শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

হাফছার এগিয়ে যাওয়ার গল্প

হাফছার এগিয়ে যাওয়ার গল্প
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

শহর থেকে অনেক দূরের নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করা হাফছা আক্তার আজ সমাজের আলোকবর্তিকা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পিছনে রেখে শুধু নিজেকে জয় করেন নি তিনি, এনে দিয়েছেন দেশকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যেখানে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে তিনি নিজেই এখন জাতির মেরুদণ্ড ঠিক করতে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। হয়েছেন উপজেলা ও জেলার গ-ি পেরিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা। দুই সন্তানের গর্বিত মা হাফছার গল্প পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ নারীদের জন্য দৃষ্টান্ত-বললেন উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আমেনা বেগম।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের শোভান গ্রামের শাহাজান তালুকদার ও জাকিয়া বেগমের তৃতীয় সন্তান হিসেবে স্বাভাবিকভাবে ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন হাফছা আক্তার। কিন্তু ২ বছর পর হঠাৎ করেই জ্বর ও পাতলা পায়খানা হওয়ার পর থেকে হাঁটাচলা করতে কষ্ট হতে থাকে তার। আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও চিকিৎসার কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু ক্রমেই কোমরের নিম্নাংশ অকার্যকর হতে থাকে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে হাফছা। সেই অবস্থাতেই বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ-ি পেরিয়ে ৩ কিলোমিটার দূরের প্রত্যাশী আরএ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি হয়ে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএসএস পাস করেন।

স্কুলে পড়ার সময়ে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে যখন তার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন আলোর বাহন হিসেবে পাশে দাঁড়ায় প্রতিবন্ধী সংগঠন বিপিকেএস, বর্তমানে যা চাঁদপুর ডিপিওডি নামে পরিচিত। তাদের সহযোগিতায় ২০০৫ সালে জাপানের নাগোয়া সিটিতে অনুষ্ঠিত ২১তম হ্যান্ডিমেরাথন (হুইল চেয়ার) প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনীত হন হাফছা। সেখানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১টি দেশের ২৫১ জন প্রতিযোগীর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন হাফছা।

পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ২০০৭ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলার সকদি গ্রামের মোঃ নাছির উদ্দিনের সাথে বিবাহ হয় তার। উভয় সন্তান জন্মের সময় সমাজের কুসংস্কারের কারণে নানা কথা শুনতে হয়েছে তার। কিন্তু উভয় সন্তানই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে অদ্যাবধি। বর্তমানে বড় ছেলে ৮ম শ্রেণিতে এবং মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে।

২০১৬ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পর্যায়ক্রমে চাঁদপুর জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়েও শ্রেষ্ঠ জয়িতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন হাফছা।

কেমন আছে হাফছা খোঁজ নিতে বৃহস্পতিবার ১৩ অক্টোবর তার বর্তমান কর্মস্থল চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করছেন হাফছা। ক্লাস শেষে শিক্ষক রুমে বসে হাফছা জানান, এক সময় নিজে স্কুলের গ-ি পেরুতে পারবো কিনা সন্দিহান ছিলাম। পাশে বসা চাঁদপুর ডিপিওডির মমতাজ উদ্দিন মিলনকে দেখিয়ে বলেন, মিলন ভাই আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। ফলে আমাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছি। জয়িতা নির্বাচিত হওয়ার পর আমার গল্প সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে বলেছি। যাতে ধৈর্য এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীরা। পাশে বসা তার সহকর্মী সহকারী শিক্ষক আয়েশা আক্তার বলেন, হাফছা আমাদের সমাজের জন্য আলোকবর্তিকা, তিনি অনুকরণযোগ্য।

হাফছার জীবনসঙ্গী নাছির উদ্দিন বাগাদি স্কুলের পাশেই একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। নিজের স্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে বলেন, অনেক সুস্থ মানুষের চেয়ে অনেক ভাল ও কর্মঠ সে। আমি নিশ্চিত আমি অনেকের চেয়ে ভাল আছি। হাফছা প্রতিবন্ধকতা যেমন জয় করেছে, তেমনি আমি সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছি ওদেরকে পিছনে ঠেলে নয় সাথে নিয়ে চলতে হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়