প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৪
ভুতের কবলে
আমার তিন মেয়ে। নাম তাদের , আমারা, বিনতে, আলিয়া। খুব দুষ্টু, মিষ্টু সন্তান আমার। খেলা পেলে তাদের আর কিছুই চাই না । আমারার বয়স ১৩। বিনয়ের বয়স ১০ । আর আদিয়ার বয়স ৮। বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। মেজো মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তথাপি মেয়ে তিন জনই খুব দুষ্টু এবং তারা এখনও নিজের হাতে খাবার খাওয়া, পানি খাওয়া কিছুই শিখে নি। তাদের যে ক্ষুদা লাগে তাও তারা বলতে পারে না ।
যত কিছু আছে তা পরম করুনাময়ী মা সুমাইয়াকে সামলাতে হয়। সময় মত আমাকে খাবার খাবিয়ে দিতে হয়। পানি খাবিয়ে দিতে হয়। নয়তো কেউ কিছুই খায় না। যেদিন যেদিন রাতে আমার কাজে একটু চাপ থাকে, খাওয়াতে লেট হয়ে যায় ওমনেতেই ঘুমিয়ে যাবে তারা। কিন্তু শুধু একটা দিক খুব ভালো পারে তারা। তা হল স্কুলে যাওয়ার সময় নিজেরাই রেডি হবে। সবকিছু নিয়ে আমার কাছে আসবে। সব ঠিক করে দেই। আমার শত কাজের মাঝেও ওদেরকে সময় দিতে ভুলিনা।
তবে আমার এই কষ্টের সংসার ওদেরকে নিয়ে আমার বেঁচে থাকা। ছোট একটা সংসার আমার। এই মেয়েরাই আমার বেঁচে থাকার শক্তি। আমারার বাবা খুব ছোটখাটো একটা চাকরি করে, যা দিয়ে কোনো রকম সংসার চালানো যায়। তবে যে মাসে বেতন দেরি করে দেয় সেই মাসে আমাদের সংসারে বাচ্চাদের নিয়ে তিন বেলা খেতে পারি না। খুব কষ্টেই দিন কাটতে হয়। আমি সেলাই করি তাতে করে যা আয় হয় তাদেরই ওদের পড়াশোনার খরচ চালায়। এভাবেই চলছে আমার আমাদের সংসার।
তবে কিছুদিন ধরে আমার মেয়ে আমারা বেশ চুপচাপ হয়ে থাকে। বন্ধুর সাথে কথা বলে না, তাদের সাথে খেলাধুলা করে না, তাদের সাথে মিশে না, তাদের সাথে দুষ্টুমিও করে না। খাবার খাইয়ে দিলেও খেতে চায় না। শুধু একা খেতে চায় সবার সাথে খেতে চায় না। মাছ পাইলে খায় মাংস আবার সবজি রান্না করলে খেতে একদমই চায় না। স্কুলে যায় তবে আগের মত পড়াশোনাও করছে না। স্কুলে আগের মত খেলাধুলাও করে না, বন্ধুদের সাথে কথাও বলে না, মিশেও না কারো সাথে। সারাক্ষণ আমি মনে বসে থাকে জানালার পাশে। কিছু জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলে না। কেন? কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমি।। আমারা, বিনতে, আদিয়া এক রুমেই ঘুমাতো। তবে আমরা ইদানিং তাদের সাথে ঘুমোতে চাচ্ছেনা। সে একা একা ঘুমাতে চাচ্ছে। এতে করে আমার মনে বেশ প্রশ্ন জাগচ্ছিল। তবে তার চাইতে মনটা বেশি খারাপ হয়ে গেছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। মেয়েটার চিন্তায় ঘুম হচ্ছিল না। এপাশ-ওপাশ করতে করতে পানি পিপাসা লেগে যায়। তাই পানি খাওয়ার জন্য কিচেন রুমে গিয়ে দেখি, আমারা কিচেন রুমে বসে কাঁচা মাছ খাচ্ছে। আমি ডাক দিতেই আমারা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। কি হচ্ছে এসব? আমি ভয়ে ভয়ে তাক তাকিয়েই রইলাম। চোখ দুটো লাল রক্তের মত হয়ে আছে। কারণ মনিটা নাই অথচ মনি টাই লাল রঙের হয়ে আছে। চোখ থেকে ঘুরিয়ে পড়ছে তাজা রক্ত। রুমটাতে রক্তে রক্তাক্ত হয়ে আছে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। আমার হাত পা অবশ হয়ে আসছিল। আমি এক চিৎকার দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতেই, জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলাম। কি হয়েছিল তা আমার কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরতেই দেখি, আমারা, বিনতে, আলিয়া সবাই আমার সামনে বসে আছে। ডাক্তার এসে দেখে গেছে আমাকে। আমি এক দৃষ্টিতে আমারার দিকে তাকিয়ে আছি।আমারা : কি মা ?কিছু বলবা? কেমন লাগছে এখন?
আমি : তোর শরীর ভালো ? রাতে ঘুম হয়েছে কি?
