রেমিট্যান্স যোদ্ধার ওপর এমন হামলা মেনে নেয়া যায় না

চাঁদপুর শহরের ১৩নং ওয়ার্ডের মধ্য তরপুরচণ্ডী গ্যাস কোম্পানি এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুবাই প্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৪২)কে কুপিয়ে জখম করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী। চাঁদপুর সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মধ্য তরপুরচণ্ডী গ্যাস কোম্পানি এলাকার গাজী বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে বেশ কিছু দিন যাবৎ ঝামেলা চলে আসছে। ওই বাড়ির বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী রফিকুল ইসলাম গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিন মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ছুটি স্বল্প সময়ের জন্যে, তাই অন্যান্যের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিবারের সদস্যদের বসবাসের জন্যে একটি বসতঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এই অবস্থায় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর ২০২৪) বিকেলে কোনো কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সোহরাব আখন্দ (৫২), আক্তার আখন্দ (৪২), পিতা রুস্তম আখন্দ ও রাজ্জাক বরকন্দাজের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি লুটপাট করে এবং ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালায়। এই হামলায় বাধা দেওয়ায় উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা দুবাই প্রবাসী রফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। শুধু তাই নয়, হামলাকারীরা প্রবাসীর ভাই আনোয়ার গাজী ও তার ভাবী নাজমা বেগমকেও মারধর করে।

আহত প্রবাসী রফিকুল ইসলাম জানান, হামলাকারীরা তার বসতঘরে হামলা করে লুটপাট ও ব্যাপক ভাংচুর করে। ঘরে থাকা দুবাই থেকে আনা ৮ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৪ লাখ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এদিকে তাণ্ডবলীলা দেখে স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহার মিয়াকে জানালে এএসআই মিজান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। বর্তমানে আহত প্রবাসী রফিকুল ইসলাম, তার ভাই আনোয়ার গাজী, ভাবী নাজমা বেগম চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ বিষয়ে মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া বলেন, ঘটনার কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। আহতরা চাইলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রবাসী তথা রেমিট্যান্স যোদ্ধার ওপর হামলার খবরটি প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বের সাথে ছাপা হয়। এ খবরটি পাঠ করে সচেতন মানুষ মাত্রই ব্যথিত না হয়ে পারে না।

চাঁদপুর শহরের যে এলাকায় বসতঘর নির্মাণ করতে গিয়ে দুবাই প্রবাসী রফিকুল ইসলাম নিজ বাড়ির লোকজন নয়, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলার শিকার হলেন, সেই এলাকা ও চারপাশের সংলগ্ন এলাকাসমূহ ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। এমন তথ্যে ও মন্তব্যে এসব এলাকার লোকজনদের কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন, তবে এই মন্তব্যের অনুকূলে যে কোনো গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখার মতো তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এখানকার ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের লোকজনের মদদপুষ্ট ও জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্রয়প্রাপ্ত বলে জনশ্রুতি যেমন রয়েছে, তেমনি অনেক প্রমাণ রয়েছে। এরা ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর খোলস পাল্টে নূতন রূপ ধারণ করেছে কিনা সেটা ভেবে দেখার বিষয়। এদের পালিতরা রফিকুল ইসলামের মতো একজন নিরীহ রেমিট্যান্স যোদ্ধার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলে আমাদের কাছে অনুমিত হচ্ছে, যেটা সচেতন কোনো মানুষের পক্ষে মেনে নেয়ার মতো নয়। আমরা রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাগ্রহণ প্রত্যাশা করছি।