শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর তদন্ত চাই

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর তদন্ত চাই
অনলাইন ডেস্ক

গত ক’দিন ধরে চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় দুটি মৃত্যুর খবরে গণমাধ্যম সরব। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলোতে সংযুক্ত ছবি ও ভিডিওতে রোগীর স্বজনদের আহাজারি ও সংক্ষুব্ধ লোকজনের হাসপাতালে হামলার দৃশ্য দেখে রীতিমতো আঁৎকে উঠতে হয়।

মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ডাঃ হাসানুর রহমানের ভুল চিকিৎসায় ৭ম শ্রেণীর ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ’ শীর্ষক সংবাদে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর শহরের শেখেরহাট এলাকার মিজি বাড়ির বাসিন্দা প্রবাসী রিপন মিজির ছেলে লিমন মিজি (১৩) গত কয়েক দিন যাবৎ অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথায় ভুগছিলো। পরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক হাসানুর রহমানকে দেখালে তিনি লিমনের অ্যাপেন্ডিসাইটিস থেকে ব্যথা হচ্ছে বলে তার অপারেশন করার কথা বলেন। তাই ডাক্তারের পরামর্শক্রমে গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় লিমনকে চাঁদপুর শহরের মুন হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির পর রাত ৮টার দিকে ডাঃ হাসানুর রহমান তার অপারেশন করেন। অপারেশনের পর ধীরে ধীরে লিমনের অবস্থার অবনতি ঘটে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারকে বিষয়টি জানানোর পরও তারা লিমনের চিকিৎসার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় মধ্য রাতে লিমনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে মৃত লিমনের স্বজনরা হাসপাতালে এসে ভিড় জমায়। হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি হয়। লিমনের স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর করে। এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহম্মদ আব্দুর রশীদের নির্দেশে এসআই শাহজাহান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং রোগীর স্বজনদের অনুরোধে হাসপাতালের পরিচালক মোঃ হেলালকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং একের পর এক মৃতের স্বজনরা হাসপাতালে ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহম্মদ আব্দুর রশীদের দিক-নির্দেশনায় এসআই শাহজাহানের নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স কৌশল অবলম্বন করে ভোরের দিকে লাশ থানায় নিয়ে আসে। পরে রোগীর স্বজনরা সারা দিনেও চেষ্টা করে থানা থেকে লাশ নিতে পারেনি। হাসপাতালের দায়িত্বশীল এবং চিকিৎসক ও মৃতের স্বজনদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়। লিমন মিজি চাঁদপুর ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়।

এভাবে সমঝোতার মাধ্যমেই ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা সমূহের নিষ্পত্তি হয়। ফলে চিকিৎসক রেহাই পেয়ে যান। এক্ষেত্রে সরকারের স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের উদ্যোগগ্রহণ বাঞ্ছনীয় হলেও তারা সেটি করে না। এর পেছনে অর্থপূর্ণ ও রহস্যজনক কারণ যে নিহিত থাকে সেটি খোলসা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এ ক্ষেত্রে হাজীগঞ্জ উপজেলায় ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেলো। সেখানে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে রোগীর স্বজনদের সমঝোতা সত্ত্বেও তদন্ত চলছে।

চাঁদপুর কণ্ঠে একই দিনে ‘হাজীগঞ্জের ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতাল প্রসূতির মৃত্যুতে ৫৫ হাজার টাকায় রফাদফা! ফেসবুকে তোলপাড়’ শিরোনামের সংবাদে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, রুজিনা আক্তার (২০) নামের সেই প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ৫৫ হাজার টাকায় দফারফার অভিযোগ উঠেছে হাজীগঞ্জ মধ্য বাজারের ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে তোলপাড়। তবে সত্যিকার অর্থে বিষয়টি নিয়ে গত ৯ এপ্রিল রোববার সুরাহা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহত নারীর দেবর ও উক্ত হাসপাতালের দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। রুজিনা বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর ফজর আলী হাজী বাড়ির ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বানিয়াকান্দি গ্রামের খান বাড়ির হাসান খানের মেয়ে। ইসলামিয়া মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, গত রোববার নিহতের পরিবার এসে লিখিত দিয়ে গেছে-এ নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

উল্লেখ্য, রুজিনা নামের এই নারীর সিজারে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে জরায়ু কনডম দিয়ে সেলাই দেয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে নিহত প্রসূতি পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে। রোগী মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার রাতে। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধে কনডম নয়, কনডম ক্যাথেডার স্থাপন করে রোগীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গত রোববার (৯ এপ্রিল) তদন্ত শুরু করেছেন। আর তা চলমান রয়েছে বলে মুঠোফোনে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন তিনি।

আমরা চাই, হাজীগঞ্জের প্রসূতি রুজিনার ভুল চিকিৎসা বা অপারেশনে মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনদের সাথে ইসলামিয়া মডার্ন হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সমঝোতা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করে সেটা যেমন চলমান রেখেছে, তেমনি চাঁদপুর জেলা সদরস্থ মুন হাসপাতালে ডাঃ হাসানুর রহমানের ভুল চিকিৎসায় লিমন মিজির মৃত্যুর ঘটনার সমঝোতা হওয়া সত্ত্বেও সদর উপজেলা বা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এর তদন্ত করুক। আর তদন্ত শেষে সিভিল সার্জন হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদরের দুটি মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যবস্থা করুক। এতে ভুল চিকিৎসার দায় কাদের এবং কীজন্যে হয়েছে সেটি জানা যাবে। আর দায়ী ব্যক্তির কম-বেশি শাস্তি নিশ্চিত করে অনেককে সতর্ক করা যাবে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়