প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১২
মানবতা
আমি অনুপমা। আমার এক আত্মীয়র বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছি। বলতে গেলে আমার ফুফাতো বোনের নন্দাই এর বিয়ে। খুব ভালোবাসেন ওনারা আমাকে।বিয়েতে নাকি আমি আসতেই হবে। আর ফুফাতো বোনের নন্দাই বলেছে আপনি না আসলে আমি কবুল বলবোনা। এ আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি ক্ষুদ্র মানুষ তারা সকলে এতো ভালোবাসে আমাকে এবং ওনারা আমাকে এতো মূল্যায়ন করেন এ কথা ভেবে কেমন জানি গর্ব হচ্ছে। তড়িঘড়ি করে চলে আসলাম। রীতিমত রূপকথার গল্পের মতো বিয়েতে সকল আয়োজন। রাতে যখন সকলকে কাজে সাহায্য করতেছি, তার মাঝে তোমার সাথে দেখা। আমি ঘি এগিয়ে দিচ্ছিলাম। ততক্ষণে তুমি দুটো চেয়ার নিয়ে এসে বল্লে চলো একটু কথা বলি। আমার জগৎ যেন থমকে গেল। কাজে আর পা এগুতে পারছিলাম না। কি জানি কী ভেবে পিছু পিছু এসে বসলাম দুজন এক সাথে। তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে কেমন আছো অনুপমা, উওরে নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ গলায় বলেছিলাম ভালো আছি।তুমি?
|আরো খবর
হ্যাঁ আমিও ভালো আছি। তা ক'বছর পর দেখা হলো আমাদের। আমি বল্লাম চৌদ্দ বছর, তিন মাস, দু-দিন। নিলয় কুমার একটু অবাক হলো! আমার এভাবে বলাটা।
যাক চলেন এবার নিলয় এর বেপারে বলি। নিলয় আর আমি এক কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করি। অনেক দিনের কোর্স এক সাথে চলাফেরায় দুজনের মধ্য কখন যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল বুজতে পারিনি। এমন পর্যায় এসে দাড়িয়েছে দু'জন যেন দু'জন কে ছাড়া মূল্যহীন। এ নীল আকাশটা যেন অন্ধকার হয়ে যেত যদি দেখা না হত। যেহেতু পড়াশোনা করতে গিয়ে দুজন দু'জন কে এমন ভাবে চেনা হয়েছে মনে হত অন্য কেউ জীবনে আসলে এমন বুজবেনা। আমি নিলয় কুমারের অনেক সাহায্য করতাম পড়াশোনায়। ওর থেকে একটু ভালো মার্ক সব সময় আমি পেতাম। তাই সে বলতো অনু আমায় একদম গুরুত্বপূর্ণ করে কিছু নোট করে দাও। যাতে অন্তত প্রথম না হতে পারি তোমার মত দ্বিতীয় বা তৃতীয় হতে পারি। আমি নিলয় কে নিলয় কুমার বলে ডাকতাম। আর নিলয় কুমার আমাকে অনু বলে ডাকতো। কেননা সে আমার রাজ্যে একমাএ রাজকুমার। আমার এ নামে নিলয় কুমার একটু ও রাগান্বিত হতোনা। বরং খুব খুশি হতো। বলতো তুমি যেভাবে আমাকে ডাকো আমার চলবে। শুধু তুমি সারাজীবন পাশে থেক। বাসায় জানানো হলো আমাদের সম্পর্ক। নিলয় কুমার আর আমাদের পরিবার একদম ধনী ও নয় গরীব ও নয় মধ্যবিও। দুজনের পরিবারের অনেক টা ভালো দিন কাটে। পরিবার থেকে পরিকল্পনা করে আমাদের বিয়ে দেওয়া হলো। বিয়ের এক বছর পর আমাদের একজন পুএ সন্তান হলো তার নাম রাখা হলো, আর্বিয়াল কুমার নিহিতার্থ যেহেতু আমি নিলয় কুমার বলে ডাকি সে নাম ধরে আমার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা। বিয়ের তিন বছর পর নিলয় কুমার হঠাৎ করে উধাও। কোন খোঁজ-খবর নেই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বহুদিন খুঁজেছি নিরাশ হওয়া ছাড়া কিছু-ই মিলেনি। এভাবেই কেটে গেল বিয়ের চৌদ্দটা বছর। আর্বিয়াল কুমার নিহিতার্থ এখন সব কিছু বুজে। আমাকে প্রায় জিজ্ঞেস করে বাবা কোথায়? কেন আসেনা মা। আমাদের কী বাবার একটু মনে পড়েনা। ওর মত করে হাজারটা প্রশ্নও করে যায়। আর আমিও রোজ মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওকে বিব্রতবোধ করি। কেননা আমার তো এ প্রশ্নের উত্তর জানানেই। