শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় খালু কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের শিকার
  •   সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করায় ইমামকে চাকরি ছাড়ার নির্দেশ!
  •   এনআইডিতে ভোটার এলাকা হিসেবে থাকছে না বর্তমান ঠিকানা
  •   জাহাজে ৭ খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি
  •   নিখোঁজের একদিন পর বৃদ্ধের মরদেহ মিললো পুকুরে

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৫

শিশুর শিখুনে ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ

রাশেদা আতিক রোজী
শিশুর শিখুনে ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ

এই ডিজিটাল যুগে সাহিত্যসহ সব শিখন-শেখানো কার্যক্রম হাতেকলমে (ঐধহফং ড়হ) পরিচালিত হচ্ছে। অনেকে ভেবে থাকে হাতেকলমে শিখন হচ্ছে বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আদতে শুধু তাহাই না।প্রচলিত পদ্ধতিতে” শিক্ষক লেকচার দিয়ে যাবে আর শিক্ষার্থী সেখান থেকে পরোক্ষভাবে ( passive) লার্নিং “এর দিন শেষ। তাই এখন সক্রিয় (অপঃরাব) লানিংয়ের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অর্থাৎ যে কোনো শেখার ক্রিয়াকলাপ যেখানে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে বা শেখার প্রক্রিয়ার সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে।তথ্য নিষ্ক্রিয়ভাবে গ্রহণের বিপরীতে অংশগ্রহণ করে ধরে, ছুঁয়ে, খেলে, ভেঙ্গে, বানিয়ে, খেয়ে, কাজ করে, নিজে দেখে ইত্যাদি উপায়ে অর্জন করে।

এখন প্রথম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের প্রথম শুরু হয়েছে Greetings দিয়ে। এখানে (এ) ও (বি) তে আছে Look, Listen, Say. এই চ্যাপ্টার শিক্ষার্থী টু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক টু শিক্ষার্থী রোল প্লে করে অনুশীলন করলেই সেটা হবে হাতেকলমে শিক্ষা। অন্যদিকে এক শিক্ষার্থী বলবে Say) Good morning, তখন অন্য শিক্ষার্থী শুনে (Listen) সেও বলবে তাহলে (Say) Good morning,তাহলে Look (দেখা) হবে কীভাবে? এখানে প্রথমত, বইতে যেভাবে ছবিতে দেয়া হয়েছে সেটাকে দেখার কথা বলা হয়েছে।আর দ্বিতীয়ত, নিজেরা (শিক্ষার্থীর) যখন Greetings করবে তখন একে অপরকে Look, Listen Say করবে। এই প্রসেসে শিশুদের সক্রিয় রোল প্লেই হাতেকলমে (Hands on) শিক্ষা। আর এই প্রক্রিয়াটা যদি ইন্টারএ্যাক্টিভ হোয়াইট বোর্ডে বা স্ক্রিনে দেখানোই হলো ডিজিটাল ম্যাটেরিয়ালস। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা হচ্ছে সহায়কের। শিক্ষক শুধু পরিবেশ সৃষ্টি করে দিবেন। আর মনিটর করবেন শিক্ষার্থীরা রাইট ওয়ে আছে কী না? যখনই শিক্ষার্থীরা ট্র্যাকের বাইরে চলে যাবে তখনই শিক্ষক মৃদু হস্তক্ষেপ করে সঠিক পথে নিয়ে আসবেন।তাই, মঞ্চে শিক্ষকের ভূমিকা গৌণ হলেও নেপথ্যে শিক্ষকের দায়িত্বই মুখ্য আর সেটা হচ্ছে নির্ধারিত পাঠটাকে কীভাবে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক করা যায়।কি ভাবে হাতেকলমে শিক্ষা দেয়া যায়।কীভাবে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, কীভাবে বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার করা যায় ইত্যাদি পরিকল্পনা শিক্ষককে শ্রেণির বাইরেই প্লান করতে হবে।

