রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৪, ২২:৪০

দুদিন হাজীগঞ্জ ছিলো রণক্ষেত্র ॥ বহু গাড়ি ভাংচুর, শতাধিক আহত ॥ ৯শ’ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ

কামরুজ্জামান টুটুল ॥
সহিংসতায় হাজীগঞ্জে ৪ মামলা আসামী দেড়শ’ ॥ বিএনপি-জামাতের আটক ১০, সেনা টহল অব্যাহত

সারাদেশে কোটা সংস্কারকারী শিক্ষার্থীদের ডাকা আন্দোলনের সূত্র ধরে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ও শুক্রবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজীগঞ্জে দুর্বৃত্তদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই দুদিনে ভয়াবহ সংঘর্ষে হাজীগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে পুলিশ, ছাত্রলীগ, পথচারী, পরিবহন চালক মিলিয়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে শতাধিক। দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে টোরাগড়ে একটি পিকআপ ট্রাক ও মকিমাবাদ গ্রামে রেলপথের পাশে কাভার্ড ভ্যান পুড়ে গেছে। এ সময় কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার দগ্ধ হয়। দুদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪), বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, পুলিশ ও সাধারণ জনগণকে হত্যা চেষ্টা আইনে ৪টি মামলা দায়ের করেছে। এতে নামীয় আসামী করা হয়েছে দেড়শ’ জনকে। অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে সহস্রাধিক। আসামীদের প্রায় সকলে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে গত শনিবার বিকেল থেকে হাজীগঞ্জে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মাঠে টহল অব্যাহত রেখেছে। এরপর থেকে আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আটককৃতরা হলেন : হাজীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির শাহ পরান মজুমদার, হাজীগঞ্জ হলি কেয়ার হাসপাতালের মেডিসিন চিকিৎসক ও মালিক ডাঃ মিনহাজুর রহমান, ফরিদগঞ্জের বাসারা এলাকার শিবির নেতা মাহাদি, হাজীগঞ্জ আল কাউসার স্কুলের শিক্ষক আবু তাহের, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খোরশেদ আলম ভুট্টো, কবির মজুমদারসহ আরো ৪ জন।

সরজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটা বিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার বেলা বারোটার দিকে হাজীগঞ্জ সরকারি পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের সামনে ও টোরাগড় হামিদিয়া জুট মিলের সামনের সড়কে অবরোধ দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে সড়ক অবরোধ সরিয়ে দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন বাড়ির অলিগলি থেকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে। এর পরেই পুলিশ ধাওয়া দিয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। প্রায় আড়াই ঘন্টা শেষে দুর্বৃত্তদের হটিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

পরের দিন শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে হাজীগঞ্জের এনায়েতপুরে সড়কে গাছের গুঁড়ি ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সড়কের অবরোধ সরিয়ে দিতে গেলে অবরোধকারীরা পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পুলিশ পিছু হটে আসলে অবরোধকারীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে। কিছু পরে পুলিশ জনবল বাড়িয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে ছুড়তে এনায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে দোপল্লা সড়ক, পূর্ব দিকের প্রধান সড়ক ও হাটিলার দিকসহ তিনদিক থেকে পুলিশের উপর হামলা শুরু করে অবরোধকারীরা। এ সময় পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এক হয়ে অবরোধকারীদের ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এ সময় চাঁদপুর থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধাওয়া দিয়ে ব্যর্থ হয়। এভাবে প্রায় আড়াই ঘন্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে হাজীগঞ্জ সরকারি পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের গেটে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর টায়ার জ্বালিলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ বাজার থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে অবরোধকারীদের সাথে ছাত্রলীগের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৬টার দিকে এনায়েতপুরে পুলিশের টিমটি পূর্ব দিক থেকে ধাওয়া দিলে অবরোধকারীররা সড়ক থেকে সরে যায়। কয়েক মিনিট পরে ফের অবরোধকারীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সড়কের উপর টায়ারে জ্বালানো আগুন নেভাতে হাজীগঞ্জ দমকল বাহিনীর দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পোঁছলে অবরোধকারীদের তোপের মুখে আগুন না নিভিয়ে তারা ফিরে। এর কিছু পরে একই স্থানের পাশে থামিয়ে রাখা একটি পিকআপ ট্রাক সড়কের উপর ঠেলে উঠিয়ে নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এভাবে তাণ্ডব চলা শেষে রাত ১২টার পর টোরাগড় এলাকা স্বাভাবিক হয়ে আসে।

এদিকে একইদিন রাত ৯টার দিকে ঢাকা থেকে সিমেন্ট বোঝাই কন্টেইনার ট্রাক হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর সড়কের হাজীগঞ্জের মকিমাবাদ কাজিরগাঁও অংশের রেলপথের পাশে পৌঁছামাত্র ট্রাকের ভেতরে দুর্বৃত্তরা দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে মারে। এতে করে মুহূর্তে ট্রাকের সামনের পুরো অংশ দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। এ সময় ট্রাকের চালক ও হেলপার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও তাদের শরীর পুরোপুরি পুড়ে যায়। এতে করে ট্রাকের হেলপার খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ মারাত্মক দগ্ধ হন। টোরাগড় ও এনায়েতপুরের সংহিসতার ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিক, অবরোধকারী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পথচারী, বিভিন্ন পরিবহনের চালক মিলিয়ে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। একই ঘটনায় শতাধিক সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোবাইক ভাংচুর করা হয়।

এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সব মিলিয়ে পুলিশকে ৮৩ রাউন্ড টিয়ারসেল, ১৪ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড, ৭৮৮ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ব্যবহার করতে হয়েছে। এ সূত্র থানা পুলিশের।

এসব ঘটনার সময় পুলিশকে সহযোগিতার জন্যে উপস্থিত ছিলেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপস শীল, সহকারী পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ ও ওসি (তদন্ত) মিন্টু দত্ত।

দুদিনের সহিংস ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে মোট ৪টি মামলা দায়ের করেছে। যার মধ্যে নামীয় আসামী রয়েছে দেড়শ’। যাদের প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ১০ জনকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এদিকে কারফিউ জারির পর থেকে হাজীগঞ্জে সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।

হাজীগঞ্জের ঘটনায় ৪০ নেতা-কর্মী আহত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির সমন্বয়ক ইঞ্জিঃ মমিনুল হক বলেন, আমাদের ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তারা কুমিল্লায় চিকিৎসাধীন।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়