মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

নারী ভোটারদের ভোট না পেয়েও নারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে
বিমল চৌধুরী ॥

সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচন। বিগত ইউপি নির্বাচনের তুলনায় পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অনেকটাই শান্তিপূর্ণ হওয়ায় ভোটারসহ প্রার্থীরা অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিগত ১৫ বছরে এমন শান্তিপূর্ণ ভোট হয়নি, এমনকি শান্তিপূর্ণভাবে নিজের ভোট নিজে প্রদান করেছেন বলে ভোটারদের অনেকেই মতামত প্রকাশ করেছেন। সারাদেশের ন্যায় গতকাল চাঁদপুরের কচুয়া, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচরের ২৯টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে।

কয়েকটি ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় প্রশাসনের কঠোর তৎপরতা। র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন একের পর এক ভোটকেন্দ্রে। সাথে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যা আগের ইউপি নির্বাচনগুলোতে দেখা গেলেও গতকাল ছিলো একটু ব্যাতিক্রম।

গতকালকে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আরো দেখা যায় ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সকাল থেকেই সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় ছিলো কঠোর অবস্থানে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ভোটার ছাড়া অতি উৎসুক কাউকেই দাঁড়াতে বা ভিড় করতে দেননি। এমনকি অপ্রোজনীয় যানবাহন চলাচলেও কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমান্দারী স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র, কাউনিয়া শহীদ হাবিবউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রসহ এ ইউনিয়নের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। তবে ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি আর দীর্ঘলাইন থাকলেও লাইনে দেখা যায়নি কোনো নারী ভোটারকে। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো নারী ভোটারের উপস্থিতি চোখে না পড়ায় গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দেখা মিলে ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের বই মার্কার প্রার্থী মনোয়ারা বেগমের। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘নারী ভোটারের উপস্থিতি নেই কেনো?’ তিনি জবাব দিলেন ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের কোনো নারী ভোটারই ভোট দিতে আসেন না। না আসার কারণও তিনি কিছুটা ব্যাখ্যা করেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো ‘আপনি ভোট দিয়েছেন কি না বা দিবেন কি না’। তার আমতা আমতা জবাবে বুঝা গেলো তিনিও ভোট দিতে আগ্রহী নন। তবে ভোট পেতে খুবই আগ্রহী। তার কথায় অনুমান করা গেলো তিনি ভোট দিয়েছে এ কথা প্রচার পেলে পুরুষ ভোটাররা রুষ্ট হতে পারে, ফলে ভোটের প্রাপ্তিতে তিনি পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই ভোট দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে নীরব রয়েছেন।

জানা যায়, এ ইউনিয়নে নির্বাচনে ৯ জন নারী প্রার্থী থাকলেও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কেউই ভোট দিতে, ভোট কেন্দ্রে আসতে চাইছে না। ভোট না দেয়ার এমন প্রবণতা দীর্ঘ কয়েকবছর ধরেই চলে আসছে। ভোট কেন্দ্রের আশপাশের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, গৃদকালিন্দিয়া বাজারের পাশেই জৈনপুরের হুজুর নামে একজন সাধক এখানে দীর্ঘসময় ধরে বাস করে আসছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এ এলাকায় মহামারি দেখা দিলে গ্রামবাসী তার প্রতিকার পেতে নাকি হুজুরের কাছে ছুটে যান। তখন হুজুর নাকি বলেছেন, তোরা নারীদের দিয়ে ভোট দিচ্ছিস্ কেন? হুজুরের এমন কথা শুনতে পেয়ে গ্রামবাসীর ধারণা জন্মায়, নারীরা ভোট দেয়ায় বা পর্দানশীন না হওয়ায় এই মহামারির সৃষ্টি হয়েছে। তখন থেকেই নাকি এলাকায় থাকা নারী ভোটাররা আর ভোট কেন্দ্রে আসছেন না এবং ভোটও দিচ্ছেন না। প্রায় ৪০/৫০ বছর ধরেই নাকি এ অবস্থা চলে আসছে। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের এ বিশ্বাসের সাথে এ ইউনিয়নে বসবাস করা হিন্দু এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নারী ভোটারগণও স্বেচ্ছায় ভোট প্রদান থেকে বিরত রয়েছেন। এদিকে নারীদের ভোট না পেয়েও নারী প্রার্থীরা পুরুষ ভোটারদের ভোটেই প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নারীদের জনপ্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। তবে ধর্মীয় বিশ্বাস যা থাকুক না কেনো, গতকাল ভোট শেষ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে প্রায় পঞ্চাশজন নারী ভোটারের দেখা মিলে। তাদেরকে কোনো কোনো প্রার্থী ভোট দেয়ার জন্যে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। অভিযোগ উঠে, এ সকল নারী ভোটার জালভোট দেয়ার জন্যেই নাকি শেষ সময়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়