বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৪৪

হাজীগঞ্জে এক মসজিদে দুই ইমাম, দ্বন্দ্বে মুসল্লিসহ এলাকাবাসী

কামরুজ্জামান টুটুল ॥
হাজীগঞ্জে এক মসজিদে দুই ইমাম, দ্বন্দ্বে মুসল্লিসহ এলাকাবাসী

হাজীগঞ্জে একটি জুম্মা মসজিদে দুই ইমামকে নিয়ে নিয়মিত মুসল্লিসহ এলাকাবাসীর দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে মসজিদের অভ্যন্তরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এমন কাণ্ড হাজীগঞ্জের দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের কাপাইকাপ জামে মসজিদের। বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শান্তিপ্রিয় মুসল্লিগণ।

২১ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় সরজমিনে গেলে মসজিদের স্থানীয় ও মুসল্লিরা উপস্থিত হয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে বক্তব্য দেন। এ সময় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও দু ইমাম উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত দু ইমাম সবার উপস্থিতিতে দাবি করেন, তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। স্থানীয় ও মুসল্লিরা জানান, কাপাইকাপ জামে মসজিদটি শতবর্ষী একটি মসজিদ। এর কিছু দূরে নতুন ও আধুনিক মানের মসজিদ নির্মাণ করে পুরোনো মসজিদটিকে পরিত্যক্ত করা হয়। পুরোনো মসজিদ কমিটি সম্প্রতি একজন ইমাম নিয়োগ দেন ও নতুন মসজিদ কমিটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন মসজিদের জন্যে ইমাম নিয়োগ দেন। পুরাতন মসজিদটি পরিত্যক্ত করা হলেও ইমামের নিয়োগ রয়ে যায় বহাল তবিয়তে। আর সেই ইমাম নতুন মসজিদে এসে নতুন কমিটির সাথে কোনো কথা না বলে নামাজ পড়াতে শুরু করেন। এদিকে নতুন মসজিদে নতুন কমিটি নতুন ইমাম নিয়োগ দেবার পরে উভয় ইমাম ভাগ করে নামাজ পড়াতে থাকেন, আর এভাবেই কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়া চলে আসছে গত কয়েক মাস। সম্প্রতি নতুন মসজিদের কিছু মুসল্লি ও পাশের অন্য আরেকটি মসজিদের মুসল্লিদের এ নিয়ে শুরু হয় টানাপোড়েন। ফলে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সাধারণ মুসল্লিরা।

স্থানীয়রা জানান, পুরাতন মসজিদে গত ২ আগস্ট থেকে মাওঃ খোরশেদ আলম নামের একজন ইমাম দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মসজিদ কমিটি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে ইমাম নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় ও মুসল্লিরা তা জানেন না। পুরাতন মসজিদটি বন্ধ করে নতুন মসজিদে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা এবং নতুন করে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মুফতি মোঃ জোবায়ের হোসাইন নামের একজন ইমামকে নিয়োগ দেন। তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এর মধ্যে পুরাতন মসজিদের ইমাম মাওঃ খোরশেদ আলম নতুন মসজিদে উপস্থিত হন এবং তারা দুইজনেই পালা-বদলে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এ বিষয়ে মুসুল্লিসহ স্থানীয়দের মাঝে বিভিন্ন কথাবার্তা, আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে এবং দুজনের মধ্যে একজন ইমামের দায়িত্ব পালনের জন্যে গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আলোচনায় বসেন মসজিদ কমিটিসহ মুসল্লি ও স্থানীয়রা। ওই সময়ে মসজিদে একই গ্রামের অন্য এলাকার মুসল্লিদের উপস্থিতি দেখা যায়। যারা এই মসজিদ ও এলাকার মুসল্লি নয়। পরে আলোচনার শুরুতেই সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান কমল নিয়মিত মুসল্লি ও স্থানীয় ছাড়া অন্যদের আলোচনা সভাস্থল ত্যাগ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু কেউই সভাস্থল ত্যাগ না করায় সভাপতি মুসল্লি ও স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে ইমাম নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। এর মধ্যে মুসল্লিদের অধিকাংশ মতামত মুফতি জোবায়ের হোসাইনের পক্ষ গেলে একপর্যায়ে হট্টগোল এবং পরে হাঙ্গামা শুরু হয়। এতে স্থানীয় কয়েকজন আহত হন।

এ বিষয়ে মোঃ কবির হোসেন আমিন (৭০) নামের একজন মুসল্লি জানান, সাবেক মেম্বার (ইউপি সদস্য) শিবলু এই এলাকার মুসল্লি নয়। অথচ তিনিসহ কয়েকজন মুসল্লি এখানে এসে দ্বন্দ্বে জড়ান। অথচ আমি তার বাবারও ২০/৩০ বছরের বড়। আমি এর বিচার চাই। ইমামের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি-মুসল্লির সিদ্ধান্তে ইমাম নিয়োগ চাই। একই সুরে কথা বলেন মুসল্লি কামাল হোসেন (৪৫)।

