নাকি ঠিক নাই! তাই আসতে পারছে না।’ ‘আচ্ছা, বুঝেছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। শোন আপা, অনিক কি সব সময়ই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে?’
‘এই তো মাঝে মাঝে ওর হাতে মোবাইলটা দিয়া আমি কাজকর্ম করি, রান্নাবান্না করি। না হলে তো ও দুষ্টামি করবে, জ্বালাবে।’ ‘শোন আপা, এখনকার ছেলেপুলে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়া ব্যস্ত থাকায় পড়ালেখার গুষ্টিসহ ভুলে গেছে। স্কুলে গিয়েও ওই মোবাইলে গেমের চিন্তা, ভূতের ছবি চিন্তায় থাকে। আর ধীরে ধীরে তাদের মন-মগজ পড়ালেখার চিন্তা বাদ দিয়া অকমণ্য হতে থাকে।’ ‘তাহলে কি করবো? ওরা তো দুষ্টামি করে। মোবাইলটা হাতে পাইলে ওটা নিয়াই ব্যস্ত থাকে, জ্বালায় কম।’ ‘যেইকালে মোবাইল ছিলো না, ওই কালে কি পোলাপান জ্বালাইতো না? বাপ-মায় ওদের পড়ালেখা করাতো না?’ ‘এহন তো সব ডিজিটাল হইয়া গেছে। কি আর করমু ভাই!’ ‘ঠিক আছে ডিজিটাল হইছে। কিন্তু আমাদের মতো গার্ডিয়ানদেরকে সজাগ থাকতে হবে। এরা বড় হইতে হইতে তো এই মোবাইলের নেশা ছাড়তে পারবো না। তাহলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ সন্তানেরা মেধাবী হবে কি করে?’
এমন সময় অনিকের দিকে সুজনের চোখ পড়ে। অনিক এখনও হতভম্বের মতোই আছে। ‘দেখছোস তোর পোলাডা ভূতের ছবি দেইখ্যা কেমন টাস্কি খায়া আছে? এরে তো সঠিকভাবে মানুষ করণ লাগবো।’ সুজন তার ব্যাগ থেকে একটা সবুজ টিয়া পাখি বের করে। তারপর অনিকের হাতে দেয়। ‘এটা কি মামা?’ খুব খুশি হয়ে প্রশ্ন করে অনিক। ‘নে, তোর জন্য আনছি। এটা তোর জব্বর খেলনা টিয়া। এই টিয়া কথাও বলতে পারে। এটা ডিজিটাল টিয়া।’ মামা কথাগুলো বলে হাসলো। ‘মামা এটায় কথা কইবো?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অনিক। সুজন কিছু বলার আগেই, সুমি বললো, ‘আচ্ছা এটা পরে দেখিস। আয় তোরা খাবার খেতে আয়।’ সুমির কথায় মামা-ভাগ্নে দু’জনই খাবার ঘরের দিকে রওনা হয়। চলবে।