প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ০৮:৩৮
প্রবাসীদের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে

ইতালির ঐতিহ্যবাহী শহর ভেনিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মর্যাদাপূর্ণ প্রবাস জীবন ও পরকালীন উন্নতি’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমধর্মী সেমিনার। মাদরাসাতুল ইত্তিহাদ মিলনায়তনে শতাধিক বাংলাদেশি প্রবাসীর উপস্থিতিতে আয়োজিত এই সেমিনারে প্রবাস জীবনের অর্থবহ দিক, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পরকালীন চিন্তার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদ সজল।
তিনি বলেন, “প্রবাসীরা কেবল তাদের নিজ মাতৃভূমির জন্যেই কাজ করেন না, বরং যে দেশে থাকেন, সেই দেশের প্রতিও রয়েছে দায়বদ্ধতা। প্রবাসীরা শুধু অর্থনীতির চালিকাশক্তিই নন, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।”
সজল জুলাই অভ্যুত্থান ইস্যুতে ইতালি প্রবাসীদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “আজকের বিশ্বে প্রবাসীদের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতা কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এখন সময় এসেছে সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার।”
সেমিনারের সভাপতি মাওলানা আরিফ মাহমুদ বলেন, “প্রবাস জীবন কেবল উপার্জনের জন্যে নয়, বরং আত্মিক উন্নয়ন ও পরকালীন মুক্তির প্রস্তুতিরও সময়। একজন মুসলমান হিসেবে হালাল-হারামের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া উচিত। মদ, জুয়া, সুদের মতো হারাম কাজ সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থায় মানুষকে সহজ লোনের প্রলোভনে ফেলে আত্মিক ও পারিবারিক স্থিতি নষ্ট করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, অ্যালকোহলের কারণে সৃষ্ট সমাজিক অবক্ষয় ও দুর্ঘটনার হার ক্রমাগত বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।”
মাওলানা আরিফ আরও বলেন, “একজন পিতা-মাতা সন্তানের মুখে যা তুলে দিচ্ছেন, তা হালাল কি না--এই বিবেচনাও অত্যন্ত জরুরি। সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ না করলে তা শুধু দুনিয়ার ক্ষতি নয়, বরং পরকালের জন্যেও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হবে।”
স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ডা. সাজ্জাদ তিশাদ বলেন, “ইতালিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যে আইন থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবহার, সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ ও আইনি সহায়তা বিষয়ে সচেতনতার অভাব দেখা যায়, যা ভবিষ্যতে বড়ো ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে।”
শিক্ষা নিয়ে বক্তব্য রাখেন তরুণ গবেষক আবদুল্লাহ সম্রাট। তিনি বলেন, “প্রবাসে অভিভাবকদের উচিত সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা, নৈতিক শিক্ষায় মনোযোগী হওয়া এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক গুণাবলিও শিশুর মাঝে গড়ে তোলা।”
তিনি বলেন, “শুধু চাকরি বা দক্ষতা নয়, একজন ভালো মানুষ হিসেবে সন্তানদের গড়ে তোলা আজকের সময়ের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এই দায়িত্ব অবহেলা করা মানে ভবিষ্যতের অন্ধকার তৈরি করা।”
নাগরিক সেবা ও বাণিজ্যিক বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে কামরুল হাছান বলেন, “প্রবাসীদের শ্রমের বিনিময়ে রাষ্ট্র সেবা দেয়। সেই সম্পর্ককে সম্মান জানাতে হবে। ব্যবসা করতে হলে আইন-কানুন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ও পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মুসলিম অভিবাসীরা কখনোই সমাজের জন্যে বোঝা হয়নি। বরং জ্ঞান, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধে তারা অবদান রেখেছে। সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
আয়োজকরা জানান, প্রবাসীদের জীবনের মান উন্নয়ন, নৈতিকতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই ধরনের উদ্যোগ। ভবিষ্যতেও এমন অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজন করা হবে বলে জানান তারা।