প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০
পদ্মা-মেঘনায় চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রলার ও স্পীড বোটে ডাকাত আতঙ্ক বাড়ছেই। ঈদকে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহে ছোট-বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৭টি এবং নৌ পুলিশ দ্বারা ডাকাতদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৫টি। রহস্যজনকভাবে প্রতিটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন রুট থেকে চাঁদপুরের দিকে আসা যাত্রীবাহী ট্রলার বা লঞ্চে।
ডাকাত চক্র দ্রুত গতির স্পীড বোটে মিলিটারির পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক পরে পদ্মা-মেঘনায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানা যায়। যাত্রীবাহী ট্রলারগুলো দূর থেকে নৌ পুলিশ বা সেনাবাহীনির ট্রলার ভেবে তাদের ইশারায় সাড়া দিয়ে ট্রলারের গতি কমিয়ে আনে, আর তাতেই চৌকষ ডাকাত চক্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
গত ২০ জুলাই ভোরে নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরগামী একটি যাত্রীবাহী মিনি লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে জানায় নৌ পুলিশ। গজারিয়া নামক স্থানে ডাকাত দল লঞ্চে হানা দিলে তাৎক্ষণিক লঞ্চের এক যাত্রী নৌ পুলিশকে জানায়। এতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নৌ পুলিশের স্পীড বোটের হুইসেল শোনায় ডাকাত দল অল্প ক’জন যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, ব্যবহৃত স্বর্ণ ও নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৯ জুলাই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে চিড়ার চরের কাছে একটি যাত্রবাহী ট্রলারে। খবর পেয়ে নৌ পুলিশ ধাওয়া করলে ডাকাত দল মরা পদ্মার চরের দিকে চলে যায়। নৌ পুলিশের স্পীড বোট থেকে ডাকাতদের স্পীড বোটের গতি বেশি থাকায় তাদের ধরা যাচ্ছিলো না। নৌ পুলিশ দল অভিযান অব্যাহত রাখায় ডাকাতরা বাংলা বাজারের কাছে স্পীডবোট রেখে স্থলভাগ দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে নৌ পুলিশ ১টি স্পীড বোট, ৭টি লাইফ জ্যাকেট ও কিছু পোশাক উদ্ধার করে। পোশাকগুলো সেনাবাহীনির পোশাকের মত ডোরাকাটা ছিলো। ধাওয়া করা ডাকাতদের দূর থেকে সেনা সদস্যদের মতই মনে হচ্ছিলো বলে জানায় উদ্ধারকারী নৌ পুলিশ।
এর পূর্বে বাবুর চর, গুচ্ছগ্রাম ও মিনি কক্সবাজার নামক চরের কাছে ঘটেছে পৃথক আরও তিনটি ছোট ডাকাতির ঘটনা। নৌ পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বেই পালিয়ে যায় ডাকাত দল।
১৭ জুলাই রাত ২টায় ষাটনল হতে দাউদকান্দি রুটে আরো একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটার আগেই ডাকাতদের উপস্থিতা টের পেয়ে ধাওয়া করে নৌ পুলিশ। ডাকাতদের স্পীড বোটে ৮-১০ জন ছিলেন। তাদের পরনেও ছিলো মিলিটারির মত ডোরাকাটা সবুজ খাকি পোশাক।
১৭ তারিখের পূর্বে গত দুই সপ্তাহে বিজির পার ফরিদপুর, ষাটনল, চাঁদপুর রাজরাজেশ্বর, মাঝির চর এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রলারে ডাকাতরা হানা দিয়েছে বলে স্থানীয় ট্রলার চালকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পদ্মা-মেঘনায় ডাকাতির জন্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হলো সুরেশ^র, নারায়ণগঞ্জ, মোহনপুর, ষাটনল, কাচিকাটা ও মরা পদ্মার মুখ। এসব স্থানে ডাকাতি করে ডাকাতরা সহজেই তাদের আস্তানায় পালিয়ে যেতে পারে।
‘চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী ট্রলারগুলোতেই কেন এত ডাকাতি?’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা নৌ পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, চারটি অঞ্চলের মধ্যে চাঁদপুর অঞ্চলে মেঘনায় বেশ ক’টি ছোট চর থাকায় ডাকাত দল চরে পালিয়ে যেতে পারে বলে এ অঞ্চলকে টার্গেট করে। এ ছাড়াও ডাকাতদের ধারণা, যারা ঈদে বাড়ি ফিরছে তাদের কাছে অধিক পরিমাণ টাকা-পয়সা থাকতে পারে।
মেঘনায় ডাকাতির ঘটনায় লঞ্চ বা ট্রলার চালকদের হাত থাকতে পারে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই পারে। গুচ্ছগ্রামে ট্রলার ডাকাতির ঘটনায় ট্রলার চালকের হাত ছিলো। ডাকাতির শিকার ট্রলারের যাত্রীদের দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী ট্রলার চালক সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।
‘নদীপথে ডাকাত আতঙ্ক কমাতে করণীয় কী’ জানতে চাইলে নৌ পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের জনবল বাড়ানো অতীব জরুরি। সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে বিশাল এই নৌপথ নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নৌ পুলিশ সুপারের দাবি, নৌ পুলিশরা টহলে না থাকলে এত দিনে পদ্মা-মেঘনায় ৫শ’ ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। তিনি বলেন, সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে আমরা নৌ এরিয়াকে সাধ্যমত নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছি। নৌ পুলিশ সদস্যরা প্রতি রাতে টহল অব্যাহত রেখেছে। ১৯ জুলাই সারা রাত আমি নিজেই নদীতে টহলে ছিলাম। আমরা আমাদের সেরাটি দিয়ে চেষ্টা করছি, কিন্তু সরকার থেকে আমাদের দ্রুত গতি সম্পন্ন স্পীড বোট, আরো পুলিশ সদস্য মোতায়েন না করলে ডাকাত মুক্ত নদীপথ করা যাচ্ছে না।