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আমাদের দিনগুলো। দুজন এক সাথে বসে কিছুক্ষন কথা বলার পর আর্বিয়াল কুমার নিহিতার্থ আমার কাছে আসলো। ওকে কোলে নিয়ে বসে কথা বলতেছি। তার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলো আম্মু আংকেলটা কে? আমি বল্লাম বড়দের মাঝে ছোটরা কথা বলেনা বাবা।তখনি আর্বিয়াল কুমার নিহিতার্থ চুপ করে বসেছিল। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মতো কথা বলেছিলাম আমি আর নিলয় কুমার। তখন নিলয় কুমার নিহিতার্থের দিকে তাকিয়ে বলে এটা কী আমাদের সন্তান? বাহ্ অনেক বড় হয়েছে। কথা বলতে শিখেছে, প্রশ্ন ও করতে পারে। তবে অনেক টা চুপচাপ যাকে বলা হয় লক্ষীছেলে।উত্তরে আমি বলেছি। আমি আমার মতো করে তাকে সংস্কৃতি শিখিয়েছি। মানবতা, আদাপ-কায়দা অনুযায়ী চলাফেরা শিখিয়েছি। নিলয় কুমার বলে ভালোতো। তা দেখেই বুজতে পেরেছি। ঠিক তোমার মতো হয়েছে দেখতে। আর নিয়ম নীতি ও তোমার খুব নিখুঁতভাবে শ্রেনিবিন্যাস করিয়েছো ওর মধ্যে। আমি চুপচাপ ওর কথা গুলো শুনে যাচ্ছি। আর ওর মুখে আমার অনু নামটা শুনবার তীব্র ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু বার বার অনুপমা বলে ডাক ধরেই সকল কথা বলতেছে। আমি ওর এ পরিবর্তন দেখে একদম চমকে গিয়েছিলাম। একটা পর্যায় আমি জিজ্ঞেস করি থথকেন ছেড়ে গিয়েছিলে আমাকে? কোন ভুল ত্রুটি দেখলে বলতে শুধরে নিতাম। এভাবে একলা ফেলে চলে না গেলেও পারতেথ!
আর্বিয়াল কুমার নিহিতার্থকে নিয়ে এতোটা পথ আসছে আমার অনেক কস্ট হয়েছে। তার মাঝে তুমি চলে যাওয়ার এ তীব্র শোক আমাকে প্রতিনিয়ত বইতে হয়েছিল। প্রশ্ন বিত্ব হয়েছিল এ জীবন। একেক সময় মনে হয়েছিল চলেই বুজি যাব এ বুজি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করবো। কিন্তু বিধাতা আমাকে বোধহয় নিহিতার্থের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। শুকরিয়া করি আমি। নিলয় কুমার আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে যায়। পরদিন খাবার টেবিলে ওর পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে আমাকে আলাপ করায় একেকজন করে। আমি ভাবলাম হয়তোবা শহরের কোন আত্মীয় হতে পারে। যেটা আমার অজানা ছিলো। কিন্তু যখন বল্লো অনুপমা এ হলো তৃণা। আর এ হলো আমার মেয়ে, রাজলক্ষ্মী নির্মা কুমার তৃষ্ণা।
তখনি যেন আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথায়। ও বিবাহিত! আরেকটা বিয়ে ও করেছে, সাজানো একটা সংসার ও আছে। দেখতেই বুঝা যাচ্ছে বেশ গুছানো দাম্পত্যের জীবন। যেন কতযুগ ধরেই ওরা পরিচিতি। আমি ভাবলাম আমাকেও পরিচয় করিয়ে দিবে কে আমি? তার সাথে কী সম্পর্ক আমার। কিন্তু সেরকম কিছুই হলোনা। নিলয় কুমারের বর্তমান শুশুর-শাশুড়ী জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলো কিন্তু নিলয় কুমার বল্লো খাবার চলে এসেছে আর কোন কথা নয় সকলে খাওয়া শুরু করি। আমার মনে হয় নিলয় কুমার আমাকে কারো সাথে পরিচিত করাতে চায়না। সকলের