আবুল কালাম খান (৭০) নামের এক মুসল্লি জানান, দুই ইমাম নিয়োগের বিষয়ে মুসল্লিরা জানে না। তিনি বলেন, মুসল্লিরা যা চায় তা-ই হবে। বাইরের লোকের কথায় হবে না।

মোঃ সামছুদ্দিন খান (৬৫) বলেন, দুজন ইমাম সমন্বয় করে একজন থাকুক। আর তারা (ইমাম) যদি সমন্বয় না করে, তাহলে কমিটি বিচার-বিশ্লেষণ করে যার যোগ্যতা বেশি, তাকে নিয়োগ দেয়া হোক।

মুসল্লি ও দাতা সদস্য ইমরান খান বলেন, ওইদিন বাইরের ২/৩ জন লোকজন হাঙ্গামা করেছে। তারা এই মসজিদের মুসল্লি না। আমরা চাই, মুসল্লিরা যাকে পছন্দ করে, তাকে নিয়োগ দেয়া হোক। তবে আগের ইমাম নিয়োগের বিষয়ে আমরা কেউ জানি না।

নতুন মসজিদে নিয়োগকৃত ইমাম মুফতি জোবায়ের হোসাইন বলেন, মসজিদ পরিচালনা কমিটি আমাকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইমামের দায়িত্ব পালন করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হুজুরের (মাওঃ খোরশেদ আলম) সাথে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এখন কমিটি ও মুসল্লিরা যাকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। আমি ওনাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিবো।

পুরাতন মসজিদে নিয়োগকৃত ইমাম মাওলানা মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, আমার সাথে তাঁর (মুফতি জোবায়ের হোসাইন) কোনো দ্বন্দ্ব নেই। মসজিদের বিগত কমিটি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। যার ফলে আমি গত ২ আগস্ট থেকে ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এরপর নতুন মসজিদে আসার পর আমরা দুজনেই পালাবদল করে দায়িত্ব পালন করছি।

এ বিষয়ে মসজিদের সাবেক কমিটির মোঃ গিয়াস উদ্দিন মনিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিয়মিত একজন ইমামের নিয়োগের জন্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরে আমি হজ্বে গিয়েছিলাম। ওই সময়ে কমিটির অন্য সদস্যরা ইমাম নিয়োগ দিয়েছেন। পরবর্তীতে নতুন মসজিদের উদ্বোধন ও নতুন করে কমিটি করা হয়েছে এবং নতুন কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই পূর্বের কমিটির।

ইমামের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে জানতে পারলাম নতুন করে ইমাম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যেহেতু মফস্বল এলাকা। দুজন ইমামের দায়িত্ব নেয়া সম্ভব নয়। আমার মতামত হচ্ছে, কমিটির সদস্য, মসজিদের মুসল্লি ও এলাকাবাসী মিলে একজন ইমামকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হোক।

নতুন মসজিদের বর্তমান সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান কমল বলেন, পুরানো মসজিদে ইমাম নিয়োগের বিষয়ে আমি জানি না। তবে একজন নিয়মিত ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন। এরপর নতুন মসজিদ উদ্বোধনের পূর্বে নতুন করে কমিটি গঠন করার পর আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একজন পেশ ইমাম ও খতিব নিয়োগ দেই। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে তিনি (মাওঃ খোরশেদ আলম) কমিটির কারো সাথে যোগাযোগ করেননি।

তিনি আরো বলেন, আমি নিজ বাড়িতে থাকি না। তবে গ্রামে নিয়মিত আসা-যাওয়া করি। যখন নতুন ইমাম (মুফতি জোবায়ের হোসাইন) দায়িত্ব পালন শুরু করেন, তখন শুনেছি তিনি (মাওঃ খোরশেদ আলম) মসজিদে আসেন এবং তারা দুজনেই পালাবদল করে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বিষয়টি জানার পর আমি ওনাকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছি। তিনি আমার ফোন রিসিভ করেননি কিংবা পরবর্তীতে ব্যাকও করেন নি। এক মাস পার হয়েছে। আমরা নতুন ইমাম ও মুয়াজ্জিনের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছি এবং তাদের দুজনকে সহ ইলেকট্রিশিয়ানের বেতন দিয়েছি। কিন্তু তিনি (মাওঃ খোরশেদ আলম) বেতনের জন্যে আমাদের কাছে আসেননি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওনার বেতন কে দেয়, তিনি কোথায় খাওয়া-দাওয়া করেন--বিষয়টি আমরা জানি না। এ বিষয়ে স্থানীয় ও মুসুল্লিদের অভিযোগের বিষয়ে শিবলু মেম্বারের (সাবেক ইউপি সদস্য) সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি মুঠোফোনে কথা বলবো না। আগামী শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হবে এবং ওই বৈঠকে আপনারা (সাংবাদিকরা) উপস্থিত থাকেন।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, কাপাইকাপ জামে মসজিদে কমিটি ও ইমাম নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ইউএনও মহোদয় জানেন। আমরা আগামী ২/১ দিনের মধ্যে বসবো এবং কমিটির সদস্য ও মুসল্লি এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিষয়টি মীমাংসা করে দিবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়