আমারা : হুম, ঘুম তো ভালোই হলো ।তোমার চিৎকারই তো উঠে আসলাম।
আমি : আমি জ্ঞান হারানোর সময় তুই কোথায় ছিলি?
আমারা : রুমে ছিলাম, বোনদের সাথে কি হয়েছে মা তোমার?
আমি : কিছু না মা, ( আমি উঠে কিচেন রুমে গেলাম গিয়ে দেখি সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সবকিছুই পরিপাটি হয়ে আছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। তাহলে রাতে কি হয়েছিল? তাহলে কি সব মনের ভুল। এমন ভুল কি করে হতে পারে আমার? )
আর কিছু ভাবতে পারছি না। সব ছেড়ে ফেলে দিয়ে সবার জন্য খাবার রান্না করতে চলে এলাম । রান্না শেষ করে গোসলে ঢুকলাম । গোসল শেষ করে নামাজ পড়ে বাচ্চাদের জন্য খাবার নিতে গিয়ে আমি রীতিমতো চমকে গেলাম! একি করে সম্ভব আমি মাত্রই তো মাছ রান্না করে গেলাম। এখন একটি মাছ ও নেই । মেয়েদের রুমে গিয়ে দেখি আমারা ওয়াশরুমে কি যেন করছে আর কেমনে যেন একটা অদ্ভুত আওয়াজ করছে । আমি ডাকতেই সব যেন শান্ত হয়ে গেলো। আমার ভয় ভারতে লাগলো সাথে সাথে আমারার বাবাকে রাতের সকল ঘটনা জানালাম । এবং সকাল থেকে এই পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব জানালাম। ও একটু ও দেরি না করে কবিরাজ আনতে চলে গেল। কবিরাজ আসলো আমারা উৎপাত শুরু করে দিলো। কবিরাজ ওনার দোয়া দিয়ে আমারাকে শান্ত করে । উনার সামনে বসালো আমারা চোখ বড় বড় করে ওনার সামনে বসে আছে মনে হচ্ছে না এটা যে আমারা। মনে হচ্ছে আমারার শরীরে অন্য কেউ আছে যা আমরা দেখছি না। আমরা সবাই ভয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে আছি ।কবিরাজ : কে তুই আর কেন আসলি এখানে ?
আমারা : হাহাহাহা ( অট্রা হাসিতে অনবরত হাসছে)
কবিরাজ: বল কে তুই?
আমারা : ভূত! জিনিস ভূত?( অট্টা হাসিতে)
কবিরাজ : তুই এর শরীরে কেন আসলি?
আমারা : আমার ইচ্ছে তাই।
কবিরাজ: সত্যি সত্যি বল নয়তো তোকে এ বোতলে আটকে ফেলব।
আমারা: না না আমাকে বোতলে বলবেন না।
কবিরাজ: আমিও আমারার মতই এত ছোট্র একটা মেয়ে ছিলাম। খুব কষ্টে আমাদের সংসার চলত। দিন আনতে পান্তা ফুরাত । দিনে এনে দিন খেতাম। কবে মাছ খেয়েছিলাম তা ভুলেই গিয়েছিলাম। একদিন খুব মাছ খেতে ইচ্ছে করলো। বাবাকে বললাম আমার খুব মাছ খেতে ইচ্ছে করছে। বাবা শত চেষ্টার পরেও এক টুকরো মাছ জোগাড় করতে পারিনি। আমি সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তাই খুব কেঁদেছিলাম মাছ খাব মাছ খাব বলে। বাবা আমার চোখের পানি সহ্য করতে পারিনি । তাই বাবা সেদিন প্রথম সাহায্য চাওয়ার জন্য মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গেল। কিন্তু এক টুকরো মা জোগাড় করতে পারল না। সেদিন প্রত্যেকটা মানুষ হই বাবাকে অপমান করলো। বাবা সেই অপমান সহ্য করতে পারল না। তাই নিজের গায়েই আগুন লাগিয়ে দিল। মা-বাবার শরীরে আগুন দেখে বাবাকে বাঁচাতে গেল। আমি ও কান্না করতে করতে মাকে ধরতে গেলাম। নিমিষেই আমরা তিনজনেই পুড়ে মারা গেলাম। আর তারপর থেকে আমি ভূত হয়ে গেলাম।
কবিরাজ: তাহলে তুই আমারাকেই বা কেন ধরলি?
আমারা : ও আমারই বয়সি তাই ধরেছি।
কবিরাজ: আমি তোকে বোতলে ভরবো না। কি করলে তুই সবাইকে মুক্তি দিবি?
আমারা : আমাকে আজ হরেক রকমের মাছ খাওয়াতে হবে। তাহলেই আমি মুক্তি দিব সবাইকে।
কবিরাজ: ঠিক আছে ,তাহলে তাই হবে।
আমি অনেক রকমের মাছ রান্না করলাম আর এগুলো সব ভূতকে খেতে দিলাম। পিচ্চি ভুতটা সবগুলো মাছ খেলো। আমারা কে মুক্তি দিয়ে গেল। এখন আমারা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। এখন আমরা আগের মতোই দিন কাটাতে লাগলাম। আগের মত ই সুখী সংসার হয়ে গেল আমার।