একা একা পড়ে শেখার দিন শেষ। এখন দলে শেখার সংস্কৃতির যুগ। শ্রেণিতেও দল গঠন করে আলোচনার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এটাকে শিক্ষা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে collaborative learning (পারস্পরিক সহযোগিতায় শিখন)।এই আলোচনায় দলের সদস্যগণ নিজেদের অতীত অভিজ্ঞতা বা জানার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে একে অপরকে সহায়তা করতে পারে।ফলে তারা একটা উত্তম সিদ্ধান্ত বাছাই করতে সক্ষম হবে। এখন এই গ্রুপ আলোচনা করতে এক জায়গায় বা ক্লাসে বসতে হবে, এমন না।এখানেই প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্লাটফর্মে (জুম, হোয়াটসএ্যাপ,গুগল মিট ইত্যাদি ) বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছি। এসব ফ্লাটফর্মে অংশগ্রহণের জন্য কোন ধরাবাঁধা টাইমটেবল নেই।প্রচলিত ক্লাসরুম কনসেপ্ট থেকে বের হয়ে আসতেছে এই আধুনিক সভ্যতা। আবার ক্লাসের গ্রুপ আলোচনার আউটকামও প্রযুক্তির সহায়তায় তাৎক্ষণিক প্রদর্শণ করে অন্যের ফীডব্যাক নেয়া যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর মাঝে প্রিন্ট বইয়ের ব্যবহার কমে আসবে। আমাদের পিঠের ব্যাগে বইয়ের পরিবর্তে ল্যাপটপ বা অন্য ডিভাইস থাকবে। এমন কী অফিস-আদালতেও অফিসে যেয়ে কাজ করার ঐতিহ্য হারিয়ে ঘরে বসে অফিস করার সংস্কৃতি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এ বিষয়ে সৃষ্টিকর্তা করোনা দিয়ে সবাইকে ইতোমধ্যে অনুশীলন করে গেছে।

এই চলমান শতাব্দীর মাঝেই টিচিং-লানিং শুধু ট্রেডিশনাল শ্রেণিকক্ষের মধ্যে থাকছে না। সেই পুরনো শ্নোগান 'বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র' অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষ আর নির্ধারিত জায়গার মধ্যে নিহিত থাকছে না। প্রচলিত সংস্কৃতিতে শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে আসে কিন্তু সামনের দিনে শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীদের পেছনে হাটবে। এই প্রসেসে মূল মিডিয়া হবে ডিজিটাল ডিভাইস। ফলে দৃশ্যমান বড় বড় অট্টালিকায় শ্রেণিকক্ষের ধারনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।তখন ব্লেন্ডেড লার্নিং এর গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে যাবে। তবে এটা ঠিক, শ্রেণিকক্ষের চিরায়ত আবেদন কখনো বিলোপ হবে না। তবে সেটা বেঞ্চ, টেবিল, বোর্ড, চক ডাস্টার কনসেপ্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের সমন্বয়ে বিরাট পরিবর্তন শ্রেণিকক্ষে দেখা যাবে। অর্থাৎ এক কথায় টিচিং-লার্নিং হতে যাচ্ছে এডুকেশন প্রযুক্তি নির্ভর। অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজিনসী/কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলোকে।

অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় রাখতে আমার মতে নিম্নলিখিত ৩টি টিপস কার্যকর হতে পারে:

১. ইন্টারঅ্যাকটিভ এবং মজার পদ্ধতিতে পাঠদান।

শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে বেশি আকর্ষণীয় ও শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক করে তুলুন। গেম, গল্প বলার পদ্ধতি, চিত্র বা ভিডিও ব্যবহার করে পাঠকে সহজ ও মজার করুন।

২. ব্যক্তিগত মনোযোগ প্রদান প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শক্তি ও দুর্বলতা বুঝে তার প্রতি আলাদাভাবে মনোযোগ দিন। অমনোযোগী শিক্ষার্থীর সমস্যাগুলো বুঝে সমাধানের চেষ্টা করুন এবং তাকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিন যা তার মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক।

৩. বিরতি এবং শরীরচর্চার অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘসময় বসে থাকতে বাধ্য না করে মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র বিরতি দিন। এই সময়ে হালকা শরীরচর্চা বা ছোট মজার খেলায় অংশগ্রহণ করালে তাদের মনোযোগ ফিরে আসবে এবং তারা পুনরায় শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় হতে পারবে। এই পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করলে অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের মনোযোগ উন্নত করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়