প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল
ভুল চিকিৎসায় চশমা, ব্যবহারে ভোগান্তি
‘ভুল চিকিৎসায় চশমা, ব্যবহারে ভোগান্তি’তে কতজন পড়েছেন তা একমাত্র ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। চোখের সমস্যা দেখা দেয়ার সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও ভুল চিকিৎসায় সমস্যাটি যখন চরম ভোগান্তিতে রূপ নেয় সে কষ্ট ভুক্তভোগীই স্বীকার করেন। এবার এমনই অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুর মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ঠিকমতো চোখের পরীক্ষা না করে চশমার জন্যে মনগড়া ব্যবস্থাপত্র লিখে দেয়ায় এমন অভিযোগ উঠে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রোগীদের কথা মনোযোগ সহকারে না শুনে নিজের ইচ্ছামতো ব্যবস্থাপত্র লেখা এবং খারাপ আচরণ করারও। ফলে রোগীদের চোখের সমস্যা দিন দিন বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়।
|আরো খবর
বুধবারের ঘটনা
মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ১০৩নং কক্ষের চশমা পরীক্ষা কেন্দ্রের রিফ্রাকশনিস্ট মঈনুল হাসান আল-আমিন হোসাইন নামের এক রোগীর চোখ ঠিকমতো পরীক্ষা না করে চশমার জন্যে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। যা ওই রোগীর আগের অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ও একই বছরের ১০ আগস্টের রিপোর্টের সাথে মিলে যায়।
আল-আমিন হোসাইন বলেন, ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই তিনি চোখের সমস্যার জন্যে প্রথম মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালে যান। সে সময় তার দু চোখে মাইনাস পয়েন্ট পঞ্চাশ (সিওয়াইএল) এবং নব্বই (এএক্সআইএস) রিপোর্ট আসে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার দু চোখে মাইনাস পয়েন্ট পঁচাত্তর (সিওয়াইএল) এবং নব্বই (এএক্সআইএস) রিপোর্ট আসে। একই বছর ১০ আগস্টও একই রিপোর্ট আসে। সবশেষ গত ১৯ জানুয়ারি ২০২২ সালে তার চোখে সমস্যা প্রকট হওয়ায় তিনি হাসপাতালে যান। তখন রিফ্রাকশনিস্ট মঈনুল হাসান ঠিকমতো চোখে পরীক্ষা না করেই একই রিপোর্ট অর্থাৎ মাইনাস পয়েন্ট পঁচাত্তর (সিওয়াইএল) এবং নব্বই (এএক্সআইএস) লিখে দেন।
আল-আমিন হোসাইন বলেন, এ সমস্ত রিপোর্ট অনুযায়ী যতোগুলো চশমা তিনি ব্যবহার করেছেন, সবগুলোই ব্যবহারের সময় তার চোখের যন্ত্রণা বেড়ে যেতো। তাই তিনি মঈনুল হাসানকে বিষয়টি জানান। কিন্তু মঈনুল হাসান বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।
অভিযোগ জানানোর পর
১১৩নং কক্ষের রোগী সিরিয়াল কেন্দ্রে অভিযোগ জানানোর পর সে রিপোর্ট পুনরায় পরীক্ষা করা হয় ২০৩নং কক্ষের ক্ষীণদৃষ্টি বিভাগে। পূর্বের দেয়া রিপোর্ট সম্পন্ন পাল্টে যায় এবারের পরীক্ষায়। রিফ্রাকশনিস্ট রিপন এবারের পরীক্ষাটি করেন। যিনি কোনোরূপ সময়ক্ষেপণ না করেই পূর্বের রিপোর্টটি ছিঁড়ে ফেলেন।
আল-আমিন হোসাইন বলেন, ক্ষীণদৃষ্টি বিভাগের রিফ্রাকশনিস্ট রিপনের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বর্তমানে তিনি চোখের কোনো সমস্যা অনুভব করেননি। কিন্তু পূর্বে দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চশমাগুলো ব্যবহার করে তিনি চরম সমস্যা অনুভব করেছেন। সে সময় তিনি কোনোভাবেই চোখে চশমা ব্যবহার করতে পারতেন না। তাই পূর্বের রিপোর্টগুলো সব ঠিকমতো পরীক্ষা না করে লিখে দিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন। বর্তমানে তার চোখে এমন দুরবস্থার জন্যে তিনি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।
কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ
শনিবার (২২ জানুয়ারি) হাসপাতালের ১০৩নং কক্ষে অভিযুক্ত মঈনুল হাসানকে পাওয়া যায়নি। সেখানে দায়িত্বে ছিলেন রিফ্রাকশনিস্ট রিপন। যিনি ওই রোগীর কথা না শুনে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় রিপন বলেন, চশমা যেটি আছে সেটি ব্যবহার করেন। বেশি বুঝতে যাবেন না। পয়েন্ট সেভেন ফাইভ আর পয়েন্ট ওয়ান-এগুলো ঊনিশ-বিশ।
হাসপাতালের সাপ্লাই চেইন অফিসার গোলাম মোর্তুজা চৌধুরী বলেন, যে রিপোর্টের উপর অভিযোগটি করা হয়েছে সেটি যেহেতু রিফ্রাকশনিস্ট রিপন ছিঁড়ে ফেলেছে তাই মঈনুল দোষী কি না সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে অফিসের রোস্টার চেক করলে নিশ্চিত হতে পারবো। যদি তিনি ভুল রিপোর্ট দিয়ে থাকেন তাহলে তাকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। মঈনুল হাসান শনিবার ছুটিতে ছিলেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রোববার আসেন মঈনুল হাসানের সাথে কথা বলিয়ে দিবো।
অভিযুক্ত রিফ্রাকশনিস্ট মঈনুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, যে কেউ পরীক্ষা করলে রিপোর্ট এদিক-সেদিক হয়। আপনি ঢাকা গিয়ে প্রফেসর দেখান সেখানেও দেখবেন রিপোর্ট এদিক-সেদিক হবে। এতো চালাক রোগী ভালো না। এই প্রথম কোনো রোগী আমাকে এভাবে ফোন করেছে। এ কথা বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
স্বাক্ষর আছে, স্বাক্ষর নেই
আল-আমিন হোসাইনের রিপোর্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সবগুলো ব্যবস্থাপত্রে রিফ্রাকশনিস্টের স্বাক্ষর নেই। ১৫ জুলাই ২০১৮ সালের তার ব্যবস্থাপত্রে রিফ্রাকশনিস্টের স্বাক্ষর নেই। এমনকি ১৯ জানুয়ারির রিপোর্টেও রিফ্রাকশনিস্ট মঈনুল হাসান স্বাক্ষর করেননি।