বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০

শাহরাস্তিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতি

শাহরাস্তিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতি
মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল ॥

শাহরাস্তি উপজেলার শোরসাক বাজারে অবস্থিত প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতির যাত্রা শুরু হয় প্রায় ২০ বছর আগে। যদিও ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর সমবায় অফিস থেকে অনুমতি পায় সমিতিটি। তাদের রেজিস্ট্রেশন নং-১২২/চাঁদ/০৮। শাহরাস্তি উপজেলার শোরসাক এলাকার মোঃ জসিম উদ্দিনের পরিচালনায় প্রান্তিক বহুমুখী সমবায় সমিতি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এলাকার সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে সমিতির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শাহরাস্তি উপজেলার অনেকেই অধিক মুনাফার আশায় প্রান্তিকের ছায়াতলে সামিল হন। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয় প্রান্তিক। গ্রাহকরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে থাকে। বিগত দুবছর যাবৎ প্রান্তিকের কার্যক্রম ধীরে ধীরে হ্রাস হতে থাকে। সর্বশেষ বছরখানেকের মাথায় তারা নিজেদের গুটিয়ে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ করে রাখে। গ্রাহকরা তাদের টাকা প্রাপ্তির আশায় শোরসাক বাজারে অবস্থিত প্রান্তিকের বন্ধ অফিসে এসে ফিরে যাচ্ছেন। মুখ খুলে কোনো প্রতিবাদ করতেও সাহস পাননা তারা। সমিতির নিয়ন্ত্রণে থাকা কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন উপায়ে টাকা দেয়ার আশ^াস দেয়ার ফলে তারা কোনো অভিযোগ না করেই টাকা আদায়ের অপেক্ষায় দিন পার করছেন। সম্প্রতি এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করে যাচ্ছেন।

বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে এ কার্যক্রমে প্রায় হাজার গ্রাহকের শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে প্রান্তিক সমবায় সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে চেড়িয়ারা গ্রামের মোঃ হারুনুর রশিদের ১৭ লাখ টাকা, চেড়িয়ারা গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী ফৌজিয়া বেগমের ১০ লাখ টাকা, হাড়াইপাড়া গ্রামের এনায়েত হোসেনের মেয়ে জেসমিন আক্তার কেয়ার ১৯ লাখ টাকা, চেড়িয়ারা গ্রামের হাফেজ আহম্মদের ৭ লাখ টাকা, রাঘৈ গ্রামের শহীদ উল্লাহর ১০ লাখ টাকা, হাড়াইপাড়া গ্রামের আঃ হাকিমের ৯ লাখ টাকা, দশনা পাড়া গ্রামের রওশন আরার ৪ লাখ টাকা, শোরসাক গ্রামের মোঃ মনির ফরাজীর ৭ লাখ টাকা। এভাবে প্রায় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রান্তিক সমবায় সমিতি-এমন দাবি গ্রাহকদের। সমিতির ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও সদয় অবগতির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহক মোঃ হারুনুর রশিদ জানান, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য। পেনশনের ১৭ লাখ টাকা তিনি তিন বছর পূর্বে প্রান্তিকে জমা রাখেন। এক বছর লাখপ্রতি মাসে এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা করে দিয়ে আসছিলো। কিন্ত বিগত দুই বছর যাবৎ তারা কোনো টাকা দিচ্ছে না। সমিতির কার্যালয় বন্ধ থাকায় কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনোভাবে কাউকে পেলে তারা একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে কেটে পড়েন। তিনি বলেন, তার ফুফুও উক্ত সমিতিতে ১ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। তিনি জানান, পরিচালক জসিম উদ্দিন, মতিন সর্দার ও হায়দার মজুমদার গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। হাড়াইপাড়া গ্রামের এনায়েত হোসেন জানান, তার মেয়ে ১৯ লাখ টাকা প্রান্তিকে জমা রেখেছে। বর্তমানে তারা টাকা ফেরৎ না দিয়ে শুধু তারিখ দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে শাহরাস্তি উপজেলার বহু গ্রাহক প্রান্তিকে টাকা জমা দিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। টাকা ফিরে পেতে কর্তাব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো আশার আলো দেখছেন না তারা। টাকা উদ্ধারে এলাকার কেউ কেউ এগিয়ে আসলেও প্রভাবশালীদের তোপের মুখে পিছু হটছেন।

শাহরাস্তি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ মোতালেব খান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্যালয় থেকে অভিযোগের কপি পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, প্রায় এক মাস পূর্বে সমিতির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে নোটিস প্রেরণ করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রান্তিকের সাবেক এক মহিলা কর্মীর নিকট নোটিস দিয়ে আসা হয়। তারা লোক মারফত নোটিসের উত্তর পাঠান। তাতে কমিটি গঠনের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তাদের টাকা ফিরে পেতে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়