কাছে অপরিচিত মুখ করে রাখতে চায়। বুঝাতে চায় বিয়েতে অনেক মানুষের সাথে কথোপকথন হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে আমিও সেরকম একজন। আমি ওর এ ব্যাপারে হতভম্বো হয়েছি। যেন তার সাথে দেখা হওয়ার পর আমি বারবার অবাক হতে হচ্ছে আমাকে। এমন মনে হচ্ছে যখন দেখা হয়নি সে সময় টাই ভালো ছিলো। মনটাকে শান্তনা দিতে পারতাম কিছু একটা বলে। আর এখন আমাকে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া কোন উপায় দেখতেছিনা। সামনে থেকে যে চলেও যাব সে সাধ্যটুকু ও নেই। চলে গেলে অসম্মান বোধ করবে সকলে তাই মুখ বন্ধ করে,নয়ন দিয়ে তাকিয়ে আছি। খাওয়া শেষ হলো। এর মাঝেই হইচই পড়ে গেল বর আসছে। বরকে সকলে মিলে গ্রামের কিছু রীতি অনুসরণ করে বিয়ের আসরে বসালো। বয়স্ক মহিলা যারা দাদু, নানু, বসয়ী ওনারা আসলো নাত জামাইকে মিষ্টিমুখ করালেন। এক পর্যায় সকলে বর সালাম করলেন। বরপক্ষ-কনেপক্ষ মিলে কথা-কাটাকাটি কী মিষ্টি মূহুর্ত। সকলের মুখে শুধু হাসি। পরিবেশটা হাশির আসর বল্লে একটু ও ভুল হবেনা। এক পর্যায় কাজী সাহেব কনেকে নিয়ে বসতে বললেন। আমি আর আমার ফুফাতো বোন কনেকে নিয়ে বসলাম। নিয়ম মত সকল কিছু বলা শেষ করে
কাজী সাহেব বল্লেন বলো তো মা কবুল-উত্তরে রে কনে তিনবার কবুল বললেন-‘কবুল-কবুল-কবুল’ এরকমভাবে বরকে ও নিয়মনীতি অনুসরণ করে বিয়ের সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়। কনেকে গাঁটছড়ায় বেঁধে বিদায় দেওয়া হয়। এটা নাকি তাদের এলাকার বাসিন্দাদের পূর্বকার নিয়ম। এতে নাকি খুব সুখ শান্তি হয় শুশুর বাড়ি। আমাকে সে রাতে আর যেতে দেওয়া হয়নি। পরের দিন অনেক অথিতি চলে গিয়েছিল। গুটিকয়েক জন ছাড়া। তাদের মধ্যে নিলয় কুমার ও তার পরিবার ও থেকে গিয়েছিলেন। তার আর আমার সাথে দেখা হয়নি। হয়তোবা তার ইচ্ছে হয়নি তাই সে দেখা করেনি। কেননা ইচ্ছে যদি হত তাহলে এক বাড়িতেই তো ছিলাম।
আবার যদি দেখা হতো....
আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করতাম-
আমি তো তোমাকে অন্ধের মতো ভালোবেসেছিলাম। তোমার চোখ দিয়েই আমি এ পৃথিবীর আলো দেখবো বলেছিলাম।বহু স্বপ্ন বুনেছিলাম। তোমাকে ঘিরে এ জগৎ সংসার গুছিয়ে নিয়েছিলাম। তার মধ্যে কি এমন হয়েছে যার কারনে এতো বছর তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখোনি। আমাকে সুখের সংসার থেকে কেন বঞ্চিত করলে। আমার একমাত্র ছেলে কে কেন তার পিতৃহীন জীবন দিলে। আমার এ ক্ষুদ্র কথা গুলোর পরিসংখ্যান টা কী একটু মিলিয়ে দিবে। কেননা বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি তোমাকে দেখিনি। তুমি- ই প্রথম দেখেছিলে। আর কথা ও তুমি বলেছিলে। তোমার পরিবারের সাথে আলাপ করিয়েছিলে এসব কেন করেছিলে। আমি জানিনা। চলে যখন গিয়েছো আবার কাঙ্খিত সময়ের জন্য দেখা কেন দিলে। চলে যাওয়ার সময় ঠিকানা ও বলে যাওনি। চলে যাচ্ছি আবার দেখা হবে কিনা জানিনা এ কথাটা ও বলে যাওনি।
তাহলে আমি কী ধরে নিবো তুমি আমাকে ভালোবাসোনি কখনো। নাকি তোমার স্বার্থে ব্যবহার করেছিলে। বহু প্রশ্ন আমার মাথায় নাড়াচাড়া দিচ্ছে। আচ্ছা, আবার কী এমন কোন এক অনুষ্ঠানে হঠাৎ দেখা হবে আমাদের। হবে কী একটু আলাপ-আলোচনা। তখন কী তুমি আরেকটা বিয়ে করবে নাকি এ তৃণা থাকবে সাথে?