মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

আওয়ামী লীগের বিষফোঁড়া বিদ্রোহীরা
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

‘এবার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারলে শুধু অভিশাপ দিয়ে যাবো’। ফরিদগঞ্জের চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের একলাশপুর গ্রামের ফজলুর রহমান (৭৫) ক্ষোভের সাথে এ কথা বলেন। গত ক’দিন আগে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরকম আক্ষেপের কথা উঠে আসে। এ কথা শুধু ফজলুর রহমানের নয়, আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সকল ভোটারের। প্রার্থীদেরও আশা এবং প্রত্যাশা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তথা ভোটের।

ভোটার ও প্রার্থীদের প্রত্যাশা মিটাতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানি ঠেকাতে থানা পুলিশ প্রতিটি ইউনিয়নে বিট পুলিশিংয়ের ব্যানারে সভা করা ছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে টহল অব্যাহত রেখেছে। মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে এ পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষ ও কাঁদা ছোড়াছুড়ির সংবাদ পাওয়া যায়নি। বরং উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের সকল প্রার্থী সুষ্ঠু ভোটের জন্যে একজোট হয়েছেন বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে হামলা-মামলা ঠেকানো যাচ্ছে না। রাতে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রার্থীর ব্যানার ফেস্টুন ছেঁড়া, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর অব্যাহত রয়েছে।

এই পর্যন্ত তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। যাতে নামে-বেনামে এবং একটি ইউনিয়নের ঘটনায় অন্য ইউনিয়নের প্রার্থীর লোকজনকে জড়ানোর ঘটনা ঘটছে। এ কারণে ফরিদগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা ছাড়া ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে এবার ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে ৭৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ১২৪ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সদস্য প্রার্থী ও ৫১৫ জন সাধারণ সদস্য প্রার্থীসহ মোট ৬৯৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারে সরগরম থাকে এলাকাগুলো। তবে ভোর থেকে গভীর রাত অব্দি প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত থাকেন।

৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চমক দেখা যায়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের পাঠানো তৃণমূলের তালিকার পরিবর্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সুপারিশ করা সকল প্রার্থীই মনোনয়ন পেয়েছেন। ফলে তৃণমূলের সুপারিশ উপেক্ষিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের পদধারী ২২ জন প্রার্থী দল মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নির্বাচনী মাঠে এখনো সরব রয়েছেন।

ইতিমধ্যেই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ২২ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করলেও তা কোনো কাজে আসছে না। বরং উল্টো তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ায় বিএনপির ভোটাররা তাদের দিকে ঝুঁকছে। ফলে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ১৩ প্রার্থীর জন্যে বিদ্রোহীরা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে বিএনপির ১৮ জন প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে দুরবস্থা দেখা দেয়ায় বিএনপি নির্বাচন না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের পক্ষে ভোটের মাঠে না নামতে নিদের্শনা দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিদের্শনা দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নেই। এগুলো হলো গোবিন্দপুর দক্ষিণ, রূপসা উত্তর ও রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন।

সরজমিনে গিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়ন ছাড়া আর ১০টি ইউনিয়নেই ত্রিমুখী লড়াই এবং দুইটি ইউনিয়নে চতুর্মুখি লড়াই হবে।

গত ২০ ডিসেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই বিভিন্ন এলাকায় হামলা-মামলা ভয়ভীতি ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত বালিথুবা পূর্ব, রূপসা দক্ষিণ ও চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা ঘটনা ঘটেই চলছে।

এদিকে ভয়-ভীতির কারণে ভোটারগণ প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করলেও বলছেন ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখলে তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন।

বিরামপুর এলাকার ফল ব্যবসায়ী জানান, তিনি আওয়ামী লীগ করলেও এবারের নির্বাচনে আঞ্চলিকতার টানে পড়ে নৌকার পরিবর্তে অন্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, সকলেই আঞ্চলিকতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে ভোটের মাঠে এবার অন্যরকম লড়াই হবে। এর পাশপাশি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভোটারারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে আগ্রহী।

প্রার্থীরা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান। তবে ভেতরে ভেতরে অনেকেই এ বিষয়ে এখনো সন্দিহান রয়েছেন। যদিও প্রশাসন অদ্যাবধি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর বলে ঘোষণা দিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়