প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দীর্ঘ ৫০ বছর ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে পীরের কথিত আদেশ নিয়ে নারী ভোটাররা ভোট দান থেকে বিরত রয়েছেন। ২০০৮ সালের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক’টি কেন্দ্রে কিছু সংখ্যক নারী ভোট দিলেও নানা গুজব ছড়িয়ে বারংবার তা বাধাগ্রস্ত করছে একটি মহল। এসব বিষয়ে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠসহ স্থানীয়, জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশের পর নারীদের ভোট কেন্দ্রে ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ তৎপরতা শুরু হয়।
১ জানুয়ারি শনিবার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারী ভোটারদের ভোট প্রদানে আগ্রহী করতে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরির সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, পত্রিকার মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা কোনো নির্বাচনেই তাদের ভোট প্রয়োগ করেন না। আমি গভীরভাবে বিশ^াস করি কোনো আলেম নারীদেরকে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন না। পর্দা রক্ষা করে নারীদের ভোট প্রদান ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। নারীরা ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকলে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হলে ধর্মীয়ভাবে নারীরাও দায় এড়াতে পারবে না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নারীদেরকে ভোট প্রদান করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ইসলাম পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভোটাধিকারকে বৈধ করেছে। পর্দার মধ্যে থেকে নারীরা যাতে ভোট প্রয়োগ করতে পারেন তা আমরা নিশ্চিত করছি। ফলে এখানে ইসলামের আদর্শ ক্ষুণœ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমার জানামতে কোনো ধর্ম নারীদের ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার নিদের্শনা দেয়নি। এসব এক শ্রেণীর মানুষ কল্পকাহিনী রটিয়ে নারীদের ভোটাধিকার বঞ্চিত করছে। আমি নিজেও বিশ^াস করি না কোনো পীর সাহেব এই কথা বলেছেন। বরং তার কথাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তাকে হেয় করা হচ্ছে। আমি অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, তিনি পীর সাহেবের কাছ থেকে নিজ কানে একথা শুনেছেন কি-না। কিন্তু কেউই নিজ কানে এ ধরনের কথা বলতে শোনেননি। বরং পীর সাহেব বলেছেন নারীদের পর্দার মধ্যে থাকতে। নারীরা পর্দার মধ্য থেকেই বৈধ সকল কাজই করতে পারবেন।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) বলেন, আজ নারীরা সকল ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ইউনিয়নটি প্রবাসী অধ্যুষিত। পুরুষরা প্রবাসে থাকায় এখানকার নারীদের সংসারের কাজসহ সকল কিছুই করতে হচ্ছে। বাজারে যেতে হচ্ছে, স্কুলে যেতে হচ্ছে, ব্যাংকে যেতে হচ্ছে, হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। তাহলে তারা কোনো ভোট দিতে পারবেন না? এসব বলে যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের কথায় কান না দিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসেন। বাড়ি থেকে আসতে ও যেতে আপনারা বাধাগ্রস্ত হন তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি থেকে আসা ও যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবো।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ফরিদগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন, সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহমেদ, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান প্রমুখ। এছাড়া সভায় কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারীদের ভোট প্রদানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন উপজেলা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইউনুস হোসেন। সভায় বিপুল সংখ্যক নারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে নারীরা ষাটের দশক থেকে যে কোনো নির্বাচনে ভোট প্রদান থেকে বিরত রয়েছেন। তবে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু সংখ্যক নারী ভোট প্রদান করলেও এলাকার একটি মহল কৌশলে নারী ভোটারদের ভোট দানে বিরত রাখতে পীরের দোহাই দিয়ে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে দিচ্ছে না।